নড়াইলের নদ-নদী-পানি নিয়ে নীতিমালা চাই

নাব্যতা সংকটে নড়াইলে কয়েকশ' কিলোমিটার আন্তঃজেলা নৌপথ বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবর শনিবার সমকালের লোকালয় পাতায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। ভরাটের ফলে বেশ কয়েকটি নদীর অস্তিত্বই বিলীন হওয়ার পথে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নিষ্ক্রিয়তার কারণে নড়াইলে মধুমতি, নবগঙ্গা, চিত্রা, বানকানা,


আঠারবাকি, ঘোড়াখালী, নলিয়া, কাজলা, আফরা ও কালীগঙ্গা নদীতে এক সময় যে জাহাজ, লঞ্চ, গয়না নৌকা, টাবুরে নৌকা চলাচল করত, সেসব এখন বিস্মৃৃতির অতলে হারিয়ে যেতে বসেছে। নদীগুলোর নিয়মিত খনন কাজ না হওয়া, শুকনো মৌসুমে প্রভাবশালীদের বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ, শুকনো অংশে ফসল ফলানো, কোথাও কোথাও দখল করে নিয়ে ঘর-বাড়ি বা স্থায়ী ইমারত নির্মাণের কারণে এসব নদীর এই হাল হয়েছে। এতে নদীপথ সংকুচিত হতে হতে এখন নামমাত্র কয়েকটি এলাকায় নৌ চলাচল সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। এসব নদী শুধু আমাদের পরিবহনের মাধ্যম হিসেবেই কাজ করত না; এগুলো আমাদের পরিবেশের ভারসাম্যও রক্ষা করত। নির্দিষ্ট এলাকার ভূগর্ভস্থ পানির স্তর মানসম্পন্ন রাখার ক্ষেত্রে এগুলোর ভরা পানি কাজে আসত। এখন নদী শুকিয়ে যাওয়ার কারণে অনেক এলাকার ভূগর্ভস্থ পানির স্তর আশঙ্কাজনকভাবে নেমে গেছে। জলজ প্রাণী, উদ্ভিদ তাদের প্রাণ ধারণের উপায় হারিয়ে কতক ক্ষেত্রে অতীত কাহিনীতে পরিণত হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে নড়াইলে যে ক'টি নদী এখনও নাব্যতা সংকট নিয়েও সামান্য কয়েকটি অংশে টিকে রয়েছে, সেগুলোও হারিয়ে যাবে অচিরেই।
পানির ন্যায্য হিস্যা প্রাপ্তি নিয়ে ভারতের সঙ্গে আমাদের দীর্ঘকালের বিরোধ। সুপেয় পানি নিয়ে ভবিষ্যতে বিশ্বের বিভিন্ন অংশে যুদ্ধ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলেও বিশেষজ্ঞদের ধারণা। অথচ সুপেয় পানির আধার নদীগুলো রক্ষায় আমাদের তেমন উদ্যোগ নেই। এ সংক্রান্ত জাতীয় নীতিমালাও নেই। নদী, খাল-বিল শুকিয়ে যাওয়া ও দখলদারিত্ব থেকে রক্ষা বা উদ্ধার করার নিয়মিত সুবিন্যস্ত আয়োজন থাকতে হবে। তাই সর্বাগ্রে পানি সংক্রান্ত জাতীয় নীতিমালা প্রণয়ন করা উচিত। নড়াইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী সমকাল প্রতিনিধির কাছে দেওয়া বক্তব্যে কোনো আশার বাণী শোনাতে পারেননি। নদী খননের বিষয়টি এখনও যাচাই-বাছাই পর্যায় অতিক্রম করতে পারেনি। আমরা এহেন পরিস্থিতির অবসান চাই।
 

No comments

Powered by Blogger.