জাপা নেতা দীপুকে গুলি করে হত্যা-লাশ উদ্ধার ধামরাইয়ে

রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট থানা জাতীয় পার্টির নেতা মাহমুদুল হক খান দীপু (৪৫) খুন হয়েছেন। ধামরাই থানার পুলিশ গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ধামরাইয়ের বালিথা চান্দু মিয়ার পরিত্যক্ত ইটখোলার কাছ থেকে দীপুর গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করে।মাহমুদুল হক খান দীপু ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট থানা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা মহানগরের (উত্তর) যুগ্ম সম্পাদক ও দেশবন্ধু বিল্ডার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ছিলেন।


ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব কিংবা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জের ধরে দীপুকে হত্যা করা হয়েছে বলে পুলিশ ও পরিবার প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে।
লাশ উদ্ধারের খবর পেয়ে পরিবারের লোকজন, ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট থানা ও ঢাকা মহানগর (উত্তর) জাতীয় পার্টির নেতারা ধামরাই থানায় আসেন। লাশ দেখে সবাই কান্নায় ভেঙে পড়েন। লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন শেষে ময়নাতদন্তের জন্য লাশটি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট থানায় একটি মামলা করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
লাশ উদ্ধারকারী ধামরাই থানার এসআই মো. উমর ফারুক জানান, সম্ভবত অন্য কোনো স্থানে দীপুকে খুন করা হয়েছে। এরপর গাড়িতে করে লাশ ধামরাইয়ে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে সুতিপাড়া ইউনিয়নের একটি পরিত্যক্ত ইটখোলায় ফেলে দেওয়া হয়।
জানা গেছে, দীপু ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট থানার দক্ষিণ মানিকদী মহল্লার প্রয়াত মিনারুল হক খানের ছেলে। তিনি গত বৃহস্পতিবার বিকেলে খানপল্লী স্কুলের জন্য একটি ব্যানার লেখাতে রাজধানীর ফার্মগেট এলাকার একটি প্রতিষ্ঠানে যান। বাসায় ফিরতে দেরি হচ্ছে দেখে পরিবারের লোকজন দীপুর প্রতিষ্ঠানের কেয়ারটেকার কাম ম্যানেজার আবদুল মালেকের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে। আবদুল মালেক তাদের জানান, রাত ৯টা ৩৯ মিনিটে দীপুর সঙ্গে মোবাইল ফোনে সর্বশেষ তাঁর কথা হয়েছে। এ সময় দীপু তাঁকে জানান, তিনি ব্যানার লেখানোর কাজে ব্যস্ত। এরপর আর দীপুর মোবাইল ফোন খোলা পাওয়া যায়নি।
পরিবারের লোকজন জানায়, বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করে কোনো সন্ধান না পেয়ে দীপুর ভাই মিনসারুল ইসলাম খান টিপু ক্যান্টনমেন্ট থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। পরিবারের ধারণা, ফার্মগেট এলাকায় একা পেয়ে প্রতিপক্ষ কোনো মহল দীপুকে অপহরণ করে গাড়িযোগে ধামরাইয়ে নিয়ে আসে।
জানা যায়, ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট থানার নিখোঁজ বেতার বার্তার সঙ্গে লাশের মিল দেখে ধামরাই থানা থেকে ক্যান্টনমেন্ট থানার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। এ খবর পেয়ে পরিবারের লোকজন ও জাতীয় পার্টির ক্যান্টনমেন্ট থানা শাখার সভাপতি মো. ইব্রাহিম খানসহ নেতা-কর্মীরা ধামরাই থানায় চলে আসেন।
দীপুর বড় ভাই মিনসারুল ইসলাম খান টিপু জানান, দীপু তিন ভাইয়ের মধ্যে খুবই প্রতিবাদী ছিলেন। অন্যায়ের প্রতিবাদ করতেন। ফলে এলাকার অনেকেই তাঁর প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠে। এ ছাড়া ব্যবসায়িক সাফল্যের কারণেও অনেকেই দীপুকে সহ্য করতে পারত না বলে দাবি করেন টিপু।
ঢাকা মহানগর (উত্তর) জাতীয় পার্টির সভাপতি মো. ইব্রাহিম খান বলেন, "গত ২৬ নভেম্বর ঢাকা মহানগর (উত্তর) জাতীয় পার্টির সম্মেলনে সর্বশেষ বক্তব্য দিতে গিয়ে দীপু বলেছিলেন, 'আপনাদের শুধু কষ্টই দিলাম, কোনো আপ্যায়ন করতে পারলাম না। বেঁচে থাকলে আপনাদের অনেক কাপ চা খাওয়াব।' এসব কথা এখন শুধুই স্মৃতি। এমন সংগঠক ও সাহসী সৈনিক আমরা আর পাব না।"

No comments

Powered by Blogger.