সব হারিয়ে দিশেহারা কাসিম

নাম মুহাম্মদ কাসিম। আফগান এই নাগরিক পেশায় একজন কসাই। পেশাগত কারণে অসংখ্য পশু জবাই করেছেন তিনি। পশুর রক্ত দেখে কোনো সমস্যা হয়নি তাঁর কখনো। কিন্তু গত মাসে বোমা হামলায় স্ত্রীসহ নিকটজনকে হারিয়ে তিনি এখন দিশেহারা। মানসিক সমস্যায় ভুগছেন তিনি।


সরকারি তথ্য অনুযায়ী, গত প্রায় তিন দশক ধরে চলা আফগান যুদ্ধের কারণে দেশটির ৫০ শতাংশ মানুষই এখন মানসিক আঘাতজনিত কারণে স্নায়বিক সমস্যায় ভুগছেন।
গত ৬ ডিসেম্বরের ঘটনা। ওই দিন ছিল পবিত্র আশুরা। কাবুলের মাজারে সমবেত হয় শত শত শিয়া মুসলিম নারী, পুরুষ ও শিশু। হায় হোসেন, হায় হোসেন বলে মাতম করছিল তারা। একপর্যায়ে বিকট শব্দে বোমার বিস্ফোরণ ঘটে। এতে ৭০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়।
নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে কাসিমের স্ত্রী, পুত্রবধূ এবং পাঁচ ও ছয় বছরের দুই নাতি ছিল। প্রিয়জনদের এ অস্বাভাবিক মৃত্যু কাসিমকে (৫৮) এখনো তাড়া করে ফেরে। তাঁর শূন্য ঘরে, যেখানে একসময় দুই নাতি দুষ্টুমিতে মেতে উঠত, সেখানে বসে কাসিম এএফপিকে বলেন, ‘আমি শেষ হয়ে গেছি। আমার সব আশা-ভরসা ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। ওই বীভৎস ঘটনা যখন আমার মনে পড়ে, একদম সহ্য করতে পারি না। ভয়ে আর্তনাদ করি। বেশির ভাগ রাতে ঘুমাতে পারি না। কখনো ঘুমিয়ে পড়লেও স্বপ্ন দেখি সেই নারকীয় দৃশ্য। বোমার আঘাতে ক্ষতবিক্ষত স্ত্রী ও মাসুম নাতিদের রক্তাক্ত মুখ চোখের সামনে ভেসে ওঠে।’
আফগানিস্তানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মানসিক স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক বশির আহমদ সারওয়ারি জানান, কাসিম আঘাতজনিত কারণে মানসিক ভারসাম্যহীনতায় ভুগছেন। আফগানদের প্রতি চারজনের দুজনই স্নায়ুরোগ, মানসিক চাপ ও উদ্বেগজনিত অসুখে আক্রান্ত। লাগাতার যুদ্ধ, রক্তপাত, দারিদ্র্য ও পরিবারিক কলহসহ নানা সমস্যায় পীড়িত এসব আফগান স্নায়বিক সমস্যায় ভুগছে।
চিকিৎসক সারওয়ারি আরও জানান, আফগানিস্তানে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ রয়েছেন ৭০ জন। তিন কোটি মানুষের তুলনায় এ সংখ্যা খুবই অপ্রতুল। সরকারি মানসিক হাসপাতাল আছে মাত্র একটি, তা-ও মাত্র ১০০ শয্যার। এর বাইরে অবশ্য কিছু বেসরকারি হাসপাতাল ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আছে, যারা মানসিক রোগগ্রস্তদের চিকিৎসা দিয়ে থাকে।
কাসিমের মতো অনেকেই মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। কিন্তু তাঁরা চিকিৎসকদের শরণাপন্ন হন না। এর কারণ ব্যাখ্যা করে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ আবদুল কাউয়ি আলিমি বলেন, ‘আমাদের সংস্কৃতিগত কারণেই কিছু আফগান তাঁদের সমস্যা চেপে রাখেন, প্রকাশ করতে চান না। কারণ, এ ধরনের আচরণ করলে অন্যরা তাঁদের উন্মাদ কিংবা অপদার্থ বলে অবজ্ঞা করবেন।’
কাসিম এখন আর কোনো কাজকর্ম করতে পারেন না। তাঁর দুই ছেলে সংসারের হাল ধরেছেন। কাসিম বলেন, ‘স্ত্রী, পুত্রবধূ ও দুই নাতিকে হারানোর পর আমার এ জীবনের কোনো মানে হয় না। আমি চাই আরেকটা আত্মঘাতী বোমার বিস্ফোরণে আমার মৃত্যু হোক।’ এএফপি।

No comments

Powered by Blogger.