লন্ডনে রোহিঙ্গা বিক্ষোভের মুখে শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষুধা ও দারিদ্র্য মোকাবিলায় বৈশ্বিক কর্মপন্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন। গতকাল রবিবার লন্ডনে বিশ্ব পুষ্টি সম্মেলনে ভাষণদানকালে তিনি এই আহ্বান জানান। এদিকে লন্ডনে প্রবাসী রোহিঙ্গাদের বিক্ষোভের মুখে পড়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গতকাল রবিবার ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের সঙ্গে বৈঠকের ঠিক আগ মুহূর্তে তিনি রোহিঙ্গাদের পক্ষে বিক্ষোভের মুখোমুখি হয়েছেন। সূত্র : বাসস ও বিডিনিউজ।
প্রায় দুই শ প্রবাসী রোহিঙ্গা গতকাল বিকেলে সেন্ট্রাল লন্ডনে হোটেল সেন্ট প্যানক্রাস রেনেসাঁর সামনে জড়ো হয়। মিয়ানমারের নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের ঢুকতে না দেওয়ায় এ সময় তারা বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়। পুষ্টিবিষয়ক আন্তর্জাতিক এক সম্মেলনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমানে লন্ডন সফর করছেন। এই সময়কালে তিনি ওই হোটেলেই অবস্থান করছেন। ১০ ডাউনিং স্ট্রিট বা ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে ওই সম্মেলন শুরুর ঘণ্টাখানেক আগে ওই বিক্ষোভ দেখতে হয় শেখ হাসিনাকে।
গত জুন মাসে মিয়ানমারে জাতিগত দাঙ্গা শুরু হলে রাখাইন প্রদেশ থেকে রোহিঙ্গারা দেশ ছেড়ে বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা চালায়। তবে দুই যুগ ধরে পাঁচ লাখের বেশি রোহিঙ্গার ভার বহন করা বাংলাদেশ এবার রোহিঙ্গাদের ঢুকতে দেয়নি। জাতিসংঘসহ পশ্চিমা দেশগুলোর আহ্বান উপেক্ষা করেই তাদের শরণার্থী হিসেবে না নিয়ে খাদ্য ও চিকিৎসাসেবা দিয়ে ফেরত পাঠানো হয়।
বিশ্ব পুষ্টি সম্মেলনে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দারিদ্র্য ও ক্ষুধা কোনো একক দেশের সমস্যা নয়। বরং এর প্রভাব বিশ্বের সর্বত্র। এ জন্য এসব বিষয়ে বৈশ্বিক এবং জাতীয় পরিকল্পনা ও কৌশল বাস্তবায়নে গোটা বিশ্বের সম্পদের ব্যবহার, অভিজ্ঞতা বিনিময়, গবেষণা ও প্রযুক্তি প্রয়োগের ব্যাপারে গোটা বিশ্বকে অঙ্গীকারবদ্ধ হতে হবে। প্রধানমন্ত্রী গতকাল রবিবার লন্ডনে বিশ্ব পুষ্টি সম্মেলনে ভাষণকালে এসব কথা বলেন। তিনি ক্ষুধা ও অপুষ্টির ঘাটতি মোকাবিলায় সমন্বিত আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক উদ্যোগ গ্রহণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমাদের সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এসব উদ্যোগের মধ্যে খাদ্যশস্যের আঞ্চলিক মজুদ, খাদ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ না করা বা কোনো কারণে নিষেধাজ্ঞা থাকলে সে ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারমূলক সুযোগের নিশ্চয়তা অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে।'
শেখ হাসিনা বলেন, বহুবিধ বৈশ্বিক সমস্যা ও সংস্কারে ধীরগতির কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতি ও আর্থিক ব্যবস্থাপনার প্রতি সতর্ক দৃষ্টি দেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া পণ্যের অস্বাভাবিক লেনদেন ও পণ্য বাণিজ্যিকীকরণ কার্যকরভাবে মোকাবিলায় বৈশ্বিক ঐকমত্যের প্রয়োজন রয়েছে। একইভাবে বৈদেশিক ব্যাংকিং, মুদ্রা ও আর্থিক লেনদেনেরও ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। এ ক্ষেত্রে অর্থনীতি বিস্তৃতির বিরূপ প্রভাব বর্তমানে আর্থিক খাতে সরকারের সুরক্ষা এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিধিবিধানের মধ্যে যথাযথ ভারসাম্যের দাবিকে উচ্চকিত করেছে। তিনি বলেন, এ ধরনের নীতি বৈদেশিক মুদ্রা ও রপ্তানির সক্ষমতার ওপর প্রভাব বিস্তার করে, যা অভ্যন্তরীণ নীতি ও পরিকল্পনার কার্যকারিতার ওপর প্রভাব ফেলে। সাধারণভাবে যা মানব উন্নয়ন এবং নির্দিষ্টভাবে ক্ষুধা ও পুষ্টি ঘাটতির সমস্যাকে প্রভাবিত করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, '২০০৮-০৯ সালে খাদ্য ঘাটতির কারণে মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছিল এবং রপ্তানির ওপর খাদ্য রপ্তানিকারক দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞার প্রভাব ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিল। ক্ষুধা ও অপুষ্টি নিরসনে অগ্রগতি অর্জন করতে হলে এসব বিষয়ে আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে। একইভাবে আবহাওয়া পরিবর্তনের প্রভাবেও উন্নয়ন প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।'
উদ্বোধনী অধিবেশনের কো-চেয়ারম্যান ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন এবং ব্রাজিলের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইকেল টিমারও অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।

No comments

Powered by Blogger.