জবিতে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপে সংঘর্ষ সিকৃবিতে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ



স্টাফ রিপোর্টার: চাঁদা আদায়কে কেন্দ্র করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এতে আহত হয়েছেন ২০ জন। সংঘর্ষে ব্যবহার করা হয় রামদা, চাপাতি, চাইনিজ কুড়ালসহ দেশীয় বিভিন্ন অস্ত্র। তাণ্ডব চালানো হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে। ভাঙচুর করা হয় ক্যান্টিন ও শ্রেণীকক্ষ। এ ঘটনায় ১৭ কর্মীকে বহিষ্কার করা    পৃষ্ঠা ১৫ কলাম ১
 হয়েছে। জবি রিপোর্টার জানান, উভয় পক্ষ দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে একে অপরে উপর হামলা চালায়। গতকাল দুপুরে দু’গ্রুপের মধ্যে এই সংঘর্ষ হয়। পরে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ক্যাম্পাসে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন। ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকায় ১৭ ছাত্রলীগ কর্মীকে বহিষ্কার ও ২ জনকে শোকজ করা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম আকন্দের পক্ষের কর্মী নয়ন সোমবার রাত আটটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়-সংলগ্ন আরামবাগ হোটেলে সভা চলাকালে মাগুরা জেলা ছাত্রকল্যাণ সমিতির কাছ থেকে চাঁদা দাবি করেন। যুগ্ম আহ্বায়ক খন্দকার আরিফুজ্জামান পক্ষের কর্মীরা তাতে বাধা দেন। এতে নয়নের সঙ্গে তাদের হাতাহাতি হয়। এ ঘটনার জের ধরে গতকাল বেলা ১১টায় খন্দকার আরিফুজ্জামানের কর্মীরা ক্যাম্পাসে শোডাউন করে। দুপুর ১২টার দিকে সাইফুল পক্ষের শতাধিক কর্মী ক্যাম্পাসে মহড়া দেয়া শুরু করে। এতে উভয় পক্ষের কর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। একপর্যায়ে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে আরিফুজ্জামানের কর্মীরা সাইফুল ইসলামের কর্মীদের ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়িত করে। পরে সাইফুল গ্রুপের কর্মীরা নতুন করে শক্তি সঞ্চয় করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাটুয়াটুলি সংলগ্ন গেট দিয়ে প্রবেশ করে দা, চাপাতি, চাইনিজ কুড়াল ও অনান্য দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে আরিফ গ্রুপের কর্মীদের ধাওয়া করলে পুনরায় দু’গ্রুপ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় আরিফ গ্রুপের সৌরভ আলামিন, সিব্বির, সোহাগ, ওলিউর, জাহিদ, হিরম্ব কুমার বাবু, রিশাদ, রেজওয়ান ও তরিকুল এবং সাইফুল গ্রুপের কাওছার, তমাল, জামাল, রুবেল টনি, নিহার রাজিব, শিপলুসহ দু’গ্রুপের অনন্ত ২০ নেতাকর্মী আহত হয়। আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পরে বেলা ২টার দিকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি এইচএম বদিউজ্জামান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম ক্যাম্পাসে গেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এ বিষয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে দোষীদের ব্যাপারে সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটি ছাত্রলীগের শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে আপসহীন। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা যে শাখার নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি কিংবা সংগঠনবিরোধী কোন কার্যক্রমে জড়িত থাকার অভিযোগ পাচ্ছি সে শাখা কমিটি বাতিল করছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, সংঘর্ষের কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয় সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট ছাত্রলীগ কর্তৃক ক্যাম্পাসে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টির নিন্দা জানিয়েছেন।
১৭ কর্মী বহিষ্কার: সংঘর্ষের সঙ্গে জড়িত থাকায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সভাপতি এইচ.এম বদিউজ্জামান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম গতকাল ১৭ কর্মীকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করেন। বহিষ্কৃতরা হলো- সৌরভ, তমাল, আগুন, নান্নু, টনি, নয়ন, ইউনুস, রেদওয়ান, হিরন্ময় বাবু, সিব্বির, দীন ইসলাম, জাহিদ, ফয়সাল, রফিক, আলাউদ্দিন, কাওসার ও সোহাগ। এছাড়া ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে জবি শাখার আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম আকন্দ ও যুগ্ম আহ্বায়ক খন্দকার আরিফুজ্জামানকে কেন বহিষ্কার করা হবে না এ মর্মে শোকজ করা হয়েছে। আগামী ৫ দিনের মধ্যে শোকজের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
সিকৃবিতে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ
সিলেট অফিস জানায়, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (সিকৃবি) বিরাজ করছে টানটান উত্তেজনা। এ অবস্থায় গতকাল বিকালে এক প্রজ্ঞাপনে বিশ্ববিদ্যালয় সিকৃবি কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পাসে সকল রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ও সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। ওদিকে সিলেটের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়েও বিরাজ করছে অস্থিরতা। ১১ই জানুয়ারি হল দখল নিয়ে ছাত্রলীগ ও শিবিরের মধ্যে প্রায় চার ঘণ্টা লড়াই হয়। এ লড়াইয়ে পিছু হটতে বাধ্য হয় ছাত্রশিবির। প্রায় ১৫ বছরের কর্তৃত্ব হাতছাড়া হয় ছাত্রশিবিরের। বর্তমানে শাবির শত শত শিবিরকর্মী ক্যাম্পাসছাড়া। এ অবস্থা ক্লাস চালানো হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিন দফা দাবিতে ছাত্রশিবিরের ডাকা অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের পরও প্রতিদিন চলছে ক্লাস। চলাচল করছে বাসও। বেশ কয়েকটি অনুষদের বিভাগীয় প্রধান নিজ উদ্যোগে ক্লাস নিচ্ছেন। তবে আতঙ্ক কাটাতে ক্যাম্পাসে প্রচুরসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ওদিকে, সোমবার বাস ভাঙচুরের ঘটনায় গতকাল আরও ৭ শিবির কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবিরের সভাপতি মোজাহিদ রুমি জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত তাদের প্রায় ৪০ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ স্বাভাবিক করতে যে কমিটি গঠন করা হয়েছে সে কমিটি আদৌ গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। সুতরাং, তারা ধর্মঘট থেকে সরে দাঁড়াবেন না বলে জানান। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ আহ্বায়ক শামসুজ্জামান চৌধুরী সুমন জানান, শিবির ক্যাম্পাসের বাইরে সন্ত্রাস চালালেও ভেতরের পরিস্থিতি শান্ত। তিনি জানান, ছাত্রলীগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের জানমালের নিরাপত্তা দিতে প্রস্তুত রয়েছে। সোমবার শেষ বারের মতো হামলার ঘটনায় ক্যাম্পাসে আরও পুলিশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের বৈঠকে এ মাসের ২৬ তারিখ পর্যন্ত সব পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এখন পরীক্ষা গ্রহণের প্রস্তুতি চালাচ্ছেন। ওদিকে, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিরাজ করছে চরম অস্তিরতা। শর্ট সেমিস্টার চালু ও ফলাফল পুনর্মূল্যায়নের দাবিতে সিকৃবির ছাত্রলীগের নেতৃত্বে সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন চালাচ্ছে। বুধবার রাতে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে প্রশাসনিক ও একাডেমিক ভবনে ব্যাপক তাণ্ডব চালায়। রাতের আঁধারে তাণ্ডব চালানোর ঘটনায় ৩ ছাত্রকে স্থায়ী বহিষ্কার করেছে সিন্ডিকেট। এছাড়া আরও ২০ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দেয়া হয়েছে। বহিষ্কৃতরা হচ্ছে ফারুক, নিজামউদ্দিন ও শিপলু। শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। জুলুম-নির্যাতনবিরোধী ব্যানারে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে থাকা সাধারণ শিক্ষার্থীরা রোববার থেকে পুনরায় আন্দোলন শুরু করে ক্যাম্পাসে। মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত টানা তিন দিন তারা ক্যাম্পাসে অবস্থান ধর্মঘট ও র‌্যালি করে। ফলাফল পুনর্মূল্যায়নের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা এক হতে না পারলেও শর্ট সেমিস্টার চালুর আন্দোলনে তারা সক্রিয় রয়েছে। এর ফলে আন্দোলনের পরিধি দিন দিন বড় হচ্ছে। আন্দোলনের কারণে সিকৃবিতে গত ৫ দিন ধরে কোন ক্লাস ও পরীক্ষা হচ্ছে না। ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। গতকাল আবারও সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনে নামে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। দুপুর পর্যন্ত তারা নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন চালায়। কিন্তু দুপুরের পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংগঠগুলোর কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা জারি করে প্রশাসন। সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ছাত্র সংগঠনের কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। শুক্রবার অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গতকাল বিকালে এ নির্দেশ জারি করা হয়েছে। এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এ কথা জানানোর পরপরই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যম্পাস ছেড়ে হলে অবস্থান নেয় সাধারণ শিক্ষার্থীরা। আর পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ক্যাম্পাসে প্রচুরসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মকতা গতকাল মানবজমিনকে জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শুক্রবার সিন্ডিকেটের সভায় বেশ কয়েকটি গুরুপূর্ণ সিদ্বান্ত গ্রহণ করেছেন। এ সিদ্ধান্তের মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় গতকাল থেকে ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.