ছুটিতে বেড়ানো-পর্যটন হোক আরামদায়ক

র্যটক বলতে সাধারণভাবে বিদেশিদের কথাই ভাবা হয়। সত্য যে বিদেশি পর্যটকদের আতিথেয়তায় লাভ বেশি। কিন্তু পর্যটনের ধারণা, শুধু বিদেশিদের কেন্দ্র করে গড়ে উঠলে তা একদেশদর্শী বলেই বিবেচিত হবে। পৃথিবীর আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্রগুলো বিদেশিদের আকৃষ্ট করে সত্য, কিন্তু বিদেশিদের চেয়ে স্বদেশীদেরই বেশি আকৃষ্ট করে। প্রতিবেশী ভারতে স্বদেশী পর্যটকদের জন্য সুলভ ব্যবস্থা আছে।


দর্শনীয় স্থান, হোটেল, মোটেল, রেল-বাসেও স্থানীয়রা বিশেষ রেয়াত পান। এমন নীতির ফলে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে পর্যটন খাতে তাদের উপরি আয় বিপুল। ছুটিতে দূরের পর্যটন কেন্দ্রগুলো তাই বিদেশিদের পাশাপাশি স্বদেশী পর্যটকের পদভারে মুখরিত থাকে সেখানে। কিন্তু আমাদের এখানে দৃশ্যটি কিছুটা অন্যরকম। উচ্চবিত্ত পরিবারগুলো ছুটি কাটাতে দেশের বাইরে যেতে পছন্দ করেন। মধ্যবিত্ত একটি অংশের ঠিকানা দেশের পর্যটন কেন্দ্রগুলো। বাকিরা গ্রামে যান, কিংবা থেকে যান শহরেই। গ্রামে গিয়েও, কিংবা শহরে থেকেও বেড়ানোর চিন্তা থেকে রেহাই মেলে না। তাই হাতের কাছের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতেও ভিড় লেগে থাকে। কক্সবাজার হোক কি কাপ্তাই, আমঝুপি হোক কি পাকশী কিংবা ঢাকায় থেকে যাওয়া লোকদের ফ্যান্টাসি কিংডম হোক কি চিড়িয়াখানা সর্বত্রই তিল ঠাঁই আর নাহিরে দশা। অবসর বিনোদন বলে কোনো কিছুর অস্তিত্ব কল্পনা করাও কঠিন। লোকারণ্যে ঘেমে-নেয়ে, রোদে পুড়ে, ক্লান্তিকর এক পরিস্থিতির জন্ম হতে দেখা যায় সর্বত্র। দেশের পর্যটন কেন্দ্রে যারা ছুটি কাটাবার পরিকল্পনা করেন তাদের ছুটি তত স্বস্তিকর হয় না। দর্শনীয় স্থান দর্শকদের পদচারণায় মুখর হলে দেখা কতটা তাৎপর্যপূর্ণ হয়, সেটি বিশেষ ভাবনার অবকাশ তৈরি করে বটে। অথচ ছুটির আগে একটু পরিকল্পনা করলে দেশের পর্যটন কেন্দ্রগুলোও পর্যটকদের জন্য আরামদায়ক হতে পারত। দেশের ভ্রমণ কেন্দ্রগুলোর ধারণক্ষমতা অনুসারে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে পরিকল্পিত পর্যটনের ব্যবস্থা করলে পর্যটন অনেকটাই অর্থবহ হতে পারত। ছুটির আগে বিজ্ঞাপন দিয়ে এমন পর্যটন প্যাকেজের ব্যবস্থা করা যায়। তাতে মানুষের স্রোত শুধু কক্সবাজারের দিকেই ছুটবে না। সুন্দরবন, মংলা থেকে শুরু করে মহানন্দার তীর পর্যন্ত পর্যটকরা ছড়িয়ে যেতে পারেন। আমরা আশা করব, তেমন ব্যবস্থাই হোক। এক কোটির বেশি মানুষের শহর ঢাকা থেকে এক কোটি মানুষই এক সঙ্গে বাড়ি ফিরবেন এমন চিন্তা বাস্তবসম্মত নয়। অনেকেই বাড়ি ফিরবেন সত্য এবং তাদের জন্য সুব্যবস্থা করতে হবে। একই সঙ্গে এও সত্য তাদের অনেকেই ছুটিতে দেশ ঘুরবেন, দেশকে জানবেন। আর লোকসংখ্যার বড় একটি অংশ শহরেও থেকে যাবে। কিন্তু ঢাকার মতো বড় শহরে ছুটি কাটানোর সুব্যবস্থা কোথায়? টিভি দেখা, রাস্তায় রিকশা করে ঘোরা আর ফুটপাতে আড্ডা দেওয়া ছাড়া সত্যিই কি কোনো বিনোদনের ব্যবস্থা আছে? শিশুপার্ক, চিড়িয়াখানা, বোটানিক্যাল গার্ডেন, ফ্যান্টাসি কিংডম তো সামান্য লোক ধারণ করতে পারে। বাকিরা যাবে কোথায়?
 

No comments

Powered by Blogger.