জঙ্গী ও সন্ত্রাসমুক্ত সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখুন-সারদা পুলিশ একাডেমীতে প্রধানমন্ত্রী

রাজশাহী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের ঔপনিবেশিক ধ্যান-ধারণার পরিবর্তে সেবাপরায়ণ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, গণতান্ত্রিক সমাজের মূল্যবোধের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য ঔপনিবেশিক ধ্যান-ধারণা থেকে পুলিশকে বেরিয়ে আসতে হবে।


ঔপনিবেশিক আমলের আইন-কানুন, বিধি-বিধান ও কাঠামোর ব্যাপক সংস্কারের মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশকে 'ফোর্স' থেকে 'সার্ভিসে' রূপানত্মর করতে হবে। তিনি নবীন পুলিশ কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালনকালে মানবিক মূল্যবোধকে সম্মান করার কথা বলেন। তিনি জঙ্গী ও সন্ত্রাসমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠায় তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের আহ্বান জানান। বৃহস্পতিবার দুপুরে বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমী সারদায় ২৭তম বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারের শিানবিস সহকারী পুলিশ সুপারদের শিা সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পরিবর্তনশীল বিশ্বে নিরাপত্তা ও অপরাধের নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় পুলিশের আধুনিকায়নের কোন বিকল্প নেই। তাই তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ল্য অর্জনে পুলিশের উন্নয়নে নানামুখী পদপে নেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে 'ক্রাইম প্রিভেনশন সেন্টার' এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) জন্য 'ডিএনএ' ল্যাব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এ ছাড়া বিভাগীয় শহরসমূহে ফরেনসিক ল্যাব প্রতিষ্ঠার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। পর্যায়ক্রমে জেলায় জেলায় এ পদপে বাসত্মবায়ন করা হবে।
শিানবিস সহকারী পুলিশ সুপারদের উদ্দেশে তিনি বলেন, তোমরা যে সার্ভিসে যোগদান করেছে, এখানে তোমাদের দায়িত্ব যেমন ব্যাপক, তেমনি স্পর্শকাতর। শিতি, নিরর, ধনী-গরিব নির্বিশেষে সমাজের সব ধরনের জনগণের সঙ্গে তোমাদের কাজ করতে হবে। দুষ্টের দমন, শিষ্টের লালন- এটাই হবে তোমাদের একমাত্র বিচার্য বিষয়। সে জন্য তোমাদের শৃঙ্খলাবোধ, নিয়মানুবর্তিতা, নিষ্ঠা, সততা এবং আইনের শাসনের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাবোধ থাকতে হবে, তোমাদের জীবনে এগুলো অনুশীলন করতে হবে।
মনে রাখতে হবে দেশের গরিব, কৃষক ও মেহনতী মানুষের শ্রমে ভেজা অর্থ দিয়ে তোমাদের বেতন হয়। তাদের নিরাপত্তা বিধান করা তোমাদের নৈতিক দায়িত্ব। একই সঙ্গে কর্মেেত্র প্রতিদিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার মাধ্যমে তোমাদের বাসত্মব অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী নবীন পুলিশ কর্মকর্তাদের কর্মজীবনের সূচনালগ্নে আইনের শাসন ও মানবাধিকার রা ও মানবিক মূল্যবোধের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, গণতান্ত্রিক সমাজে আইনের শাসন ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা এবং মানবাধিকার রায় গুরম্নত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তাই তোমরা নিজেরা এবং তোমদের অধীনস্থ কেউ যেন মানবাধিকার লঙ্ঘন না করে সেজন্য সতর্ক দৃষ্টি রাখবে। তোমাদের কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিটি পদেেপ নিশ্চিত করতে হবে। দায়িত্ব পালনকালে মানবিক মূল্যবোধকে সর্বাগ্রে সম্মান করবে। জঙ্গী ও সন্ত্রাসমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠায় তোমাদের ওপর অর্পিত গুরম্নদায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবে। আমরা বাংলাদেশকে বিশ্বের শানত্মিপূর্ণ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চাই।
বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমীর অতীত ঐতিহ্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারদায় সমগ্র ব্রিটিশ ভারতের পুলিশ সার্ভিসের কর্মকর্তারা প্রশিণ নিয়েছেন। ২০১২ সালে পুলিশ একাডেমীর শতবর্ষ পূর্তিতে একাডেমিকে একটি বিশ্বমানের পুলিশ প্রশিণ কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। এ ব্যাপারে তিনি তাঁর সরকারের প থেকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমীর প্যারেড গ্রাউন্ডে শিানবিস সহকারী পুলিশ সুপারদের অভিবাদন গ্রহণ ও প্যারেড পরিদর্শন করেন। তিনি প্রশিণার্থী সহকারী পুলিশ সুপারদের মধ্যে বেস্ট রাইডার হিসেবে মতিউর রহমান সিদ্দিকী, বেস্ট একাডেমিক ও বেস্ট প্রবেশনার হিসেবে আ.ফ.ম নিজাম উদ্দিনের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।

No comments

Powered by Blogger.