দুর্ঘটনায় প্রাণ দিল ছোট্ট শিশু

এভাবে আর কত নিরীহ পথচারীকে, স্কুলগামী শিশুকে বাসের চাপায় জীবন দিতে হবে? ড্রাইভারের বেপরোয়া গতির কাছে আবারও হার মেনেছে পাঁচ বছরের শিশু তানজিম আহসান নিবিড়। শনিবার সাভারের রেডিও কলোনি বাসস্ট্যান্ড এলাকায় রাস্তা পার হওয়ার সময় কাণ্ডজ্ঞানহীন বাসচালকের দ্রুতগতির বাসের নিচে চাপা পড়ে সবে স্কুলমুখী ছোট্ট শিশুটি মারা যায়।
দুর্ঘটনায় শিশু তানজিমের মা গুরুতর আহত হয়েছেন। দুর্ঘটনার পর ক্ষুব্ধ জনতা ভাঙচুর শুরু করে। আড়াই ঘণ্টার জন্য ঢাকা-আরিচা সড়ক বন্ধ হয়ে যায় এবং আহত হয় পুলিশসহ ৪০ জন। দফায় দফায় টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি শান্ত করে পুলিশ। কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনা ঘটবে এবং ভাঙচুর করে তার প্রতিবাদ করতে হবে_অবস্থা কি এভাবেই চলতে থাকবে? নিরাপদ সড়ক কি আমাদের স্বপ্নেই থেকে যাবে? মাত্র কয়েক দিন আগে, গত ৪ ফেব্রুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যের গাড়িবহরের একটি মাইক্রোবাসকে উল্টো দিক থেকে আসা লরি ধাক্কা দিলে ১১টি তাজা প্রাণ ঝরে যায়। শোকে থমকে যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ সারা দেশ। এমন মর্মান্তিক ঘটনা প্রতিনিয়ত দেশের কোথাও না কোথাও ঘটছেই। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কী করণীয় তা আজ পর্যন্ত নির্ধারণ করা গেল না? সড়ক দুর্ঘটনার পেছনে রয়েছে বেশ কয়েকটি বড় কারণ। দেশের বেশির ভাগ রাস্তাই যথেষ্ট প্রশস্ত নয়। ট্রাফিক সিগন্যাল মেনে চলার প্রবণতা যেমন কম, তেমন কর্তব্যরত ট্রাফিক সদস্যদের অবহেলাও রয়েছে। তবে দুর্ঘটনার প্রধান কারণ, দেশের সঠিক প্রশিক্ষণহীন গাড়িচালকদের অদক্ষতা ও দায়িত্বজ্ঞানহীনতা। বেশির ভাগ চালকই হেলপার থেকে চালক বনে যায়। রাস্তার পাশে সড়ক চিহ্ন হয় মানে না অথবা চেনেই না। সঠিকভাবে লিখতে-পড়তে জানে না এমন ড্রাইভারের সংখ্যা অনেক। এ ব্যাপারে নিশ্চয়ই কর্তৃপক্ষের করণীয় আছে। দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে চোখের সামনে ফিটনেসবিহীন অসংখ্য গাড়ি রাস্তায় চলছে কিভাবে? প্রতিবছর সারা দেশে ট্রাফিক সপ্তাহ পালন করা হয়ে থাকে। কিন্তু তা শুধু আনুষ্ঠানিকতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে দেখা যায়। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি বা বিআরটিএ যে যথেষ্ট দায়িত্ব পালন করছে না সে ব্যাপারে অনেক অভিযোগ রয়েছে। সরকারের মনে রাখা প্রয়োজন, নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করাও তাদের একটি গুরুদায়িত্ব। এ দায়িত্ব অবহেলার সুযোগ নেই। প্রতিনিয়ত পত্রিকার পাতা খুলে আমরা সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণনাশের সংবাদ আর দেখতে চাই না। এ পর্যন্ত ছাত্র-শিক্ষক-সাংবাদিকসহ অসংখ্য মূল্যবান প্রাণ আমাদের অকালে হারাতে হয়েছে শুধু সড়ক দুর্ঘটনার কারণেই। এসব দুর্ঘটনাসংক্রান্ত মামলাও দুর্বল পুলিশ রিপোর্টের কারণে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই টেকে না এবং প্রকৃত দোষী অচিহ্নিত ও ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যায়। এভাবে আর কত কাল! একদিকে যেমন বিদ্যমান রাস্তাগুলো যথাযথ সংস্কারের প্রয়োজন, অন্যদিকে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদানে শর্তাবলি সঠিকভাবে মেনে চলা জরুরি। পাশাপাশি ট্রাফিক আইন ও নিয়মকানুন সম্পর্কে দেশের মানুষকে সচেতন করে তোলা এবং সেসবের প্রয়োগ যথাযথ ও কঠোর করাও সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। মানুষ সহজাতভাবে ট্রাফিক আইন জেনে জন্মগ্রহণ করে না। জনগণকে সচেতন করে তুলতে ব্যাপক প্রচারণার প্রয়োজন রয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.