আজ বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস-দেশে প্রতিবন্ধীর সংখ্যা এক কোটি ৭০ লাখ by শরীফা বুলবুল

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান মতে, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার এক কোটি ৭০ লাখ প্রতিবন্ধী। এর মধ্যে পুরুষ ও নারীর প্রতিবন্ধিতার অনুপাত ৫২:৪৮। শারীরিক প্রতিবন্ধী ৪০ লাখ, মানসিক ৩৮ লাখ, দৃষ্টিগত ৩৩ লাখ, বাক, শ্রবণ ও নানাবিধ প্রতিবন্ধী ২৫ লাখ। প্রতিবন্ধী নারীদের মধ্যে ৯৫ শতাংশই শারীরিক-মানসিক নির্যাতনের শিকার।
সিএসডি পরিচালিত এসটিমের গবেষণা অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রতিবন্ধী শিশুর ১১ শতাংশ শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে।


স্কুলগামী প্রতিবন্ধী মেয়েশিশুর সংখ্যা ১ শতাংশেরও কম। এ বাস্তবতায় আজ আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস পালিত হচ্ছে দেশে।এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য হলো_'সবাই মিলে গড়ব উত্তম পৃথিবী : সাথে থাকবে প্রতিবন্ধীরাও'। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ দিবসটির মূল অনুষ্ঠান উদ্বোধন করবেন। এ ছাড়া দিনটি পালন উপলক্ষে বিভিন্ন সংগঠন নানা অনুষ্ঠান হাতে নিয়েছে। পালামেন্টারি ককাস অন ডিজঅ্যাবিলিটি এবং জাতীয় প্রতিবন্ধী ফোরাম যৌথভাবে সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং বিকেল ৩টা থেকে রাসেল স্কয়ার থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার আয়োজনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু করবে। ১৯৮২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ দিনটিকে আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
২০০৮ সালে সরকার বিদ্যালয়গুলোতে প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য উপবৃত্তি চালু করে। ২০০৫-২০০৬ অর্থবছরে প্রতিবন্ধীদের জন্য প্রথম বাজেট বরাদ্দ করা হয়। এ বছর বাজেটে দুই লাখ ৮৬ হাজার প্রতিবন্ধীর জন্য মাসিক ৩০০ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তির তুলনায় এ বরাদ্দ খুবই কম বলে অভিযোগ প্রতিবন্ধীদের অধিকারবিষয়ক সংগঠনগুলোর। সমাজের এ বৃহৎ জনগোষ্ঠীর জন্য বাজেটের অন্তত ১০ শতাংশ বরাদ্দের দাবি জানানো হয়েছে।
ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স অব ডিজঅ্যাবল পিপলস অরগানাইজেশনের (ন্যাডপো) সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জাহাঙ্গির আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমরা বারবার বলে যাচ্ছি প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও তাদের সংগঠনকে বিবেচনায় রেখে বাজেট প্রণীত না হলে প্রতিবন্ধীদের সমস্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাবে। তাই প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন লক্ষ্য স্থির করে জাতীয় বাজেটের ১০ শতাংশ অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন খাতে প্রতিবন্ধীদের জন্য উপযুক্ত বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে, জাতীয় ব্রেইল প্রিন্টিং প্রেস ও ইশারা ভাষা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের জন্য বাজেট বরাদ্দ করতে হবে, প্রতিবন্ধীদের উপযুক্ত যানবাহনের জন্য বাজেট বরাদ্দ করতে হবে, দয়া বা মানবিক বিবেচনা থেকে নয়, প্রতিবন্ধীদের অধিকারবিষয়ক জাতিসংঘ সনদ, প্রতিবন্ধীবিষয়ক পলিসি ও ন্যাডপোর প্রতিনিধিদের মতামতের আলোকে বাজেট করতে হবে।
দৃষ্টি প্রতিবন্ধী নাগরিক সংগঠন ভিপসের (বাংলাদেশ ভিজুয়াল ইম্পেয়ার্ড পিপলস অ্যাসোসিয়েশন) সভাপতি দৃষ্টি প্রতিবন্ধী অ্যাডভোকেট মোশারফ হোসেন মজুমদার কালের কণ্ঠকে বলেন, "প্রতিবন্ধীদের জন্য আইন বা বাজেট যাই করা হোক না কেন, তাদের প্রতিনিধিত্ব জরুরি। আমরা শুনেছি, প্রতিবন্ধীদের প্রতিনিধিত্ব ছাড়াই 'প্রতিবন্ধীর অধিকার আইন' নামে নতুন আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সরকার। একতরফাভাবে সরকারের লোক দিয়ে এ আইন করা হলে আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার যে উদ্দেশ্য তা সফল হবে না। আইনে আমাদের মতামতের প্রতিফলন থাকবে না।"

No comments

Powered by Blogger.