কুমিল্লা সিটি নির্বাচন-মেয়র পদে মনোনয়নপত্র জমা দিলেন ১০ জন-২৪২ জন কাউন্সিলর পদে by আবুল কাশেম হৃদয়,

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে মোট ১০ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। গতকাল শুক্রবার শেষ দিনে জমা দিয়েছেন ৯ জন। আগের দিন জমা দিয়েছেন একজন।সেনা মোতায়েন ও ইভিএম পদ্ধতি বাতিলের দাবি জানিয়ে আসা জামায়াত সমর্থিত সম্ভাব্য প্রার্থী শেষ মুহূর্তে সরে দাঁড়িয়েছেন।গতকাল নগরীর টাউন হল মিলনায়তনের অস্থায়ী কার্যালয়ে রিটার্নিং অফিসার আবদুল বাতেন মনোনয়নপত্র গ্রহণ করেন।


মেয়র পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থিত আফজল খান, নাগরিক কমিটি সমর্থিত বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য মনিরুল হক সাক্কু, জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান এয়ার আহমেদ সেলিম এবং আওয়ামী লীগের তরুণ নেতা নুর উর রহমান মাহমুদ তানিম। এ ছাড়া শিরিন আক্তার, সালমান সাঈদ, মামুনুর রশিদ, চঞ্চল কুমার ঘোষ, হাসানুল আলম নামের আরো পাঁচজন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার মনোনয়নপত্র জমা দেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান।
মেয়র পদে আওয়ামী লীগের তিনজন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে নুর উর রহমান মাহমুদ তানিম ও আনিসুর রহমান দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে মনোনয়নপত্র নেন।
জামায়াতে ইসলামী সমর্থিত কাজী দ্বীন মোহাম্মদ মনোনয়নপত্র জমা দেননি।
সিটি করপোরেশনের ২৭টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ২৪২ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ৭০ জন সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দেন।
মেয়র পদে ১৮ জন, কাউন্সিলর পদে ২৮১ জন এবং সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ৭২ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন।
আগামী ৪ ও ৫ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র বাছাই হবে। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষদিন ১৪ ডিসেম্বর। তফশিল অনুযায়ী, আগামী ৫ জানুয়ারি ভোট গ্রহণ করা হবে।
গতকাল দুপুর আড়াইটার দিকে মনোনয়ন জমা দিতে আসেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য মনিরুল হক সাক্কু। সদ্য বিলুপ্ত পৌরসভার মেয়র মনিরুল হক নাগরিক কমিটির ব্যানারে নির্বাচন করছেন। সেনা মোতায়েন না করা এবং ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন ব্যবহারের নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে আসছে বিএনপি।
মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে মনিরুল হক সাংবাদিকদের বলেন, 'বহু চিন্তা-ভাবনা করে, যাঁদের সঙ্গে ৩৩ বছর রাজনীতি করি সবার সঙ্গে আলোচনা করে আমি মনোনয়নপত্র জমা দিতে বাধ্য হয়েছি। আমি শেষ পর্যন্ত লড়ে যাব।'
বিএনপির এই নেতা বলেন, 'যেহেতু স্থানীয় সরকার নির্বাচন, সেহেতু কুমিল্লায় স্থানীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নিতে বলেছিল বিএনপি। আমি এলাকায় কথা বলেছি। আমি বাধ্য হয়েছি নির্বাচনে অংশ নিতে।'
সব কেন্দ্রে ইভিএম হঠাৎ করে ব্যবহারের বিষয়ে দ্বিমত প্রকাশ করে মনিরুল হক বলেন, 'ইভিএমে মানুষ অনভিজ্ঞ। এই মেশিনে আবার ভোট গণনা করা যায় না।'
এরপর একটি জিপে করে আসেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত আফজল খান। দলের বিদ্রোহী হিসেবে পরিচিত আরো দুজনের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে আফজল খান সাংবাদিকদের বলেন, 'বিদ্রোহী প্রার্থী বলতে কিছু দেখি না। ছেলেপেলে তো দুষ্টামি করতেই পারে। এখনো তো সময় আছে প্রত্যাহারের। এটা তো দলের দায়িত্ব তাদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করানো।'
১৯৬০ সাল থেকে রাজনীতি করেন জানিয়ে আফজল খান আরো বলেন, 'আমার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক অভিযোগ থাকলেও কেউ আমাকে বলতে পারবে না চাঁদাবাজি, খুন-খারাবি করেছি।'
দলীয় নেতা-কর্মী নিয়ে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন জাতীয় পার্টি সমর্থিত এয়ার আহমেদ সেলিম। মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে এয়ার আহমেদ সেলিম জানান, পত্রপত্রিকায় কুমিল্লায় অনেক অস্ত্রের ছবি দেখেছি। নির্বাচনের আগে যেন এসব অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।
সেলিম বলেন, 'আওয়ামী লীগের কোনো দলীয় প্রার্থী আছেন কি না জানি না; প্রার্থী তো অনেক দেখছি। নির্বাচনে কুমিল্লার মানুষ আমাকে স্বচ্ছ প্রার্থী হিসেবে মনে করে। অনেক প্রার্থীর বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা, কলেজ পোড়ানো মামলাসহ অনেক মামলা ছিল।'
জুমার নামাজের আগে মনোনয়নপত্র জমা দেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক সহসভাপতি (ভিপি) ও তরুণ লীগ নেতা নুর উর রহমান মাহমুদ তানিম। মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে তিনি জানান, এটি স্থানীয় সরকার নির্বাচন। এ নির্বাচনে মেয়র পদে যিনি আসবেন তাঁর ওপর নির্ভর করছে আগামী দিনের কুমিল্লা কেমন হবে।
সকালে মহানগর জামায়াতে ইসলামীর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মহানগর শাখার আমির কাজী দ্বীন মোহাম্মদ জানান, কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সেনা মোতায়েন না হলে নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হবে না। অন্যদিকে ইভিএমের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করা হলে এতে কারচুপির সুযোগ থাকবে। এসব কারণে তিনি এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকছেন। বেশ কয়েক দিন নির্বাচনী গণসংযোগ করলেও মেয়র পদে তিনি মনোনয়নপত্র দাখিল করবেন না। তবে চারদলীয় জোটের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই বলে জানান তিনি।

No comments

Powered by Blogger.