প্র তি বে শ-নদের চাঁদের কুমির হওয়া

দেশের মানুষ কথায় কথায় ছড়া কাটে, ধাঁধার সমাধান চায়, লোকগল্প শোনায়। এ কারণেই বিলের ধারের হিজলতলা, সেই দূরের বৌ ঠাকুরানীর হাট, নদীপাড়ের অচিন ঘাট নিয়ে ছড়িয়ে আছে নানা ছড়া, লোকধাঁধা, লোকগল্প। এমনি এক ঘাট খুঁজে পাওয়া যায় ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার গুণবাহা ইউনিয়নে, যে ঘাটটির নাম নদের চাঁদের ঘাট। এ ঘাটটি নিয়েই প্রচলিত হয়েছিল মানুষের কুমির হয়ে যাওয়ার সেই বিখ্যাত 'নদের চাঁদ'


লোকগল্পটি।এক সময় ওই এলাকায় বাস করত এক লোক। নাম নদের চাঁদ। সে জাদু-টোনা জানত। আরও অনেক কিছুই তার জানা ছিল। জাদুবলে সে নিজেকে কুমিরে পরিণত করতে পারত। কুমির থেকে আবার নিজেকে মানবজীবনে ফিরিয়ে নিয়ে আসতেও পারত। একদিন নদের চাঁদের বউ বায়না ধরল, কুমির হওয়া তাকে দেখাতে হবে। নদের চাঁদ বউকে খুব করে বোঝাল, মানুষের কুমির হওয়া অনেক কঠিন ব্যাপার। কারণ, এতে এমন দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে যে, তাতে সে আর কখনোই মানুষ হতে পারবে না। কিন্তু বউ নাছোড়বান্দা। সে স্বামীর কুমির হওয়া দেখবেই। বউয়ের মন রক্ষার জন্য সে রাজি হলো কুমির হতে। একটি বাটিতে পানি ভরে তাতে মন্ত্র পড়ল। বউকে বলল, এ মন্ত্রপড়া পানি তার শরীরে ছিটিয়ে দিলেই আবার সে মানুষে রূপান্তরিত হতে পারবে। আর পানি ছিটিয়ে না দিলে সে কখনোই আর মানুষ হতে পারবে না।
মন্ত্রবলে এরপর নদের চাঁদ কুমির হয়ে গেল। কিন্তু কুমিরের ভয়াল মূর্তি দেখে বউ ভয় পেয়ে গেল। পড়িমরি করে দৌড়ে পালিয়ে গেল বাপের বাড়ি। পালানোর সময় পায়ে লেগে ঢেলে পড়ে গেল মন্ত্রপড়া পানি! নদের চাঁদ আর মানুষ হতে পারল না। মনের দুঃখে কুমির নদের চাঁদ পার্শ্ববর্তী বারাশিয়া নদীতে নেমে গেল। সারাগ্রামে শোরগোল পড়ে গেল। নদের চাঁদের মা তখনও বেঁচে ছিলেন। তিনি প্রতিদিন খাবার নিয়ে নদীর পাড়ে দাঁড়াতেন। কুমির নদের চাঁদ খেত সেই খাবার। এক সময় মা মারা যায়। বেড়ে যায় নদের চাঁদের দুঃখ। খাবার পাক আর না পাক, কুমির নদের চাঁদ কারও কোনো ক্ষতি করেনি কোনোদিন। দীর্ঘদিন নদের চাঁদ এভাবেই বেঁচে ছিল। কিন্তু বাঁচতে দিল না এক কুঠিয়াল। একদিন জলে কুমির দেখে গুলি করে বসে কুঠিয়াল। সে নাকি জানত না, ওই কুমিরটিই নদের চাঁদ! খুলনা-বোয়ালমারী রুটের স্টিমার কোম্পানি এ কারণেই ওই ঘাটের নাম দেয় নদের চাঁদের ঘাট।
হসাইফুল ইসলাম

No comments

Powered by Blogger.