জাল সার্টিফিকেট-জালিয়াতচক্রের মূলোৎপাটন জরুরি

প্রতারণার নানা রকম জাল বিস্তৃত; বিস্তৃত প্রতারকচক্রের শাখা-প্রশাখাও। ১২ সেপ্টেম্বর 'টাকায় কেনা যায় ঢাবি, বুয়েটের সার্টিফিকেট!' শিরোনামে সহযোগী একটি দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে যে তথ্যচিত্র তুলে ধরা হয়েছে, তা শুধু বিস্ময়করই নয়, যুগপৎ প্রশ্নবোধকও। ওই প্রতিবেদনে প্রকাশ, মূলত রাজধানীর নীলক্ষেত বাকুশাহ ও গাউসুল আজম মার্কেটে দীর্ঘদিন ধরে জাল সার্টিফিকেট-বাণিজ্য চলে এলেও এখন তা ক্রমেই মহানগরীর অন্যত্র বিস্তৃতি লাভ করেছে।


জাতিবিনাশী এ অপকর্মের হোতাদের শিকড় যে অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃত, তারও প্রমাণ মিলছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ থেকে শুরু করে বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ড ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদপত্র, নম্বরপত্র, জাতীয় পরিচয়পত্র, ড্রাইভিং লাইসেন্স, ব্যাংক সার্টিফিকেটসহ সবই মিলছে প্রতারকচক্রের কাছে। শুধু তা-ই নয়, মিলছে পুলিশের ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট, বিভিন্ন খেলা ও ইভেন্টের টিকিট, ব্যাংকের চেক, এমনকি এটিএম বুথের কার্ডও। চাই শুধু টাকা।
এই যে অপকর্ম চলছে দীর্ঘদিন ধরে এবং ক্রমেই যা বিস্তৃত হচ্ছে_এ ব্যাপারে কি প্রশাসন অজ্ঞাত? অভিযোগ আছে, দিনের চেয়ে রাতে এ অপকর্ম বেশি চলছে। বিভিন্ন কৌশল আর প্রযুক্তি ব্যবহার করে অসাধুচক্র এ কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। আরো অভিযোগ আছে, এসব অনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে প্রশাসনের অনেকেই জ্ঞাত থাকলেও রহস্যজনক কারণে তারা মৌন এবং জাল সার্টিফিকেট বিক্রেতাচক্রটি থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। এত বড় গুরুতর অপরাধ কী করে দিনের পর দিন চলছে এবং ক্রমেই কিভাবে অপকর্মের ক্ষেত্র বিস্তৃত হচ্ছে_এ প্রশ্নের জবাব দেওয়ার দায় প্রশাসনের। নিকট-অতীতে র‌্যাব নীলক্ষেতের বাকুশাহ মার্কেটের একটি দোকানে অভিযান চালিয়ে সেখান থেকে এমন অনেক সার্টিফিকেটসহ দুজনকে আটক করে। আমরা মনে করি, এমন সাধারণ বা সাদামাটা অভিযান এই গুরুতর অপরাধ নির্মূলে অত্যন্ত টোটকা দাওয়াই। এই টোটকা দাওয়াইয়ে এমন গুরুতর অসুখ সারবে না। এর জন্য প্রয়োজন নিরবচ্ছিন্ন সাঁড়াশি অভিযান এবং এর উৎস খুঁজে বের করা, শাখা-প্রশাখার সন্ধানক্রমে অন্য হোতাদের পাকড়াও করা।
ওই প্রতিবেদনে বিস্তারিত সবই তুলে ধরা হয়েছে। এর পরও যদি এর কঠোর প্রতিকারে কোনো রকম উদাসীনতা, গাফিলতি কিংবা কালক্ষেপণ পরিলক্ষিত হয়, তাহলে এর পরিণাম হয়ে দাঁড়াবে ভয়াবহ এবং বিরূপ মূল্য দিতে হবে জাতিকে। যেসব অসাধু এ ব্যাপারে সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে, তাদের পেছনে আরো বড় শক্তি কাজ করছে বলে সচেতন মহলের ধারণা। এ ব্যাপারে নিউমার্কেট থানার ওসি যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা অত্যন্ত দায়সারা এবং সত্যাসত্য যাচাই ব্যতিরেকেই তিনি এমন মন্তব্য করেছেন। এর ফলে অপচক্র তাদের অপকর্ম চালিয়ে যেতে আরো উৎসাহবোধ করবে এবং এ ব্যাধি আরো গুরুতর রূপ নেবে। জাল সার্টিফিকেট বিক্রেতাদের শনাক্ত করে কঠোর কার্যকর পদক্ষেপ নিতেই হবে। এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে কিছু ছাপাখানাও। খুব সহজেই অনুমেয়, অত্যন্ত পরিকল্পিত উপায়ে অনেক কিছু ম্যানেজ করেই এমন অপকর্ম চলছে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন মহলের জোরদার পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি।

No comments

Powered by Blogger.