বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু

রিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম গতকাল মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমের উদ্বোধন ও নবীনবরণ উপলক্ষে নগরের অশ্বিনী কুমার হল চত্বর থেকে সকালে প্রথম ব্যাচের ৪০০ শিক্ষার্থীকে নিয়ে একটি শোভাযাত্রা বের হয়।


বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পাস জিলা স্কুলে গিয়ে এটি শেষ হয়। শোভাযাত্রায় নেতৃত্ব দেন শিক্ষামন্ত্রী। এরপর বেলা পৌনে ১১টায় জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে মন্ত্রী প্রথম ব্যাচের ক্লাস কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।
পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পাসে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, ‘বরিশাল বিশ্ববিবিদ্যালয় কোনো আঞ্চলিক বিশ্ববিদ্যালয় নয়। এটা হবে জাতীয় ও বিশ্বমানের প্রতিষ্ঠান।’ তিনি বলেন, ‘বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা সৌভাগ্যবান। তাঁরা একটি ইতিহাসের অংশ হয়ে গেছে।’
মন্ত্রী জানান, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এরই মধ্যে ৯৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব স্থাপনা নির্মাণে ৫০ একর সম্পত্তি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এরই মধ্যে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি একাডেমিক ভবন, দুটি প্রশাসনিক ভবন ও তিনটি ছাত্রাবাস নির্মাণের।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হারুনর রশীদ খানের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য হারুন অর রশীদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জসিমউদ্দিন হলের প্রাধ্যক্ষ আক্তারুজ্জামান, সাবেক চিফ হুইপ আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ, বরিশাল-১ আসনের সাংসদ তালুকদার মো. ইউনূস, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মো. আকবর হোসেন, জেলা প্রশাসক এস এম আরিফ উর রহমান, বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান বিমল কৃষ্ণ মজুমদার, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মু. মুহাশিন উদ্দিন ও সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যক্ষ মো. হানিফ।
অনুষ্ঠান শেষে মন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস কার্যক্রম ও অস্থায়ী ক্যাম্পাসের ভবনসমূহ ঘুরে দেখেন। বিকেল তিনটায় নগরের জগদীশ সারস্বত বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজের আয়োজনে এক অভিভাবক সমাবেশে যোগ দেন তিনি।
এ সময় মন্ত্রীর কাছে অশ্বিনী কুমার দত্তের বাসভবনে প্রতিষ্ঠিত সরকারি বরিশাল কলেজের নাম পরিবর্তন করে অশ্বিনী কুমার দত্তের নামে করার দাবি জানালে তিনি নাম পরিবর্তনের উদ্যোগ নেবেন বলে আশ্বাস দেন।
উল্লেখ্য, চারটি অনুষদে ছয়টি বিভাগ নিয়ে যাত্রা শুরু করল বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। ভর্তি হওয়া ৪০০ শিক্ষার্থীর মধ্যে ১৫০ জন ছাত্রী।
১৯৬০ সালে সর্বপ্রথম বরিশালে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি ওঠে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৩ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বরিশালে এক জনসভায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। এরপর আর বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম এগোয়নি।
এরপর ১৯৭৮ সালের ২৩ নভেম্বর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বরিশাল সার্কিট হাউসে এক সভায় বরিশালে একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। কিন্তু তারপর তিন দশকের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও সেই ঘোষণা আর বাস্তবায়িত হয়নি। বরিশালবাসীর দাবি তীব্রতর হওয়ায় শেষ পর্যন্ত ২০১১ সালের ২২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

No comments

Powered by Blogger.