ঢাকার জন্য পরিকল্পনা-ড্যাপ কি তবে ছেঁড়া কাগজ

রাজধানী ঢাকার জন্য প্রণীত ডিটেইল্ড এরিয়া প্লানটি ড্যাপ নামেই সমধিক পরিচিতি পায়। ঠিক এক বছর আগে গত বছরের মে মাসে সরকারকে দেওয়া এ পরিকল্পনা উপসংহার অংশে বলা হয়েছিল :'কোনো ভৌত অবকাঠামোর পরিকল্পনা বছরের পর বছর অবাস্তবায়িত থাকলে তা পরিকল্পনা হিসেবে বিশ্বাসযোগ্যতা হারায়, সেকেলে হয়ে যায় এবং একদিন সবার কাছে তা অপ্রয়োজনীয় কাগজে পরিণত হয়।'


গত বছরের ২১ জুন মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ড্যাপ বাস্তবায়নের নির্দেশ প্রদান করেন। প্রকৃতির সঙ্গে নগর উন্নয়নের সামঞ্জস্য বিধান করে প্রণীত এ পরিকল্পনায় রাজধানীর আবাসিক এলাকা, শিল্প ও বাণিজ্যিক এলাকা, রাস্তাঘাট, কৃষি এলাকা, বন্যাপ্রবাহ এলাকা, উন্মুক্ত স্থান, খেলার মাঠ ও পার্ক, প্রাকৃতিক জলাধার ও ঐতিহাসিক স্থানগুলো সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা হয়। ক্রমশ প্রকট হতে থাকা জলাবদ্ধতা সমস্যার হাত থেকে রক্ষা পেতে রাজধানীর ২১ শতাংশ এলাকাকে চিহ্নিত করা হয়েছে জলাধার হিসেবে। এ ধরনের একটি পরিকল্পনার বাস্তবায়ন সহজ কাজ নয়। এ ক্ষেত্রে একটি বাধা রাজধানীর বিকাশের কারণেই। প্রচুর অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে অপরিকল্পিতভাবে এবং অনেক ক্ষেত্রেই নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ গোটা বিষয়টি অবলোকন করেছে অসহায়ের মতো। আরেকটি বাধার উৎস 'পরিকল্পিত ভূমি উন্নয়ন ও আবাসন' ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত প্রভাবশালী মহল। তারা মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্ত জনগোষ্ঠীর আবাসন সমস্যা সমাধানে আন্তরিক বলে দাবি করে, কিন্তু এজন্য অন্যের জমি নিজেদের দখলে আনতে তাদের মনোভাব বেপরোয়া। পরিবেশের বিষয়টি আদৌ বিবেচনায় নিতে তারা রাজি নয়। ড্যাপ প্রণয়নের পর সঙ্গত কারণেই তারা ক্ষুব্ধ হয় এবং এ সংক্রান্ত একটি সভায় তাদের প্রতিনিধিরা গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে প্রকাশ্যে তীব্র বাদানুবাদে লিপ্ত হয়। তারা এমনকি মন্ত্রীকে হুমকি প্রদান করে বলেও অভিযোগ ওঠে। ক্ষমতাসীন জোটের একাধিক সংসদ সদস্য তাদের সঙ্গে সুর মিলিয়ে ড্যাপের বিরোধিতা করতে থাকলে এ মহল পরিকল্পিত নগর নির্মাণে নিজেদের বিরোধিতা আরও প্রবল করতে পারে। সম্ভবত এ কারণেই সরকার 'ড্যাপ বাস্তবায়নে যা যা করা দরকার সবকিছু করা হবে'_ এ প্রতিশ্রুতি বিস্মৃত হয়ে ধীরগতিতে চলতে চাইছে। রোববার সমকালে 'ঝুলে গেছে ড্যাপের বাস্তবায়ন' শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, 'প্রায় এক বছর আগে ড্যাপের গেজেট প্রকাশ হলেও এখন পর্যন্ত কর্মপরিকল্পনা তৈরি করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। সরকারের উচ্চ পর্যায়ে এমন সিদ্ধান্তহীনতায় আদৌ ড্যাপ বাস্তবায়ন হবে কি-না তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।' এ অবস্থায় ড্যাপ প্রণেতাদের 'ভৌত অবকাঠামো পরিকল্পনা বছরের পর বছর অবাস্তবায়িত থাকলে তা পরিকল্পনা হিসেবে বিশ্বাসযোগ্যতা হারায়'_ এ মন্তব্যই কি সত্য হয়ে উঠবে? নাকি এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সবকিছু করার অঙ্গীকার রক্ষা করতে সরকার বিপুল উদ্যমে ঝাঁপিয়ে পড়বে? সরকার জনগণের স্বার্থ দেখবে, নাকি স্বার্থান্বেষী মহলের চাপের কাছে নতিস্বীকার করে ড্যাপকে ডাস্টবিনে ফেলার মতো কাগজে পরিণত করবে? এ পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য বিস্তর অর্থ ব্যয় করা হয়েছে। স্বাধীনতার পর আরও কয়েকটি শহর ও নগরের ভৌত উন্নয়নের জন্যও পরিকল্পনা প্রণীত হয়েছিল। সরকারের আন্তরিক উদ্যোগ ও দৃঢ়তার অভাবে তা বাস্তবায়িত হয়নি। ড্যাপের একই পরিণতি না হোক, এটাই কাম্য।

No comments

Powered by Blogger.