খালে বাঁধ দিয়ে পুকুর

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলায় আট বছর ধরে সরকারি খাল দখল করে পুকুর নির্মাণ করে মাছের চাষ করে আসছেন আবদুল মান্নান শেখ নামের এক ব্যক্তি। বাঁধ দেওয়ার ফলে পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় সময়মতো বোরোর বীজতলা তৈরি ও পাট পচাতে পারছেন না এলাকাবাসী। ফলে তাঁরা ব্যাপক ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।


আট কিলোমিটার দীর্ঘ বুড়িরখাল নামের ওই খালটি উপজেলার জাঙ্গালি হিদাডাঙ্গা এলাকার বারাসিয়া নদী থেকে শুরু হয়ে দক্ষিণে নাটুরিয়ার মরাখালে গিয়ে মিশেছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, বুরাইচ ইউনিয়নের ফেন্দাহ গ্রামে ওই খালের তিনটি স্থানে বাঁধ দিয়ে পুকুর নির্মাণ করা হয়েছে। আট বছর ধরে ওই পুকুরে মাছের চাষ করে আসছেন ওই গ্রামের আবদুল মান্নান শেখ।
বুরাইল ইউনিয়নের ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (তহশিলদার) মুরাদ হোসেন বলেন, ৪৭ নম্বর কুঠারাকান্দি মৌজায় ১৪৬৭ দাগে (হাল) বুরাই ইউনিয়নের ১ নম্বর খাস খতিয়ানের জায়গায় ওই খালটি অবস্থিত। সেখানে ব্যক্তিমালিকানার কোনো জায়গা নেই। এমনকি খালের পাড়ের জায়গার মালিকও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
ওই গ্রামের মিজানুর রহমান বলেন, খালে বাঁধ দেওয়ায় বর্ষা মৌসুমেও এলাকাবাসী পানি পায় না। পানির অভাবে বোরোর বীজতলা তৈরি ও পাট পচানো সম্ভব হচ্ছে না। ফলে এলাকাবাসী ব্যাপক ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
বুরাইচ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মোহাম্মদ আলী বলেন, আট বছর আগে আবদুল মান্নানের ভাই ফরিদ শেখ এলাকার ইউপি সদস্য থাকাকালীন খালে বাঁধ দিয়ে ওই পুকুর তিনটি কাটা হয়। এলাকাবাসী এ ব্যাপারে বিভিন্ন সময় জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও উপজেলা চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার পাননি। সর্বশেষ ২১ জুন এলাকার ৭২ জন বাসিন্দার স্বাক্ষর-সংবলিত একটি স্মারকলিপি ইউএনও এবং জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পাঠানো হয়।
ওই ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মো. মকিবুল হাসান বলেন, ১৯৯০ সালে কাবিখার টাকা দিয়ে খালটি সংস্কার করা হয়েছিল। এখন খালটি দখল ও ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে এলাকাবাসীকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। নতুন করে খালটি সংস্কার করা জরুরি।
খাল দখল করে মাছ চাষের কথা স্বীকার করে মান্নান শেখ (৫৩) বলেন, ‘এটি একটি মরা খাল। খালটিতে পানি থাকে না। আমি পুকুর তিনটি কাটছি মাছ চাষের জন্য। বর্ষায় যখন পানি আসে তখন পুকুরের কোনো অস্তিত্ব থাকে না। তার পরও এলাকাবাসী কেন যে আমার নামে বারবার মিথ্যা অভিযোগ আনে, তা আমি বুঝে উঠতে পারি না। তাদের অভিযোগের ফলে এলাকায় পুলিশ আসে। পুলিশ ম্যানেজ করতে গিয়ে আমার খরচ বাড়ে।’
ওই ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান আবদুল ওয়াহাব বলেন, পুকুরটি অপসারণে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তা ছাড়া খালটি সংস্কারেরও উদ্যোগ নেওয়া হবে। এ ব্যাপারে আলফাডাঙ্গার ইউএনও মো. আবুল খায়ের বলেন, শিগগিরই পুকুর তিনটি অপসারণ করে খালটি উদ্ধার করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

No comments

Powered by Blogger.