পাঁচ লাখ ভুয়া লাইসেন্স-সড়ক নিরাপত্তাই অগ্রাধিকার পাক

দেশের রাস্তাগুলোতে যে চালকরা গাড়ি চালাচ্ছেন তাদের মধ্যে প্রায় ৫ লাখ ভুয়া লাইসেন্সধারী_ এ তথ্যটি যে কাউকে উৎকণ্ঠিত করার জন্য যথেষ্ট। সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে ওয়াকিবহাল নাগরিকদের মনে সহজাতভাবেই এ প্রশ্ন উঠবে যে, কীভাবে এত ভুয়া লাইসেন্স তৈরি হলো আর কীভাবেই-বা ভুয়া লাইসেন্সধারীরা সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে নির্বিবাদে গাড়ি চালাচ্ছেন।


৫ লাখ একটি বড় সংখ্যা, সংখ্যাটিই বলে দেয় দীর্ঘদিন ধরে একে একে এ সংখ্যা বড় হয়েছে। আর এটি ঘটতে পেরেছে এ বিষয়ে তদারকির দায়িত্বে নিয়োজিত কর্তৃপক্ষগুলোর দায়িত্বে অবহেলা বা দুর্নীতির কারণে। দীর্ঘদিনের অনিয়মের ফল হিসেবে ভুয়া লাইসেন্সধারী চালকদের এই আধিক্য তৈরি হয়েছে। সৃষ্টি হয়েছে আরও অনেক জটিলতা। ৫ লাখ ভুয়া লাইসেন্স মানে ৫ লাখ উপার্জনক্ষম মানুষ। যারা যেনতেন প্রকারে লাইসেন্স সংগ্রহ করে গাড়ি চালাচ্ছেন তারা নিশ্চয়ই গাড়ি চালানোকেই পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছেন। তাদের ওপর নির্ভর করছে ৫ লাখ পরিবারও। একই সঙ্গে দেশের ৫ লাখ গাড়ি সচল রয়েছে তাদের মাধ্যমে। এখন চাইলেও এত বিপুল সংখ্যক চালককে অবৈধ ঘোষণা করে রাস্তা থেকে তাদের সরিয়ে দেওয়ার বাস্তবতা নেই। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ভয়াবহ কিছু সড়ক দুর্ঘটনা থেকে এটি স্পষ্ট হয়েছে যে, অধিকাংশ দুর্ঘটনার পেছনের কারণ অপ্রশিক্ষিত চালকরা। চালকরা শুধু অপ্রশিক্ষিতই নন, অনেক ক্ষেত্রেই তারা বেপরোয়া এবং রাস্তায় গাড়ি চালানোর সময় নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা তারা করেন না। তবে এ কথাও সত্য, সড়ক দুর্ঘটনার দায় শুধু চালকদের নয়, অনেক ক্ষেত্রে অপরিকল্পিত ও অপ্রতুল রাস্তা এবং আইন প্রয়োগের শিথিলতাসহ নানা কারণও দায়ী। তবে সবচেয়ে বড় দায় অপ্রশিক্ষিত চালকদেরই। এমন একটি পরিস্থিতিতে ভুয়া লাইসেন্সধারী ৫ লাখ চালককে ১৫ দিন বা এক মাসের স্বল্পমেয়াদি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বৈধতা দেওয়ার প্রস্তাব এসেছে। প্রশিক্ষণসাপেক্ষে বৈধতা দেওয়ার প্রস্তাবটি ভালো, যদি প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক ও যথাযথ হয়। রাস্তায় গাড়ি চালনার সময় অবশ্য মান্য আইন-কানুন শেখানো কঠিন ও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার নয়। এমনকি যারা ইতিমধ্যে গাড়ি চালাচ্ছেন তাদের সঠিক পদ্ধতিতে গাড়ি চালানো শেখানোও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার নয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো, চালকরা কি নিয়ম মেনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করবেন? সবচেয়ে বড় কথা, রাস্তায় নামার পর প্রশিক্ষণের কথা মনে রাখবেন? দেশের রাস্তাগুলোতে প্রতিদিন ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটে, প্রাণ হারায় অনেক মানুষ। একেকটি পরিবারে শোকের ছায়া নেমে আসে। এ শোক শুধু ওই পরিবার নয়, পরিবারের বাইরের মানুষকেও স্পর্শ করে। সরকারেরও উচিত সড়ক দুর্ঘটনায় মূল্যবান প্রাণের অপচয় রোধ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া। দীর্ঘদিন ধরে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি উঠলেও কঠোর আইন হচ্ছে না। অথচ আইন হলে চালকরা সচেতন হতেন। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর হলে চালকরা বেপরোয়া গাড়ি চালাতে পারতেন না। ভুয়া লাইসেন্সধারীদের সংখ্যাও বাড়তে পারত না। কিন্তু এদিকে বিশেষ দৃষ্টি পড়ছে না। সেটি দুঃখজনক। আর নানা দুঃখজনক কারণেই দুর্ঘটনা কমানো যাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে ভুয়া লাইসেন্স বৈধকরণ গুরুত্বপূর্ণ হলেও অবশ্যকরণীয় ইস্যু নয়। এ ক্ষেত্রে চালকদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণই গুরুত্ব পাওয়া উচিত। উপযুক্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে যদি চালকরা বৈধতা পান তাহলে সেটির বিরোধিতার যৌক্তিকতা নেই। কিন্তু দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষগুলোকে সজাগ হতে হবে, যেন এর মাধ্যমেই ভুয়া লাইসেন্সের প্রচলন শেষ হয়ে যায়। নতুন ভুয়া লাইসেন্সধারীরা আবার রাস্তায় দৌরাত্ম্য সৃষ্টি করতে না পারে। পাশাপাশি, চালকরা যাতে আইন মেনে রাস্তায় গাড়ি চালান সেটি নিশ্চিত করতে হবে। সবাই দুর্ঘটনার জন্য দায়ী নয়, কিন্তু অপরাধীদের শাস্তি পেতে হবে। শাস্তি নিশ্চিত করার উপযুক্ত ব্যবস্থাও থাকতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.