পবিত্র কোরআনের আলো-আল্লাহ তায়ালা প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও সামাজিক বিপর্যয়ের মাধ্যমে জালিমদের শাস্তি দিয়ে থাকেন

৪. ক্বুলিল্লাহু ইউনাজ্জীকুম্ মিনহা ওয়া মিন কুলি্ল কারবিন ছুম্মা আনতুম তুশরিকূন। ৬৫. ক্বুল হুওয়াল ক্বাদিরু আ'লা আঁইয়্যাবআ'ছা আ'লাইকুম আ'যাবাম্ মিন্ ফাওকি্বকুম আও মিন তাহতি আরজুলিকুম আও ইয়ালবিছাকুম শিইয়াআঁ'ও ওয়া ইউযীক্বা বা'দ্বাকুম বা'ছা বা'দ্বিন; উনযুর কাইফা নুসার্রিফুল আয়াতি লাআ'ল্লাহুম ইয়াফক্বাহূন। ৬৬. ওয়া কায্যাবা বিহী ক্বাওমুকা ওয়া হুওয়াল হাক্ব; ক্বুল্ লাছতু আ'লাইকুম বিওয়াকীল।


৬৭. লিকুলি্ল নাবায়িম্ মুছতাক্বার্রুঁও ওয়া ছাওফা তা'লামূন।
[সূরা : আল আনয়াম, আয়াত : ৬৪-৬৭]
অনুবাদ : ৬৪. আপনি এদের বলে দিন, আল্লাহ তায়ালাই তো তোমাদের সে বিপদ থেকে এবং অন্য সব বিপদ থেকে রক্ষা করেন, এর পরও তোমরা তাঁর সঙ্গে শরিক বানাও।
৬৫. আরো বলুন, আল্লাহ তায়ালা তোমাদের জন্য ওপর থেকে অথবা তোমাদের পায়ের নিচ থেকে শাস্তি পাঠাতে সক্ষম অথবা তোমাদের দলে-উপদলে বিভক্ত করে এক দলকে অন্য দলের মাধ্যমে শাস্তি দিতেও সক্ষম। লক্ষ করে দেখুন, কিভাবে আমি আমার আয়াতগুলো খোলাখুলি বর্ণনা করি, যাতে তারা ঠিকমতো বুঝতে পারে।
৬৬. হে মুহাম্মদ! আপনার জাতির লোকরা এ কোরআনকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে। অথচ এটা হলো সত্য। আপনি তাদের বলে দিন, আমি (তোমাদের বংশে জন্মগ্রহণ করা সত্ত্বেও) তোমাদের অভিভাবক নই।
৬৭. প্রতিটি বার্তা সংঘটিত হওয়ার জন্য একটা নির্দিষ্ট সময় আছে এবং অচিরেই তোমরা জানতে পারবে।
ব্যাখ্যা : এই আয়াতগুলোও আগের আয়াতের ধারাবাহিকতায় এসেছে। আল্লাহ তায়ালা এই বিশ্বজগতের সৃষ্টিকর্তা এবং একমাত্র তাঁর ইচ্ছায়ই এই মহাজগৎ পরিচালিত হয়। মানবজাতি এই পৃথিবীতে আল্লাহর সর্বাধিক প্রিয় সৃষ্টি। মানুষের প্রকৃত ভাগ্যবিধাতাও একমাত্র তিনিই। কিন্তু মানুষ বিভ্রান্তিবশত কখনো কখনো সেই মহান পালনকর্তার সঙ্গে অন্যকে শরিক বানিয়ে ফেলে। এটা মানুষের জগতের শান্তি ও শৃঙ্খলার জন্য চরম অন্তরায়। যারা আল্লাহর সঙ্গে শরিক বানায়, তারা সত্য ও ন্যায়ের ওপর প্রতিষ্ঠিত নয়। তারা বিভ্রান্ত ও অনাচারী। আল্লাহ তায়ালা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় যেকোনো অনাচারী গোষ্ঠীকে শাস্তি দিতে পারেন। কখনো কখনো তিনি শাস্তি দেনও। ইতিহাসে এর প্রমাণ আছে। আবার কখনো কখনো তিনি অনাচারী মানবগোষ্ঠীকে তাদের প্রাপ্য শাস্তি থেকে বাঁচিয়েও দেন। আশ্চর্যের বিষয় হলো, যখন তিনি তাদের এই বিপদ থেকে বা যেকোনো ধরনের বিপদ থেকে রক্ষা করেন, তখন তারা এর জন্য কৃতজ্ঞতা স্বীকার না করে তার সঙ্গে শরিকই বানাতে থাকে। ৬৪ নম্বর আয়াতে রাসুলকে উদ্দেশ করে এ কথাটাই বলা হয়েছে। ৬৫ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, আল্লাহ তায়ালা অত্যাচারী জাতি-গোষ্ঠীকে শাস্তি দিতে পারেন আসমানি ও জমিনি বালা-মুসিবতের মাধ্যমে এবং সামাজিক বা রাজনৈতিক বিপর্যয়ের মাধ্যমে। সামাজিক বা রাজনৈতিক বিপর্যয়ের ধরনটা কী তা-ও এখানে বলা হয়েছে। মানুষ নানা দলে-উপদলে বিভক্ত হয়ে পরস্পরের সঙ্গে কলহ-ফ্যাসাদ ও মারদাঙ্গায় লিপ্ত হতে পারে। এটা হলো চির পরিচিত সামাজিক বিপর্যয়ের ধরন। এ ধরনের বিপর্যয় মানবসমাজে নিপতিত হলে আমাদের বুঝতে হবে, এটা সেই সমাজের মানুষের অন্যায়-অবিচার ও অত্যাচার-নিপীড়নেরই ফসল। মানুষ যখন সত্য ও ন্যায় থেকে বিচ্যুত হয় এবং আল্লাহর নাফরমানিতে লিপ্ত হয়, তখন এ ধরনের বিপর্যয় সমাজে নেমে আসে।
সামাজিক বিপর্যয়ের আরেকটা ধরন হলো, কোনো একটা যুদ্ধবাজ জাতি অন্য জাতির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়া। ইতিহাসে এর প্রচুর নিদর্শন আছে। আধুনিককালেও এ ধরনের নিদর্শন একেবারে বিরল নয়। আমরা অনেক সময় বুঝি না, কিন্তু আল্লাহ তায়ালা জানেন, কারা অত্যাচারী এবং কারা সত্য ও ন্যায়ের ওপর প্রতিষ্ঠিত। অত্যাচারীদের দিয়েও আল্লাহ অন্য অত্যাচারীদের দমন করে থাকেন। ৬৬ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা কোরাইশ গোত্রের অবাধ্যতার কথা উল্লেখ করেছেন। এই অবাধ্যতার ফলে আল্লাহ তাঁর রাসুলকে শিখিয়ে দিচ্ছেন যে আপনি তাদের বলুন, আমি তোমাদের অভিভাবক নই, যদিও আমি কোরাইশ বংশেরই সন্তান। ৬৭ নম্বর আয়াতে কোরাইশদের এই আভাস দেওয়া হয়েছে যে অতি সত্বর তোমরা দেখতে পাবে, তোমাদের পরাজয় ঘটেছে এবং মুসলমানদের জয় হয়েছে।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.