প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকি দেয়ায় গ্রেফতারি পরোয়ানা-ফেসবুকে হুমকিদাতা বুয়েট শিক্ষক আন্দোলন নেতা হাফিজুর রহমান রানা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেসবুকে হত্যার হুমকি দিয়ে ফেঁসে গেছেন বুয়েটের শিক্ষক আন্দোলনের নেতা হাফিজুর রহমান রানা। নানা অপকৌশল নিয়ে শিক্ষক সমিতির নেতারা রক্ষার অপচেষ্টা করলেও নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হিযবুত তাহ্রীরের সঙ্গে সম্পৃক্ত মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এই বিতর্কিত শিক্ষকের অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে।
ডিবির তদন্তে প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকি দেয়ার ঘটনা প্রমাণিত হওয়ার পর দ-বিধির ৫০৬ ও তথ্য ও প্রযুক্তি আইনের ৫৭ (১) ধারায় মামলা দায়ের করলে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। এদিকে বিতর্কিত এই শিক্ষক নেতাকে যাতে ক্যাম্পাস থেকে পুলিশ আটক না করে তার জন্য উপাচার্য অধ্যাপক ড. এসএম নজরুল ইসলামের কাছে ধর্ণা দিচ্ছেন কিছু শিক্ষক। পুরো ঘটনা নিয়ে তোলপাড় চলছে। হাফিজুর রহমান রানাসহ তার মদদদাতা শিক্ষক নেতাদের কঠোর শাস্তির দাবি তুলেছেন সাধারণ শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
ডিবির তদন্তকারী কর্মকর্তা শনিবার জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, ঐ শিক্ষক যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকি দিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন তা তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। ঐ শিক্ষক নানা উপায়ে বিষয়টিকে ভিন্নখাতে প্রবাহের চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু আমাদের সাইবার অপরাধ বিশেষজ্ঞরা তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পেয়েছেন। ঐ কর্মকর্তা জানান, প্রমাণিত হয়েছে, শিক্ষক নেতা হাফিজুর রহমান রানাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বলেছেন, ‘তোর মাথায় গুলি করব। বুয়েটকে রক্ষা কবর’ ইত্যাদি ইত্যাদি। এর প্রশ্নের জবাবে তদন্তের সঙ্গে সম্পৃক্ত ডিবির কর্মকর্তারা জানান, তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে পাঠানো হয়েছে। এদিকে জানা গেছে, ডিবির তদন্তে প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকি দেয়ার ঘটনা প্রমাণিত হওয়ার পর দ-বিধির ৫০৬ ও তথ্য ও প্রযুক্তি আইনের ৫৭ (১) ধারায় মামলা দায়ের করলে বৃহস্পতিবারই তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। মহানগর হাকিম সুনন্দ বাগচি বৃহস্পতিবার আসামি রানাকে গ্রেফতার করতে শাহবাগ ও বরিশালের উজিরপুর থানাকে নির্দেশ দিয়েছেন। পুলিশ জানিয়েছে, আদালতের আদেশে ঢাকার শাহবাগ থানায় ও আসামির গ্রামের বাড়ি বরিশালের উজিরপুর থানায় পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। শনিবার বিকেলে সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা বলেছেন, আদেশের পরদিন ছুটি থাকায় আদেশের কপি পেতে কিছুটা দেরি হচ্ছে। এর আগে গত ২৩ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেসবুকে এই শিক্ষক নেতার দেয়া হত্যার হুমকির ঘটনায় রাজধানীর শাহবাগ থানায় প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা চেয়ে জিডি (নম্বর-১৪০৩) করেছিলেন জননেত্রী পরিষদের সভাপতি এবি সিদ্দিকী। অভিযুক্ত শিক্ষক হাফিজুর রহমান রানার কাছে ঘটনার বিষয়ে দ্রুত ব্যাখ্যা চেয়ে নোটিস দিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকি দিয়ে হাফিজুর রহমান রানা স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন, ‘হায়েনা ওই হায়েনা তুই দেশকে খেয়েছিস, এখন তুই বুয়েটকে খাবি... পারবি না... আমরা বুয়েটের শিক্ষকরা ও সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা হচ্ছি শিকারী। প্রথমে তোর মাথাতে গুলি করব, তারপর তোর পেটে। তারপর তোর মাথা কেটে বুয়েটের গেটের সামনে টাঙিয়ে রাখব। যাতে আর কোন হায়েনার আক্রমণে বুয়েট আক্রান্ত না হয়। এদিকে গত দুদিন ধরে এ লেখা নিয়ে তোলপাড় চলছে বুয়েটে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অভিযোগ এনেছেন, চলমান শিক্ষক আন্দোলনের এ নেতা নানাভাবে দম্ভ করে অনেকের কাছে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কটূক্তিও করেছেন। একটি পত্রিকায় তার কথা প্রকাশ হলে, পত্রিকাটিকে ‘ছোট’ পত্রিকা অভিহিত করে দম্ভোক্তি করেছিলেন তিনি ও শিক্ষক সমিতির শীর্ষ নেতারা। বুয়েট সূত্রে জানা গেছে, গ্রেফতারের ভয়ে ঐ শিক্ষক ও তার মদদদাতারা গত দুদিন ধরেই বিভিন্নজনের কাছে ধর্ণা দিচ্ছেন। শিক্ষক সমিতি ঘটনা থেকে নিজেদের রক্ষা করতে তাকে বাদ দিয়ে নতুন করে আন্দোলন করার কৌশল নিয়েছে। নেতারা এখন বলছেন, ঐ শিক্ষকের দায় আমরা নেব না। এটা তার ব্যক্তিগত বিষয়।’ তবে অবিলম্বে হাফিজুর রহমান রানাসহ তার মদদদাতা শিক্ষক নেতাদের কঠোর শাস্তির দাবি তুলেছেন সাধারণ শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
সম্প্রতি এক বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, সম্প্রতি পল্টন থানা পুলিশ লিফলেট বিলি করার সময় ইলেকট্রিক্যাল এ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের রাশেদুল ইসলাম রানা (২২) ও সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের আহমেদ সাজিদ হাসান শহীদকে (২২) আটক করেছিল। কিন্তু শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মুজিবুর রহমান ও অধ্যাপক ড. মোঃ সাইফুর রহমান ছাত্রদের হিযবুত তাহ্রীর সংগঠনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয় মর্মে সার্টিফিকেট দিয়ে ছাড়িয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করেন। এরই ধারাবাহিকতায় মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রভাষক হাফিজুর রহমান রানা তার ফেসবুক ব্যবহার করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে বিষোদগার করার ন্যায় স্পর্ধা দেখায় মর্মে প্রতীয়মান হয়। ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে, উপাচার্য অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম বলেছেন, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের কয়েকজন শিক্ষক এসে জানালেন যে, হাফিজুর রহমান রানার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট হয়েছে। তাকে ক্যাম্পাস থেকে পুলিশ যাতে আটক না করে সে বিষয়ে যেন আমি উদ্যোগ নিই। আপনি কি বলেছেন? এ প্রশ্নের জবাবে উপাচার্য বলেন, আমি তো এ বিষয়ে এখনও কিছু জানি না। তবে এটা তো আদালতের বিষয়। দেখি কি করা যায়। উল্লেখ্য, এর আগে প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যু কামনা করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষককে উচ্চ আদালত তলব করে। অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থানরত ওই শিক্ষক নির্দেশ না মানায় আদালত অবমাননার জন্য তার ছয় মাসের কারাদ-ও হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.