কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়িত হোক কোচিং ব্যবসা ও ভর্তি-বাণিজ্য

শিক্ষার ক্ষেত্রে কোচিং ব্যবসা ও ভর্তির নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বাড়তি অর্থ আদায়ের সমস্যাও হয়তো জনজীবনের আর দশটি সমস্যার মতো গা সওয়া হয়ে যেত, যদি না এ ব্যাপারে উচ্চ আদালতে রিট হতো। আদালতের নির্দেশনা পেয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে বৈঠক করে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করে, যার প্রতিবেদন গত সোমবার জমা দেওয়া হয়েছে। কমিটির বরাতে পত্রিকায় যেসব সুপারিশের কথা এসেছে, তার সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশের অবকাশ নেই।
কোচিং ব্যবসা কিংবা ভর্তির নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বাড়তি অর্থ অদায় বন্ধ হোক—এটি শিক্ষার্থী, অভিভাবক সবারই দাবি। কিন্তু বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধকে কে? শিক্ষামন্ত্রী নিজেও স্বীকার করেছেন, রাতারাতি কোচিং বন্ধ করা যাবে না। পর্যায়ক্রমেই যে বন্ধ হবে, তারই বা নিশ্চয়তা কী? কোচিং ব্যবসা বন্ধ করতে হলে এর কারণগুলো আগে চিহ্নিত করতে হবে। তদন্ত প্রতিবেদনে নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের কোচিং না করা এবং অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনধিক ১০ জন শিক্ষার্থী পড়ানোর কথা বলা হয়েছে। এটি তদারক করার উপায় কী? প্রকৃত প্রস্তাবে আমাদের শিক্ষা পাঠক্রম ও পাঠদান পদ্ধতি এমন পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে, যাতে শিক্ষার্থীরাই কোচিং করতে নিরুৎসাহিত হয়। একই সঙ্গে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা বাড়ানোর বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে হবে।
অন্যদিকে ভর্তির নামে বেশি অর্থ আদায়ের সমস্যা রাজধানীর কয়েকটি নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সীমাবদ্ধ। যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বাড়তি অর্থ আদায় করেছে, তা ফেরত বা বেতনের সঙ্গে সমন্বয়ের কথা বলেছে তদন্ত কমিটি। এটি কার্যকর করা মোটেই কঠিন কাজ নয়। এর মূল দায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হলেও অভিভাবকদের মন-মানসিকতার পরিবর্তন হওয়া প্রয়োজন। যেকোনো মূল্যে নির্দিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সন্তানকে ভর্তি করাতে হবে—এই চিন্তা সুস্থতার লক্ষণ নয়।
উল্লিখিত দুই কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়িত হলে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরাই শুধু আশ্বস্ত হবেন না, শিক্ষার গুণগত মানও বাড়বে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় যে সদিচ্ছা নিয়ে কমিটি গঠন করেছে, সুপারিশ বাস্তবায়নেও সেই সদিচ্ছার প্রতিফলন থাকা চাই।

No comments

Powered by Blogger.