দশ দিনব্যাপী ইন্দো-বাংলা মাস্টার পেইন্টারস এক্সিবিশন শুরু-সংস্কৃতি সংবাদ

দেশের চিত্রকলাপ্রেমীদের জন্য সুখবর বয়ে এনেছে ব্যাসিলিও আর্ট গ্যালারি। রাজধানীর নিউ ডিওএইচএসের এ গ্যালারিটি আয়োজন করেছে বাংলাদেশ ও ভারতের পথিকৃৎ শিল্পীদের চিত্রকলা প্রদর্শনী। এর ফলে চিত্রকলা অনুরাগীরা একসঙ্গে দুই দেশের বিশিষ্ট শিল্পীদের শিল্পকর্ম দেখার সুযোগ পাচ্ছে।


দুই দেশের শিল্পচর্চা ও আঙ্গিকের উপস্থাপনায় বৈপ্লবিক ভূমিকা রাখা এসব শিল্পীর প্রত্যেকের কাজেই রয়েছে নিজস্বতা ও স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য। বাংলাদেশ ও ভারতের ১২ জন সেরা চিত্রকরের চিত্রকলা দিয়ে সাজানো এ প্রদর্শনীর শিরোনাম ইন্দো-বাংলা মাস্টার পেইন্টার্স এক্সিবিশন।
শনিবার সন্ধ্যায় এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করা হয়। এই চিত্র প্রদর্শনীতে ঠাঁই পেয়েছে ভারতের বিখ্যাত শিল্পী মকবুল ফিদা হোসেন, যামিনী রায়, এফ এন সুজা, পরিতোষ সেন, কৃষেন খান্না ও অঞ্জলি এলা মেননের চিত্রকর্ম। আর বাংলাদেশের খ্যাতিমান শিল্পীদের মধ্যে রয়েছে পটুয়া কামরুল হাসান, আমিনুল ইসলাম, কাজী আবদুল বাসেত, দেবদাস চক্রবর্তী, আবু তাহের ও মনিরুল ইসলামের নির্বাচিত চিত্রকর্ম।
যৌধভাবে এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি এ্যাম্বাসেডর উইলিয়াম হান্না ও বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট ফারুক সোবহান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্থপতি ও কবি রবিউল হুসাইন। এছাড়াও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেশের খ্যাতিমান শিল্পী, শিল্পানুরাগী ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। বিষয় বৈচিত্র্যে ভরপুর প্রদর্শনীর ছবিগুলো। এফএন সুজা মিশ্র মাধ্যমে আঁকা ছবিতে ধরা দিয়েছে প্রেমিকযুগল। যামিনী রায়ের শিরোনামহীন ছবিটি আঁকা হয়েছে গোয়াশ মাধ্যমে। চারপাশে নানা নকশার আল্পনার বিস্তারের মাঝে দীপ্যমান হিন্দু ধর্মের এক দেবীর অবয়ব। মকবুল ফিদার ছবিতে উদ্ভাসিত হয়েছে ধাবমান একঝাঁক ঘোড়া। সাদা রঙের স্পেসের ভেতর লাল ও হলুদ বর্ণের ছুটে চলা অশ্বের ছবিগুলো চিত্রিত হয়েছে সেরিগ্রাফ মাধ্যমে। এ ছবির কম্পোজিশনে পাওয়া যায় শিল্পীর পারঙ্গমতার পরিচয়। এ্যাক্রিলিকে চিত্রিত পরিতোষ সেনের শিরোনামহীন চিত্রকর্মে উপস্থাপিত হয়েছে মানুষ ও প্রাণীর মুখাবয়বের মিশ্রণে ভিন্নধর্মী এক মুখশ্রী। প্রকৃতির মাঝে পড়ে থাকা নিঃসঙ্গ একটি চেয়ারের ছবি এঁকেছেন অঞ্জলি এলা মেনন। চিত্র সৃজনে ব্যবহার করেছেন এচিং মাধ্যম। পটুয়া কামরুল হাসানের জলরঙে আঁকা টয়লেট শিরোনামের ছবিটি যেন শিল্পরসিকের নয়নে ছড়ায় প্রশান্তির ছোঁয়া। লাল-সবুজ ও সাদা রঙের খেলায় ক্যানভাসে দৃশ্যমান লাবণ্যময়ী এক নারী। আমিনুল ইসলামের কালি ও কলমে রেখার টানে আঁকা চিত্রকর্মে উদ্ভাসিত মানব-মানবীর আন্তঃসম্পর্ক। সেরিগ্রাফে চিত্রিত কাজী আবদুল বাসেতের চিত্রকর্মে উপস্থাপিত হয়েছে দুই জেলে নারী। দেবদাস চক্রবর্তীর ছবিতে পাওয়া যায় নিরাবরণ নারীর নানা রূপ ও অভিব্যক্তি। স্কেচে সৃজিত এ ছবিতে শিল্পী শিল্পিতভাবে উপস্থাপন করেছেন নারীর নগ্নতাকে। এছাড়াও আবু তাহেরের নারী এবং মনিরুল ইসলামের বৃষ্টি ও কান্নার ভূমি শিরোনামে ছবি দুটিতেও রয়েছে শৈল্পিক নান্দনিকতা। সব মিলিয়ে বিষয় বৈচিত্র্যে ভরপুর এ প্রদর্শনীটি শিল্পরসিককে দেবে অপার আনন্দ।
প্রদর্শনীতে ছবির সংখ্যা ত্রিশটি। দশ দিনের এ প্রদর্শনী চলবে ১৬ জুলাই পর্যন্ত। প্রতিদিন বেলা ১২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকবে।
গান ও কথায় সঙ্গীত পরিবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্্যাপন
পথচলার এক বছর পূর্ণ করল বাংলাদেশ সঙ্গীত পরিবার। এ উপলক্ষে সংগঠনের পক্ষ থেকে বর্ষপূর্তি উদ্্যাপনের আয়োজন করা হয়। গান ও কথামালায় সাজানো হয় এ অনুষ্ঠান। শনিবার বিকেলে জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে হয়ে গেল প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্্যাপনের এ আয়োজন।
দলীয় গানের পরিবেশনা দিয়ে শুরু হয় সাংস্কৃতিক পর্ব। সংগঠনের শিল্পীরা সম্মেলক কণ্ঠে গেয়ে শোনান ‘পলাশ ডাকা কোকিল ডাকা আমার এ দেশ ভাইরে’ গানটি। তোমার বুকের ফুলদানি শিরোনামের নজরুলসঙ্গীত পরিবেশন করেন ইয়াসমিন খান দোলন। এছাড়াও একক কণ্ঠে গান শোনান আয়েশা রাহাত আরা চৌধুরী, এমিলি পারভীন, রেজিয়া সেলিম কাজল, শিশির অধিকারী, মিতা চৌধুরী ও এএসএম জহিরুল হক। তারা গেয়ে শোনান ‘আমার পরান যাহা চায়’, ‘না যেও না আষাঢ় শ্রাবণ’, ‘আষাঢ় মাসে বৃষ্টিরে’, ‘হিন্দু না মুসলমান তুমি’, ‘আমায় পাগল করিয়া গেল’, ‘তুমি কোন বা দেশে’ শিরোনামের গানগুলো। যন্ত্রসঙ্গীতে ছিলেন কমল কুমার মালো, অরূপশীল ও মোঃ খাইরুল।
অনুষ্ঠানে সংক্ষিপ্ত আলোচনাপর্বে প্রধান অতিথি ছিলেন ইউনিক লিভিং লিমিটেডের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রকৌশলী সামসুজ্জোহা চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন গণপূর্ত অধিদফতরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোঃ আব্দুল মজিদ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সঙ্গীত পরিবারের সাধারণ সম্পাদক এএসএম জহিরুল হক চৌধুরী। সভাপতিত্ব করেন আয়োজক সংগঠনের সভাপতি রেজিয়া সেলিম কাজল। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন শুভাশিষ গোস্বামী ও সাইমা সেলিম মীম।
মহাকবি মাইকেল মধুসূদনকে নিবেদিত আলোচনা
শনিবার সকালে মহকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ১৩৯তম মৃত্যুবার্ষিকী, বাংলা সাহিত্যের প্রথম নাটক শর্মিষ্ঠা রচনার ১৫৪ বছর ও মহাকাব্য মেঘনাদবধ রচনার ১৫১ বছরপূর্তি উপলক্ষে এক আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়। সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের ভিআইপি সেমিনার হলে যৌথভাবে এ সভার আয়োজন করে কবি মাইকেল মধুসূদন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ ও জাতীয় উত্তরণী ছাত্র সংসদ। বিশ্ব বাঙালী সম্মেলনের সভাপতি কবি মুহাম্মদ আবদুল খালেকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুল মান্নান।
আলোচনায় বক্তারা বলেন, কবি মাইকেল মধুসূদন ছিলেন বাংলা সাহিত্যের একজন মহাকবি। যিনি বাংলা সাহিত্যে নিজের একক প্রতিভার মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যকে করেছেন সমৃদ্ধ। এই কবির সাহিত্যে বাংলা সাহিত্যের জন্য এক প্রজ্বলিত আলোকবর্তিকা হিসেবে কাজ করছে। বক্তারা আরও বলেন, এই কবির রচিত মহাকাব্য, নাটক ও প্রহসনসহ নানা সাহিত্যকর্ম বাংলা ভাষাকে করেছে মহীয়ান। তাঁর রচিত সাহিত্যে আমাদের সমাজের বিভিন্ন কুপ্রথা দূরীকরণে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। তাই এই কবির সৃষ্টির জন্য তিনি আমাদের মাঝে যুগ যুগ ধরে স্মরণীয় ও বরণীয় হয়ে থাকবেন।’
বর্ষার গান ও কবিতার আসর
গগনবিদারী বিদ্যুত চমক ও বজ্রপাতে প্রকম্পিত যখন ধরণি, তখনই হৃদয়ে জেগে ওঠে বর্ষাসঙ্গীত। হাতছানি আসে ভীষণ প্রকৃতির কাছ থেকে। প্রকৃতির সেই আনন্দে অবগাহন করতে পদাতিক বাংলাদেশ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের নিবিড় মেঘের ছায়া শীর্ষক বর্ষাসঙ্গীতসন্ধ্যার আয়োজন করে শনিবার। সন্ধ্যায় রাজধানীর কাজী নজরুল ইসলাম এ্যাভিনিউয়ের ডেইলি স্টার সেন্টারে বর্ষার গান ও কবিতার এ অনুষ্ঠানে আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে বর্ষার গান শোনান রবীন্দ্রসঙ্গীতশিল্পী নার্গিস চৌধুরী। আর শিল্পিত উচ্চারণে বর্ষার কবিতা আবৃত্তি করেন বাকশিল্পী আহ্্কামউল্লাহ্।
খালিদ মাহমুদ মিঠুর তিন
ছবির প্রদর্শনী
শনিবার সন্ধ্যায় ভারতীয় হাইকমিশনের ইন্দিরা গান্ধী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের ধানম-ি শাখায় নন্দিত নির্মাতা খালিদ মাহমুদ মিঠুর তিনটি ছবির প্রদর্শনী হয়। এতে দেখানো হয় বাংলা নববর্ষ উদ্্যাপনের বর্ণাঢ্যতাকে তুলে ধরা ছবি ফেইথ। এ ছবিতে বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনের নানা আয়োজনের সঙ্গে দেখানো হয় চড়ক পূজা। ধর্মবিশ্বাস সব সময় বিজ্ঞানের পথ অনুসরণ করে চলে নাÑ এমনটাই দেখানো হয়েছে এ ছবিতে। এ প্রদর্শনীতে আরও দেখানো হয় মিঠুর এন্ডলেস জার্নি ও রিদম অব বাংলাদেশ নামের ছবি দুটি। ২৫ শিল্পীর ছাপচিত্র প্রদর্শনীর সমাপ্তি
বেঙ্গল আর্ট লাউঞ্জের আয়োজনে সফিউদ্দীন বেঙ্গল প্রিন্টমেকিং স্টুডিওতে গত ২১ জুন থেকে শুরু হয় ২৫ শিল্পীর ‘১/২৫’ শীর্ষক দলগত ছাপচিত্র প্রদর্শনী। শনিবার ছিল শিল্পগুরু ও ছাপচিত্রের পথিকৃৎ সফিউদ্দীন আহমেদকে নিবেদিত সতেরো দিনব্যাপী এ প্রদর্শনীর শেষ দিন। প্রদর্শনীতে শিল্পগুরু সফিউদ্দীন আহমেদের ছাপচিত্র ছাড়াও শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী, যোগেন চৌধুরী, সমরজিৎ রায় চৌধুরী, রফিকুন নবী, মনিরুল ইসলাম, শুভাপ্রসন্ন, শহীদ কবির, ফরিদা জামান, রণজিৎ দাস, আনিসুজ্জামানসহ ২৫ শিল্পীর আঁকা ছাপচিত্র প্রদর্শিত হয়। মোট ৩৪টি চিত্রকর্ম দিয়ে সাজানো হয় এ প্রদর্শনী।

No comments

Powered by Blogger.