পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সাফল্যের ১২ বছর

ছায়াঢাকা প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যে ভরপুর। নানা প্রজাতির পাখির কিচিরমিচির। শহরের কোলাহলমুক্ত। সবুজের বুকে রঙ-বেরঙের সুউচ্চ দালান। প্রকৃতির এমন সৌন্দর্যম-িত পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। অনেক চড়াইউতরাই পেড়িয়ে এই সবুজ ক্যাম্পাস পার করেছে দীর্ঘ ১২ বছর।


নিজস্ব ঐতিহ্য ও স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে আজ পদার্পণ করতে যাচ্ছে সাফল্যের ১৩ বছরে। পটুয়াখালী জেলা শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার উত্তরে এবং বরিশাল বিভাগীয় শহর থেকে ২৫ কিমি দক্ষিণে বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কের ৫ কিলোমিটার পূর্বে দুমকি উপজেলা সদরের প্রাণকেন্দ্রে ৮৯.৯৭ একর জমির ওপর অবস্থিত পবিপ্রবি ক্যাম্পাস। পবিপ্রবির ১২তম প্রতিষ্ঠা দিবস তথা একযুগ পূর্তি উৎসবের এই দিনকে স্মরণীয় করতে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনা রঙ-বেরঙের ব্যানার এবং ফেস্টুন দিয়ে সাজানো হয়েছে। যুগপূর্তি উৎসবে আয়োজন করা হয়েছে বিভিন্ন কর্মসূচী। সকাল ৯ টায় ফেস্টুন ও শান্তির প্রতীক পায়রা আকাশে উড়িয়ে বাংলাদেশ সরকারের ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শাহজাহান মিঞা ও উপাচার্য সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেন যুগপূর্তি উৎসব অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। সকাল সাড়ে ৯ টায় ক্যাম্পাস পরিবারের সকল শিক্ষক-কর্মকর্তা এবং শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হবে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। কৃষি অনুষদের ডিন আ.ক.ম. মোস্তফা জামানকে আহ্বায়ক এবং উপরেজিস্ট্রার মুহম্মদ শহিদুল্লাহকে সদস্য-সচিব করে ১০১ সদস্যবিশিষ্ট ১২তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে ‘যুগপূতি উৎসর্ব’ উদযাপন কমিটি গঠন করা হয়।
ক্যাম্পাস পরিচিতি: মূল ক্যাম্পাস ৩৮ একর, কৃষি গবেষণা খামার ৩৯ একর ও বহির্ক্যাম্পাস (বাবুগঞ্জ, বরিশাল) ১২.৯৭ একরসহ মোট ৮৯.৯৭ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত এই দৃষ্টিনন্দন বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবিশাল মনোরম ক্যাম্পাস। ক্যাম্পাসের উত্তর-পশ্চিমাংশে অত্যাধুনিক ছাত্রছাত্রী হল। এর পাশেই রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ এবং মসজিদের পাশেই রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র বা হেলথ কেয়ার সেন্টার। এর উল্টো দিকে রয়েছে গ্রন্থাগার ভবন। একটি প্রশস্ত রাস্তা ক্যাম্পাসের ওপর দিয়ে পূর্বের পীরতলা থেকে পশ্চিমের বরিশাল-পটুয়াখালী-বাউফল মহাসড়কের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করেছে। এ সড়কের দক্ষিণ দিকে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের আবাসিক ভবন। মুল ক্যাম্পাসের পূর্বদিকে পীরতলা বাজার পেরুলেই ৩৭ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত কৃষি গবেষণা খামার ও এম কেরামত আলী ছাত্র হল। এখানে রয়েছে ‘সৃজনী বিদ্যানিকেতন’ নামের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাথমিক-মাধ্যমিক স্তরের বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
বর্তমান অবস্থা: বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃতি পাবার পর এ পর্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। বর্তমানে ৬টি অনুষদে ২২১২ ছাত্রছাত্রী, ১৭৬ শিক্ষক, ৯৪ কর্মকর্তা ও ৩৮৭ কর্মচারী রয়েছে। এখানে উচ্চতর ডিগ্রী হিসেবে স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি ডিগ্রী রয়েছ্রে। কেবল কৃষি অনুষদ নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে দেশ ও জাতির সময়োপযোগী চাহিদা পূরণে বিশ্ববিদ্যালয়ে খোলা হয়েছে ব্যবসায় প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনা (বিবিএ), কম্পিউটার সায়েন্স এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) অনুষদ, এ্যানিমাল সায়েন্স এ্যান্ড ভেটেরিনারি মেডিসিন (এএনএসভিএম) অনুষদ, মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদ, পরিবেশ বিজ্ঞান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অনুষদ ও খাদ্য এবং পুষ্টি বিজ্ঞান অনুষদ। ছাত্রদের জন্য শের-ই-বাংলা (ডি ১, ডি ২) ও এম কেরামত আলী হল এবং ছাত্রীদের জন্য কবি বেগম সুফিয়া কামাল নামে ১ টি হল রয়েছে। বরিশালের বাবুগঞ্জের বহিস্থ ক্যাম্পাসে রয়েছে বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর ছাত্র হল ও বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছাত্রী হল। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে রয়েছে সমৃদ্ধ ডিজিটাল লাইব্রেরী। দু’তলা বিশিষ্ট লাইব্রেরী ভবনে ৪৫ হাজারেরও বেশি বিভিন্ন ধরনের বই, ইন্টারনেট ব্যবস্থা, আন্তর্জাতিক ভলিউম ও সাময়িকী রয়েছে।
শিক্ষার্থীদের কথা: পবিপ্রবির যুগপূর্তিতে ক্যাম্পাস সম্পর্কে কৃষি অনুষদের ৮ম সেমিস্টারের সাইফুল ইসলাম, ৭ম সেমিস্টারের কামরুজ্জামান সোহাগ, ২য় সেমিস্টারের নীলিমা ম-ল ও নাসরিন সুলতানা সুমি, বিবিএ অনুষদের ৭ম সেমিস্টারের আলী মারজান, ২য় সেমিস্টারের কামরুল হাসান বিদ্যুত, ৬ষ্ঠ সেমিস্টারের কানিজ ফাতেমা সুমনা ও সুপ্রিয়া দেবনাথ, সিএসই অনুষদের ২য় সেমিস্টারের শোয়েব আখতার, মৃন্ময়ী রায় কথা ও মৈত্রী দেবনাথ এবং ফিশারিজ বিভাগের ৬ষ্ঠ সেমিস্টারের মোহাম্মদ আলী একই সঙ্গে বলেনÑএই সবুজ ক্যাম্পাসের যুগপূর্তিতে আমাদের স্বপ্ন সুন্দর, স্নিগ্ধ একতার উচ্ছ্বাস, অফুরান তারুণ্যের শান্তির প্রয়াস, সাম্য, প্রীতির অনন্য আলোয় উজ্জীবিত থাকুক আমাদের প্রিয় ডিজিটাল পবিপ্রবি ক্যাম্পাস। বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রাণবন্ত ও মুখরিত করার জন্য যুগোপযোগী অনুষদ ছাড়াও বিভাগভিত্তিক ডিগ্্রী চালু করে ছাত্রছাত্রী বাড়ানোর পদক্ষেপ নেয়া দরকার। আমাদের শিক্ষার্থীদের মানসিক প্রশান্তির জন্য পর্যটন নগরী কুয়াকাটাকে কাজে লাগিয়ে দক্ষিণবঙ্গের মানসম্মত সর্বোচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বর্তমান সরকারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এখনই বৃহৎ পরিকল্পনা হাতে নিতে হবে। তাছাড়া বর্তমান বিশ্বের চাহিদাসম্পন্ন নতুন নতুন বিভাগ খোলার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আবেদন জানাচ্ছি। কেননা মনে রাখতে হবে, বরিশাল বিভাগের কোটি মানুষের সন্তানের উচ্চশিক্ষার জন্য এটি অন্যতম প্রধান বিদ্যাপীঠ। পবিপ্রবি’র আগামী হোক কণ্টকমুক্ত, প্রস্ফুটিত, আজকের এই দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করছি।
উপাচার্যের কথা: বিশ্ববিদ্যালয়ের একযুগ পূর্তিতে উপাচার্য সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেন বলেন, একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দক্ষ ও যোগ্য মানবসম্পদ তৈরি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্য। ছাত্র-শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী, সাংবাদিকবৃন্দ ও এলাকার জনগণের সহযোগিতায় এ বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি আদর্শ ও উন্নতমানের ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রিধারী শিক্ষার্থীরা দেশ-বিদেশের বিভিন্ন সরকারী, আধা সরকারী, স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকরিলাভের ক্ষেত্রে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে চলেছে। বিশ্ববিদ্যালয়টিকে দেশের অন্যতম উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণার কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।
ইমাদুল হক প্রিন্স

No comments

Powered by Blogger.