ঘাটশ্রমিকদের লাগাতার কর্মবিরতি শুরু-কর্ণফুলীতে আটকা পড়েছে ৯০টি ছোট জাহাজ

জুরি বৃদ্ধিসহ নয় দফা দাবিতে গতকাল মঙ্গলবার থেকে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর ১৬টি ঘাটে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি শুরু করেছেন ঘাটশ্রমিকেরা। এতে নদীতে আটকা পড়েছে পণ্যবাহী ৯০টি লাইটার জাহাজ (ছোট আকারের জাহাজ)।


চট্টগ্রাম ঘাট ও গুদামশ্রমিক সংগ্রাম পরিষদের ব্যানারে গতকাল সকাল আটটা থেকে শ্রমিকেরা এই কর্মসূচি শুরু করেন। শ্রমিকদের দাবির মধ্যে রয়েছে: চিকিৎসা ও আবাসনব্যবস্থা নিশ্চিত করা, শ্রম আইন অনুযায়ী নিয়োগপত্র প্রদান, প্রতি দুই বছর অন্তর আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে মজুরি পুনর্নির্ধারণ ইত্যাদি।
কর্মবিরতির কারণে কর্ণফুলী নদীর ১৬টি বেসরকারি ঘাটে নোঙর করা ১৫টি জাহাজ থেকে পণ্য খালাসের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এসব জাহাজ থেকে পণ্য খালাস বন্ধ থাকায় কর্ণফুলী নদীতে খালাসের অপেক্ষায় থাকা আরও ৭৫টি জাহাজ ঘাটে ভিড়তে পারছে না।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম ঘাট ও গুদামশ্রমিক সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক মো. আলমগীর শরীফ প্রথম আলোকে বলেন, প্রতি বস্তা পণ্য বোঝাই, সেলাই, খালাস ও ট্রাকে তুলে দেওয়া পর্যন্ত চার ধাপের কাজে সাড়ে সাত টাকা হারে মজুরি দিচ্ছেন ঠিকাদারেরা। এই টাকা দিয়ে শ্রমিকেরা চলতে পারছেন না। এ কারণে বস্তাপ্রতি সাড়ে ১৪ টাকা মজুরি প্রদানসহ নয় দফা দাবিতে এই কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন দুই হাজার শ্রমিক। তিনি বলেন, দাবি আদায় না হলে লাগাতার কর্মবিরতি চলবে।
জানা গেছে, কর্ণফুলী নদীর সদরঘাট, মাঝিরঘাট ও বাংলাবাজার এলাকায় ১৬টি ঘাটে প্রতিদিন গড়ে সাত থেকে আট হাজার টন পণ্য খালাস হয়। পণ্যবাহী যেসব জাহাজ বন্দর জেটিতে ভিড়ে পণ্য খালাস করতে পারে না, সেগুলো বন্দরের বহির্নোঙরে অবস্থান করে। এসব বড় জাহাজ থেকে ছোট জাহাজে পণ্য বোঝাই করে এসব বেসরকারি ঘাটে এনে পণ্য খালাস করা হয়। আমদানিকারকের পক্ষে ঠিকাদারেরা শ্রমিক নিয়োগ করে পণ্য খালাসের কাজ তদারক করেন।
জানতে চাইলে পণ্য খালাসের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লাবণী এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আবুল হাশেম বলেন, ‘আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে আমদানিকারকদের সঙ্গে আলোচনা করে মজুরি বাড়ানোর আশ্বাস দিয়েছি শ্রমিকদের। কিন্তু তাঁরা এখনো এই আশ্বাসে সায় দেননি।’
কর্মবিরতি অব্যাহত থাকলে বন্দরের বহির্নোঙরে বড় জাহাজ থেকে ছোট জাহাজে পণ্য খালাসের কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন আমদানিকারকেরা। এ প্রসঙ্গে বিএসএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল বশর চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, কর্মবিরতির কারণে তাঁর প্রতিষ্ঠানের গমবাহী পাঁচটি লাইটার জাহাজ আটকা পড়েছে। কর্মসূচি অব্যাহত থাকলে বহির্নোঙরে বড় জাহাজ থেকেও পণ্য খালাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করে তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে বিপুল অঙ্কের ক্ষতিপূরণ গুনতে হবে আমদানিকারকদের।
বন্দরের বহির্নোঙরে বড় জাহাজ থেকে পণ্য খালাসের জন্য আমদানিকারকদের কাছে লাইটার জাহাজ বরাদ্দ দেয় লাইটার জাহাজ পরিচালনাকারী সংস্থা ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল। এই সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক মাহবুব রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, ১৬টি ঘাটে পণ্য খালাসের কাজ বন্ধ থাকলেও বন্দরের বহির্নোঙরে বড় জাহাজ থেকে পণ্য খালাসের জন্য লাইটার জাহাজ বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে আটকে পড়া ৯০টি লাইটার জাহাজে সোয়া লাখ টন পণ্য আছে বলে তিনি জানান।

No comments

Powered by Blogger.