প্র্যাকটিস ম্যাচের ঘাটতিকে দুষছেন কোচ-সনৎ বাবলা,

ম্যাচ শেষে ইলিয়েভস্কি আহাজারি করলেন ভালো মানের দলের বিপক্ষে প্র্যাকটিস ম্যাচের অভাবের জন্য। তাঁর নিজের মতো করেই দেওয়া অপূর্ণতার দোহাইকে আমলে নিলে বাংলাদেশ অবশ্যই জিতবে দ্বিতীয় ম্যাচে! পাকিস্তানের বিপক্ষে কালকের ম্যাচটিকে প্র্যাকটিস ম্যাচ ধরলে তো সামনের ম্যাচগুলোতে আর সমস্যা হওয়ার কথা নয়!দেশে দলটিই ছিল প্র্যাকটিস ম্যাচের ওপর। কখনো শেখ জামাল, কখনো আফ্রিকান একাদশ, এ ছাড়া বয়সভিত্তিক
দলগুলো তো প্রতিপক্ষের তালিকায় আছেই। তারপর টুর্নামেন্ট শুরুর আগে আগে মালয়েশিয়ায় গিয়ে খেলেছে আরেকটি ম্যাচ। এর পরও নিকোলা ইলিয়েভস্কির পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ হয়নি! সেরা একাদশ তৈরি করতে পারেননি! উল্টো পাকিস্তানের বিপক্ষে ড্র করে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ শুরুর পর এই মেসিডোনিয়ান কোচ অজুহাত দিলেন বিদেশে প্র্যাকটিস ম্যাচ না খেলার, 'আমরা এ টুর্নামেন্ট খেলতে এসেছি ভালো মানের প্র্যাকটিস ম্যাচ না খেলেই। এটা আমাদের একটা বড় দুর্বলতা।' অথচ দেশে বলেছিলেন আফ্রিকান একাদশ ভালো প্রতিপক্ষ। আসলে তাই, তাদের বিপক্ষেও প্রথম দুটো ম্যাচ জিততে পারেনি, পরে দুর্বল বিদেশিদের দিয়ে দল গড়ে এই দলকে জেতানো হয়েছিল আত্মবিশ্বাসবর্ধক বটিকা হিসেবে।
বাংলাদেশের কোচ অবশ্য এ ম্যাচ নিয়ে খুব টেনশনে ছিলেন। সেটাই যেন খেলোয়াড়দের মধ্যে সংক্রামিত হয়েছে মাঠে, পুরো ম্যাচে তাঁরা খেলেছেন ছন্দহীন ফুটবল। এজ ন্য ইলিয়েভস্কি মনোসংযোগের অভাবকেই দায়ী করেছেন, 'খেলোয়াড়রা প্রথম ম্যাচে হয়তো ঠিকমতো মনোসংযোগ করতে পারেনি। তাতে খেলাটা এলোমেলো হয়ে গেছে, আমি তেমন খুশি হতে পারিনি।' ম্যাচ শেষে সন্তুষ্টি আর অসন্তুষ্টির মাঝামাঝি অবস্থান নিয়েছেন এ কোচ। তবে প্রথম ম্যাচ এবং প্রতিপক্ষ পাকিস্তান বলে অনেকটা ছাড় দিয়ে ইলিয়েভস্কি বলছেন, 'ম্যাচটা আমাদের জন্য খুব কঠিন ছিল। বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে হারার কারণে তারা ম্যাচটাকে প্রতিশোধের ম্যাচ হিসেবেই নিয়েছিল। তারা অনেক বেশি উজ্জীবিত ছিল মাঠে। তা ছাড়া সার্বিয়ান কোচ আসায় ট্যাকটিক্যাল দিকটিও পাকিস্তানের ভালো ছিল।' বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে ঢাকায় পাকিস্তানকে ৩-০ গোলে হারানোর পর লাহোরে গিয়ে ড্র করেছিল বাংলাদেশ। তাই এ ম্যাচে বাংলাদেশ ফেভারিট থাকলেও প্রতিশোধস্পৃহায় দুর্বার হয়ে উঠেছিল পাকিস্তান। সেটা তাদের খেলায়ও স্পষ্ট, শতভাগ উজাড় করে দিয়ে পাকিস্তানিরা লড়েছে, গোল খুঁজেছে হন্যে হয়ে। গোল না পেলেও জাভিসা মিলোসাভলেভিচ খুশি, 'আমাদের দল ভালো খেলেছে কিন্তু ফিনিশারের অভাবে ম্যাচটা জেতা হলো না। তবে বলা যায় নৈতিক জয় হয়েছে পাকিস্তানেরই।' ফিনিশারের সংকট পাকিস্তানে বেশ কিছুদিন ধরেই। সেটা অব্যাহত আছে বলেই তারা কাজে লাগাতে পারেনি কালকের ম্যাচের সহজ সুযোগগুলো।
পাকিস্তানি কোচ অবশ্য বাংলাদেশ দলের প্রশংসা করেছেন মাঝমাঠ পর্যন্ত, 'মাঝমাঠে বাংলাদেশ নিয়ন্ত্রণ করেছে, ভালো কিছু মুভও হয়েছে সেখান থেকে। কিন্তু ওই যে ফিনশিংয়ের সমস্যা তাদের পাকিস্তানের মতোই।' গতকাল তো ফিনিশ করার মতো তেমন কোনো সুযোগও তৈরি হয়নি বাংলাদেশি স্ট্রাইকারের সামনে। মাঝমাঠের মুভগুলো ফিরে এসেছিল পাকিস্তানের ডিফেন্সে ধাক্কা খেয়েই। তাই অকার্যকর হয়েই রয়ে গেল এমিলি-মিঠুন জুটি।
তবে সমস্যা প্রকট ধরা পড়েছে বাংলাদেশের ডিফেন্সেও। কোনোরকমের ওয়াল পাস কিংবা ভালো কোনো মুভ ছাড়াই খুলে যাচ্ছে বাংলাদেশের গোলমুখ। অধিনায়ক সুজনকে দেখা যায়নি স্বমূর্তিতে, রেজা-আরিফের পারফরম্যান্সও ভালো বলা যাবে না। অদক্ষ পাকিস্তানি ফরোয়ার্ডরা তাদের ব্যর্থতার সুযোগ কাজে লাগাতে না পারলেও মালদ্বীপ-নেপাল কিন্তু কড়ায়-গণ্ডায় মাসুল বুঝিয়ে দেবে। বাংলাদেশের কোচও তা নিয়ে চিন্তিত, 'ডিফেন্সে আমাদের ফিটনেস সমস্যা আছে। এসব কাটিয়েই সামনের ম্যাচে খেলতে হবে।'
এটা প্রতিজ্ঞা। পাশাপাশি তো কোচের পরীক্ষা-নিরীক্ষা বন্ধ করা দরকার। এখন আর তাঁর সুযোগ নেই। পাকিস্তানের সঙ্গে ম্যাচটাকে প্র্যাকটিস ম্যাচ ধরলে তো নেই-ই। সামনের ম্যাচ থেকে বাংলাদেশ সত্যি সত্যি খেলবে সেমিফাইনালের লক্ষ্যে! ইলিয়েভস্কির চোখেও অটুট আছে সেই স্বপ্ন, 'এখনো ভালো সুযোগ আছে সেমিফাইনালের।'

No comments

Powered by Blogger.