নিস্তব্ধ বাংলাদেশ শিবির by সঞ্জয় সাহা পিয়াল

গের রাতের বাসি স্কোর বোর্ডটা হয়তো ভুল করেই সরানো হয়নি। মূল স্টেডিয়াম থেকে ইনডোরে যাতায়াতের পথেই তাই দাঁত খিঁচিয়ে থাকা স্কোর বোর্ডটি বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছিল_ বাংলাদেশ ৯১ অল আউট! একবার সেদিকে তাকিয়েও মাথা নামিয়ে ফেললেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। অভিশপ্ত রাতের সাক্ষী হয়ে মিরপুরের ছয় নম্বর উইকেটটিও খোলা চোখে চেয়ে ছিল গতকাল অনুশীলনে আসা বাংলাদেশিদের দিকে।


গা ঘেঁষে যাওয়ার পথেও সেদিকে চোখ ফেললেন না তামিম। আগের রাতে অমন একটি হরর-শো দেখার পর ঠিকভাবে ঘুমও হয়নি অনেকের। 'ইচ্ছা হলে অনুশীলনে আসতে পার'_ আজ দ্বিতীয় ম্যাচের আগে গতকাল কোচ স্টুয়ার্ট ল-র এমন অপশনে তাই সাকিব, রাজ্জাক আর শফিউল ছাড়া কেউ সাড়া দেননি। ঘুম থেকে উঠেই মাঠে আসার বাসে উঠে পড়েছিলেন মুশফিকরা। মুখ বুঁজে একনিষ্ঠভাবে নেটে অনুশীলন করে গেছেন সবাই। আগের মতো হৈ-হুল্লোড় করে অনুশীলন করার দৃশ্য গতকাল কোনো ক্যামেরাম্যান ধরতে পারেননি। তার বদলে ড্রেসিংরুমের সামনে মুখে হাত দিয়ে বসে থাকা অধিনায়কের বিষণ্ন চেহারা ফ্রেমবন্দি করতে পেরেছেন কেউ কেউ। মুশফিককে ওভাবে দেখে নির্বাচকের বাইরে বেরিয়ে বড় ভাইয়ের মতো কাঁধে হাত রেখেছিলেন আকরাম খান এবং মিনহাজুল আবেদীন নান্নু।
কিন্তু তাতেও মুশফিকের কপালের ভাঁজ খুব একটা কমাতে পারেননি। একে তো ৫০ ওভার কিপিং করা, তার ওপর ড্রেসিংরুমে ফিরতে না ফিরতেই প্যাড পরতে হচ্ছে মুশফিককে। সাকিবকেও পুরো ১০ ওভার বোলিং করে এসেই হেলমেট পরতে হচ্ছে। মুশফিক-সাকিব ছাড়া দলের টপ অর্ডারে এমন দু'জন ক্রিকেটার খেলছেন, যারা প্রতিটি ম্যাচেই পরের ম্যাচে থাকার চিন্তা নিয়ে মাঠে যাচ্ছেন। এক তামিমই ছিলেন আত্মবিশ্বাসের পুরোটা জায়গা জুড়ে, তিনিও প্রথম ওয়ানডেতে ক্যারিয়ারের অন্যতম জঘন্য আউট হলেন। সহ-অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ সুস্থ হয়ে মাঠে ফিরলেও মাঠের জন্য কতটা ফিট, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। এই যদি হয় দলের ব্যাটসম্যানদের অবস্থা, সে দলের অধিনায়কের মুখে এমনিতেই হাত চলে যায়। শুধু মুশফিক কেন, দলের কোচ স্টুয়ার্ট ল-ও ছেলেদের মাঠের পারফরম্যান্সে প্রচণ্ড হতাশ। গতকাল তাকেও যেন কিছুটা ভরসা দিচ্ছিলেন বাংলাদেশ 'এ' দলের কোচ ভিনসেন্ট বার্নেস। সদ্য ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর করে আসা এ কোচ এদিন মিরপুরে এসে তামিমদের অনুশীলনে স্টুয়ার্ট ল-র পাশেই ছিলেন পরামর্শক হয়ে।
কিন্তু কী বলে পরামর্শ দেবেন বার্নস? কী করতে হবে, কী না করতে হবে, কী করলে ভালো? এসবই জানা বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের, শুধু মাঠেই গিয়েই সেটার প্রয়োগ ঘটাতে পারছেন না কেউ। তাই কেন পাকিস্তানের সঙ্গে এমন হচ্ছে? প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে মুখ নিচু করা ছাড়া কিছুই করার ছিল না শাহরিয়ার নাফীসের। 'এ প্রশ্নের উত্তর রান না পেলে খুঁজে পাওয়া যাবে না...।' সত্যিই কেন এমন হচ্ছে, সেটার উত্তর নেই কারও কাছে। এ মুহূর্তে জয়-পরাজয় দূরের কথা, পাকিস্তানিদের বিপক্ষে পুরো ৫০ ওভার টিকে থাকার চ্যালেঞ্জকেই বড় অর্জন মনে করা হচ্ছে। সবার মধ্যেই একটা ব্যাপার বট গাছের শিকড় গেঁথেছে, 'পাকিস্তানের বোলিং ভালো।' দলের মধ্যে শুধু একজনকেই পাওয়া গেছে যিনি বিশ্বাস করছেন পাকিস্তানের চেয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলিং আক্রমণ ভালো ছিল। 'প্রথম ওয়ানডেতে সবচেয়ে বাজে শট খেলে বোধহয় আমিই আউট হয়েছি। তবে আমার কাছে পাকিস্তানের এ বোলিং অ্যাটাকের চেয়েও শক্তিশালী মনে হয়েছিল ক্যারিবীয়দের। ওদের পেসাররা সুইং করাতে পারত...'_ ড্রেসিংরুম থেকে বিষণ্ন নাসির হোসেনের এ কথার মধ্যেই কেবল ভয়ডরহীন আত্মবিশ্বাস ছিল। যিনি কি-না মুখের ললিপপের মতোই হাতের ব্যাট দিয়ে যতক্ষণ ক্রিজে থাকেন ততক্ষণ রানের চাকা সচল রাখতে পারেন। আজ দ্বিতীয় ওয়ানডেতে নাসিরের মতো এ সাহসটাই বেশি প্রয়োজন বাংলাদেশ দলের।

No comments

Powered by Blogger.