‘মাছ না ধুরতে পারলি খাব কী?’ by কল্যাণ ব্যানার্জি

মা এক এনজেওর কাজে গেছে, তার ইকার আয়তি সুংসার চলে না। তাই ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে নদীত মাছ ধরতি যাতি হয়। আমাগের এদিক কোনো কাজ নি। মাছ না ধুরতে পারলি খাব কী?’ কথাগুলো বলতে বলতে হাতেটানা জাল নিয়ে খরাস্রোতা খোলপেটুয়ার নদীর বুকে ঝাঁপ দিয়ে পড়ল ১১ বছরের বয়সী শিশু সাথীমনি।


খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার আইলাবিধ্বস্ত জনপদ গাবুরা ইউনিয়নের ডুমুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী সাথীমনি। তার বাবা বছর ছয়েক আগে সুন্দরবনে কাজ করতে গিয়ে বাঘের আক্রমণে মারা যান। মা আর তিন ভাইবোনের সংসার তাদের। সংসারের খরচ জোগাতে মায়ের সঙ্গে হাতে জাল তুলে নিতে হয়েছে বড় দুই ভাইবোনকে। জোয়ার-ভাটার সঙ্গে তাল মিলিয়ে তার মতো অনেক ছাত্রছাত্রীই লেখাপড়ার পাশাপাশি নদীতে মাছ ধরে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, গাবুরা ইউনিয়নকে ঘিরে রেখেছে কপোতাক্ষ ও খোলপেটুয়া নদী। এসব নদীর তীরের পাউবোর বাঁধের ওপর দিয়ে চকবারা থেকে ডুমুরিয়া হয়ে সোরা গ্রাম পর্যন্ত হেঁটে চলার সময় দেখা যায়, ৮-১২ বছর বয়সের শতাধিক শিশু নদীতে জাল টানছে। হাতেটানা জাল নিয়ে গলাপানিতে ভেসে ভেসে স্রোতের উল্টো দিকে হেঁটে সংগ্রহ করছে বাগদা, পায়রা ও পারশেসহ বিভিন্ন মাছের রেণু।
এ সময় ডুমুরিয়া গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী আয়েশা খাতুন ও আল আমিন; পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র ওয়ালিদ গাজী এবং সোরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী অলিউল্লাহ, স্বপ্না খাতুন ও বিলকিছ পারভীনসহ কজনের সঙ্গে কথা হয়। তারা জানায়, তাদের মতো অনেকেই সকালে ঘুম থেকে উঠে ভাটা শুরু হলে জাল হাতে নদীতে ঝাঁপ দেয়। জোয়ার আসার পর জাল গুটিয়ে বিদ্যালয়ে চলে যায়।
ডুমুরিয়া বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র ওয়ালিদ গাজী বলে, ‘সকাল থ্যাকি জুয়ার না নাগা পর্যন্ত জাল ট্যানে ইস্কুলি যাই, বিকেলে বাড়ি এসে ভাটা লাগলি আরেকবার নদীত লাবি।’
ডুমুরিয়া গ্রামের করিমন বিবি জানান, লেখাপড়ার খরচ জোগাতে না পারায় তাঁর ছেলে শামীমের পড়ালেখা বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন তিনি।
সোরা রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ওমর আলী জানান, গাবুরা এলাকার অনেক শিশু এখন নদীতে জাল টেনে জীবিকানির্বাহ করছে। শিশুরা জোয়ারের সময় বিদ্যালয়ে থাকলেও ভাটার সময় মাছ ধরার জন্য নদীতে যায়। এলাকায় অভাব প্রকট হওয়ায় অনেক ছাত্রছাত্রী বিদ্যালয়ে আসা বন্ধ করে দিয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.