ওয়াসার পানিতে দুর্গন্ধ

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকেই অভিযোগ আসছে, ওয়াসার পানিতে ময়লা ও দুর্গন্ধ। বিশেষ করে পুরান ঢাকায় মানুষ সে পানি পান করা তো দূরে থাক, গোসল বা গৃহস্থালির কাজে ব্যবহার করতেও ভয় পাচ্ছে। তারা হয় পানির জার কেনে কিংবা দূর-দূরান্ত থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করে দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটাচ্ছে।


অবশ্য ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানিয়েছেন, শীতলক্ষ্যার পানি এতটাই দূষিত হয়ে পড়েছে যে সায়দাবাদ শোধনাগারের মাধ্যমে যেসব এলাকায় পানি সরবরাহ করা হচ্ছে, সেই পানিতে গন্ধ থাকছে। তবে এ পানি পান করলে ক্ষতির আশঙ্কা নেই। তবে নাগরিকদের অভিজ্ঞতা ভিন্ন। পানি পান না করলেও হাতমুখ ধুলেও সে পানিবাহিত রোগ-জীবাণুতে পেটের পীড়া, ডায়রিয়া এসব ঘরে ঘরে হচ্ছে। একটি সহযোগী দৈনিকে রবিবার পহেলা ফাল্গুন এই পানি সংকটকে প্রধান খবর করা হয়েছে। কিন্তু খবরে বলা হয়, ঢাকার অন্যান্য এলাকায়, যেখানে গভীর নলকূপ থেকে পানি সরবরাহ করা হয়, সেসব জায়গা থেকেও পানিতে ময়লা ও দুর্গন্ধ থাকার অভিযোগ আসছে। ইতিপূর্বে আইসিডিডিআরবিও বলেছে, ঢাকায় ডায়রিয়া রোগের একটি অন্যতম কারণ ওয়াসার পানি।
ওয়াসারই বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, বিভিন্ন এলাকায় স্থাপিত পানির সরবরাহ লাইন এতটাই পুরনো হয়ে গেছে যে সেগুলোতে অসংখ্য লিক বা ফুটো রয়েছে। সেসব ফুটো দিয়ে ময়লা পানি ওয়াসার সরবরাহ লাইনে ঢুকে যায়। এসব তথ্য বহুবার প্রকাশিত হলেও কোনো প্রতিকারই করা হচ্ছে না। আবার ফুটো দিয়ে বেরিয়ে গিয়ে পানির অপচয়ও হচ্ছে। জানা যায়, রাজধানীতে দৈনিক পানির মোট চাহিদা দুই কোটি ২০ লাখ থেকে ৪০ লাখ লিটার। সে ক্ষেত্রে ওয়াসা সরবরাহ করতে সক্ষম দুই কোটি লিটার। এমনিতেই ২০ থেকে ৪০ লাখ লিটার পানির সংকট থাকছেই। তার পরও যদি অপচয় হয় কিংবা বিদ্যুৎ ঘাটতি বা অন্যান্য কারণে যদি ওয়াসার উৎপাদন ব্যাহত হয়, তখনই শুরু হয় পানির জন্য হাহাকার। এবার সে হাহাকার কোন পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়াবে_তা এখনই বলা কঠিন। তবে তা খুব খারাপ পরিস্থিতিরও জন্ম দিতে পারে। তদুপরি যে পানি সরবরাহের সঙ্গে জনস্বাস্থ্য ওতপ্রোতভাবে জড়িত সেখানে পুরনো বা বাতিল হয়ে যাওয়া সরবরাহ লাইনগুলো জরুরি ভিত্তিতে প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে না কেন? স্যুয়ারেজের পানি ওয়াসার লাইনে ঢুকে যাবে, আর সে পানি মানুষ পান করবে_এটা কি ভাবা যায়! শীতলক্ষ্যা ও ঢাকার চারপাশের নদীগুলোকে দূষণমুক্ত করার জন্য সর্বোচ্চ আদালতের দেওয়া সময়সীমা অনেক আগেই পেরিয়ে গেছে। কয়েক দফা সময় বাড়ানোর পরও শীতলক্ষ্যার পানি এখনো ব্যবহার অযোগ্য থাকে কেন? সেই পানি শোধনের জন্য সাধারণ মাত্রার চেয়ে ৮-৯ গুণ বেশি ক্লোরিন মেশাতে হয়। এটিও দীর্ঘমেয়াদে জনস্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।
পানি ছাড়া যেহেতু মানুষের একদিনও চলে না_তাই আমরা আশা করি, বর্তমান সরকার অতি জরুরি ভিত্তিতে পুরনো লাইন প্রতিস্থাপনের কাজ শুরু করবে। পাশাপাশি দুই তীরের কলকারখানার দূষণ বন্ধ করে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে অন্তত শীতলক্ষ্যার পানিকে ব্যবহার উপযোগী করার দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া হবে। পর্যায়ক্রমে ঢাকার ক্রমবর্ধমান পানির চাহিদা মোকাবিলায় চারপাশের নদী ও জলাশয়গুলো দূষণমুক্ত করার জন্য জরুরি ভিত্তিতে উদ্যোগ নিতে হবে। সরাসরি জনস্বাস্থ্যের সঙ্গে জড়িত এমন একটি বিষয় নিয়ে সামান্যতম অবহেলাও কাম্য নয়।

No comments

Powered by Blogger.