ভূমিকম্পের পূর্বাভাস by এম এ ওহাব

শিলার ভাঙন থেকে নির্গত ওজোন গ্যাসের পরিমাপই ভূমিকম্পের আগাম পূর্বাভাস দেবে।সৃষ্টির শুরু থেকেই পৃথিবীতে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগকে মানুষ যথাসম্ভব মোকাবেলা করেই টিকে আছে। ঋতুভিত্তিক বা মৌসুমি কিছু প্রাকৃতিক বিপর্যয় ছাড়াও পৃথিবীর কোনো না কোনো স্থানে প্রায়ই ঘটে যায় নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ। বিজ্ঞানের ব্যাপক উন্নতির সঙ্গে এসব বিষয়ে যেমন ঘূর্ণিঝড়, সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, শৈত্যপ্রবাহ, তাপদাহ


প্রভৃতির ক্ষেত্রে পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব হলেও ভূমিকম্পের মতো প্রলয়ঙ্করী দুর্যোগের আগাম সতর্কতা দিয়ে মানুষকে বিপদমুক্ত করতে প্রযুক্তি সেভাবে এগোতে পারেনি। দীর্ঘদিন থেকেই বিজ্ঞানীরা ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেওয়ার উপযুক্ত ব্যবস্থা উদ্ভাবনের চেষ্টা চালিয়ে আসছেন।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের একদল গবেষক ভূমিকম্পের আগাম সতর্ক সঙ্কেত দেওয়ার উপযুক্ত ও কার্যকর পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন। এ পদ্ধতিতে মানুষ ভূকম্পনজনিত দুর্ঘটনার বেশকিছুটা আগেই পূর্বাভাস পাবে এবং এটা আগাম সতর্ক সঙ্কেত হিসেবেই কাজ করবে। এ নিয়ে গবেষক দলের প্রধান ইউনিভার্সিটি অব ভার্জিনিয়া স্কুল অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অ্যাপল্গাইড সায়েন্সের অধ্যাপক ব্যারাজোলা সাপ্তাহিক জার্নাল অ্যাপল্গাইড ফিজিক্স লেটারে নতুন গবেষণাকর্ম প্রকাশ করেছেন। এতে বলা হয়েছে, ভূমিকম্পের বেশ আগেই ভূগর্ভস্থ শিলাস্তরের ফাটল বা ভাঙন থেকে ওজোন গ্যাস নির্গত হয় এবং এটাই ভূমিকম্পের পূর্বাভাস, যা বিশ্বস্ততার সঙ্গেই গ্রহণ করা যাবে। পরীক্ষা কাজের জন্য মাটির নিচে অনেক গভীরে ছিদ্র করে যান্ত্রিক সরঞ্জামাদি স্থাপনের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের পাথর ও শিলাস্তরের ফাটল বা ভেঙে যাওয়া অবস্থা থেকে ওজোন নিঃসরণের পরিমাণ মাপার ব্যবস্থা করেছেন। ওজোন হচ্ছে প্রাকৃতিক গ্যাস, যা অক্সিজেনের ঘনীভূত রূপ। সাধারণত বিভিন্ন বৈদ্যুতিক বাতি ও অন্যান্য বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা থেকে এ গ্যাস বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। এ গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে পাথর বা শিলার ভাঙন থেকেও ওজোন গ্যাসের নিঃসরণ ঘটে।
মাটির অনেক নিচে শিলাস্তর দীর্ঘ হয় এবং এতে ফাটলও থাকে। অনেক সময় এটা কয়েক মাইল পর্যন্ত বিস্তৃতও হতে পারে। এমন শিলাস্তরকে টেকটনিক পেল্গট বলা হয়। পাশাপাশি এমন টেকটনিক পেল্গটের মাঝে কিছুটা ফাঁক থাকে এবং পেল্গটগুলো নড়াচড়া করে। আর এ শিলা কিছুটা ভঙ্গুর বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন হয়। কোনো কারণে টেকটনিক প্লেটের স্থানচ্যুতিতে সিসমিক ওয়েভ বা ভূ-আন্দোলিত তরঙ্গ মাটির নিচ দিয়ে চলতে থাকে, যা দুর্বল অথবা শক্তিশালীও হতে পারে। শক্তিশালী সিসমিক ওয়েভ শক্তিশালী ভূমিকম্পের সৃষ্টি করতে পারে। মাটির নিচে এ সিসমিক ওয়েভ সৃষ্টি হলে একটা চাপ সৃষ্টি হয়, এতে শিলাস্তর ফেটে বা ভেঙে ওজোন নিঃসরণ ঘটে। শক্তিশালী সিসমিক ওয়েভের জন্য বেশি চাপ সৃষ্টি হয়ে শিলার ভাঙনও বেশি হবে, আর এতে ওজোন গ্যাসের নিঃসরণও বেড়ে যায়। এভাবে ওজোন গ্যাসের পরিমাপ থেকে ভূমিকম্পের আশঙ্কা কতটুকু বা কেমন শক্তির ভূমিকম্প হতে পারে তা বোঝা যাবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভূমিকম্পের আগাম পূর্বাভাস দেওয়ার ব্যাপারে এটাকেই প্রথম একটা আধুনিক ও কার্যকর পদ্ধতি হিসেবে ধরা যায়। বিভিন্ন স্থানে স্থাপনকৃত এ ধরনের যান্ত্রিক ব্যবস্থা থেকে ডেটাগুলোকে গেল্গাবল পজিশনিং সিস্টেম বা জি পি এসের মাধ্যমে সমন্বিত করে ভূমিকম্পের আগাম পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব এবং এটা বিভিন্ন ভূমিকম্পন সতর্কীকরণ কেন্দ্র এমনকি বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রগুলোতেও পাঠানো যাবে। এ নিয়ে গবেষণা আরও ফলপ্রসূ হলে ভূমিকম্পের মতো প্রলয়কাণ্ড থেকে বহু মানুষের জীবন রক্ষা পাবে।

No comments

Powered by Blogger.