অন্য ধরনের ঈদ উদযাপন! by বীরেন অধিকারী

সাংবাদিক ও সাহিত্যিক সৈয়দ আবুল মকসুদের নেতৃত্বে কয়েকশ' লোক ৩১ আগস্ট জড়ো হয়েছিলেন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। আয়োজকদের একজন বলেছেন, 'এটা কোনো রাজনৈতিক অনুষ্ঠান নয়, এটা সরকারের বিরুদ্ধে কোনো অনুষ্ঠান নয়, এটা বিরোধী দলের কোনো অনুষ্ঠান নয়।'


তাদের ৭ দফা দাবি : ৩১ আগস্টের মধ্যে যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে পদচ্যুত করতে হবে; অবৈধ লাইসেন্স প্রাপ্তির প্রক্রিয়া বন্ধ; সড়ক ও পরিবহন সেক্টরের দুর্নীতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ; সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে বিদ্যমান আইনটি কঠোর করা এবং চালকদের জন্য যথাযথ প্রশিক্ষণ।
বলা প্রয়োজন, মানিকগঞ্জের যে স্থ্থানে ১৩ আগস্ট সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে সেখানকার রাস্তার অবস্থা কেউ খারাপ বলেনি। তাহলে এ মৃত্যু সর্বমহলসহ সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত প্রচণ্ড ঝাঁকুনি দিল কেন? এর নিম্নোক্ত কারণ নির্ধারণ করা যায় : ১. তারেক মাসুদ এবং মিশুক মুনীর দেশের ভেতরে ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সুখ্যাত। এই দুই গুণীজনের অস্বাভাবিক মৃত্যুতে আত্মীয়-স্বজন, বল্পুব্দ-বান্ধব, সহকর্মী, ভক্তকুল সবাই চরম ব্যথিত, আবেগজড়িত হয়ে মুষড়ে পড়েন। ২. ওই দুর্ঘটনার কয়েক দিন আগে থেকে চরম নাজুক অবস্থার কারণে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। তাই সড়ক দুর্ঘটনায় তারেক মাসুদ এবং মিশুক মুনীরের মৃত্যুর কারণে তাৎক্ষণিকভাবে সড়কের নাজুক অবস্থাই দায়ী বলে প্রচার মাধ্যমে প্রকাশ পায়। ৩. নৌপরিবহনমন্ত্রী ২৪ হাজার অশিক্ষিত বা সামান্য অক্ষরজ্ঞান সম্পন্নদের পর্যায়ক্রমে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদানের সুপারিশ করেন। এতে বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে এই মর্মে প্রচারিত হয় যে, মানিকগঞ্জের দুর্ঘটনাকবলিত বাসের ড্রাইভারও একইভাবে ড্রাইভিং লাইসেন্সপ্রাপ্ত বিধায় তার অদক্ষতার কারণে দুর্ঘটনা ঘটে। ৪. মানিকগঞ্জের সড়ক দুর্ঘটনার এক মাস আগে মিরসরাইয়ে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় ৪০ জন স্কুলছাত্রের অকালমৃত্যু হয়। পরপর দুটি মর্মন্তুদ দুর্ঘটনা একই সূত্রে গাঁথা বলে প্রচার মাধ্যম প্রচার করে। ৫. ক্যাথরিন মাসুদকে হাসপাতালে দেখতে গিয়ে যোগাযোগমন্ত্রীর তারেক মাসুদ এবং মিশুক মুনীরকে বহনকারী মাইক্রোবাসের ড্রাইভার সম্পর্কে অর্বাচীনসুলভ মন্তব্য। সব মিলিয়ে তারেক মাসুদ এবং মিশুক মুনীরের দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু-পরবর্তী প্রতিদিন শুধু সড়ক ব্যবস্থাই নয়, গোটা যোগাযোগ ব্যবস্থা নিয়েই খবর প্রচার হতে থাকে। এমন ধারণা দেওয়ার চেষ্টা চলে যে, এবার ঈদে মানুষ ঢাকা ছেড়ে গ্রামে যেতে পারবে না। এ ধারণার ওপর ভিত্তি করেই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ঈদ উদযাপনের ঘোষণা দেওয়া হয় ।
শহীদ মিনারে ঈদ উদযাপনকারীরা কতটা সফল হয়েছেন? বলা যায় তেমন সফল হননি। যোগাযোগ ব্যবস্থার দুর্দশা এবং অব্যবস্থাপনার কারণে রাজধানী ছেড়ে মানুষ গ্রামে যেতে না পারলে ঈদের দিন শহীদ মিনারে ঢাকার জনসংখ্যার শতকরা একভাগও জমায়েত হলে গোটা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হতো। কিন্তু বাস্তবে মাত্র কয়েকশ' লোকের সমাগম ঘটে। আয়োজকদের 'এটা কোনো রাজনৈতিক অনুষ্ঠান নয়'_ এ বক্তব্য প্রসঙ্গে বলা যায়, প্রথম দাবিটি অবশ্যই রাজনৈতিক। তাদের অন্য সব দাবি বাস্তবায়নে কতটা সময়, দক্ষ ও অভিজ্ঞ জনবল এবং অর্থ জোগানোর প্রয়োজন রয়েছে সে সম্পর্কে তারা অবশ্যই ধারণা রাখেন। দীর্ঘদিনের সমস্যাগুলোর দায় কেবল বর্তমান সরকারের ঘাড়ে চাপিয়ে তারা কী সফলতা অর্জন করতে চাচ্ছেন? একমাত্র অনুকূল সরকারের আমলেই তারা এ ধরনের আন্দোলনে স্বচ্ছন্দ বোধ করেন বলেই প্রতীয়মান। ২০০১-০৬ পুরো সময়কাল ধরে দেশে হত্যাকাণ্ড, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড কিংবা তথাকথিত ১/১১-এর বিপ্লবের বিরুদ্ধে তাদের এভাবে রাস্তায় নেমে সোচ্চার হতে দেখা যায়নি। সব শেষে বলা প্রয়োজন, তাদের প্রধান দাবিটি মেনে নিয়ে অন্য দাবিগুলো বাস্তবায়নে তাদেরই দায়িত্ব দিলে কীভাবে এবং কতটা সময়ে তারা বাস্তবায়ন করতে পারবেন তা কি জনসমক্ষে প্রকাশ করবেন?
 

No comments

Powered by Blogger.