ক্ষতিগ্রস্তের তালিকায়ই বাংলাদেশ-দুর্নীতি কমাতে চাই রাজনৈতিক সদিচ্ছা

দুনিয়ার সর্বাধিক দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে পরিচিত ছিল বাংলাদেশ। আনন্দের কথা, আজকে আমাদের দেশ আর সে অবস্থায় নেই। দুর্নীতির সূচকের ইতিবাচক পরিবর্তন হতে হতে এখন এ দেশের অবস্থান ১৩-তে গিয়ে পেঁৗছেছে। এ ঘোষণা এসেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের কাছ থেকে। প্রতিবছরই এ প্রতিষ্ঠানটি দুর্নীতির ওপর বিশ্বব্যাপী গবেষণালব্ধ ফল প্রকাশ করে। আমাদের এখানে তাদের এই প্রতিবেদন সর্বাধিক আলোচিত একটি বিষয়।


রাজনীতিবিদরা তাঁদের সাফল্য-ব্যর্থতার মাপকাঠি হিসেবে টিআইর এই প্রতিবেদনকে ব্যবহার করতে কসুর করেন না। সেই সূচকে যখন স্থিতাবস্থা কিংবা নিম্নগামী প্রবণতা দেখা যায়নি, তাই সংগত কারণে আমাদের আশা জাগতেই পারে। তার পরও অনেকেই বলতে পারেন, এতে এত তৃপ্তি পাওয়ার কী আছে। শতভাগ দুর্নীতিমুক্ত দেশ তো আর বাংলাদেশ নয়? সূচকের যে ইতিবাচক পরিবর্তন তাকে অবহেলা করার কোনো কারণ নেই। বড় কথা হচ্ছে, আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। দুর্নীতির মাত্রা এখন কমতে শুরু করেছে। তবে এটা ঠিক, তুলনামূলক বিবেচনায় বাংলাদেশ এখনো বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত দেশগুলোর তালিকায় রয়ে গেছে, যা আমাদের নৈতিকতা সম্পর্কে বহির্বিশ্বে প্রশ্ন তোলার মতো সুযোগ থেকেই যায়। সাধারণত বলা হয়ে থাকে স্কোর শূন্য থেকে ১০-এর ভেতর থাকলে এবং প্রাপ্ত নম্বর যদি তিনের কম হয়, তাহলে সেই দেশকে অধিক দুর্নীতির দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশ এ বছর পেয়েছে ২ দশমিক ৭। ফলে এখনো আমাদের দেশ অধিক দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবেই গণ্য হচ্ছে। আবার শতভাগ দুর্নীতিমুক্ত কোনো দেশ পৃথিবীতে নেই। সেই ধারণাও মাথায় রাখতে হবে। যে দেশগুলো ভালো অবস্থানে আছে, সেগুলোও ১০ নম্বরে ১০ পায়নি এ বছর। এ দেশগুলোর অবস্থা বিশ্লেষণ করার প্রয়োজন আছে। সাধারণত দীর্ঘস্থায়ী স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশের দেশগুলোয়ই দুর্নীতির কলঙ্ক তিলক পরেছে কম। আর যেসব দেশে দুর্নীতি সবচেয়ে বেশি হচ্ছে, সেসব দেশের মধ্যে রাজনৈতিক হানাহানি বেশি। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলো দুর্নীতির মাপকাঠিতে খারাপ অবস্থানে রয়েছে। এই অস্থিতিশীল অবস্থার মধ্যেই দেশগুলো ক্রমাগত দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হয়েছে। সোমালিয়া, উত্তর কোরিয়া, আফগানিস্তান, ইরাক, মিয়ানমার, সুদান, তুর্কিস্তান, উজবেকিস্তান, বুরুন্ডি, ভেনিজুয়েলার যে অবস্থান, তার পেছনে যুদ্ধ এবং রাজনৈতিক হানাহানিই সবচেয়ে বেশি দায়ী। সুতরাং দুর্নীতি কমিয়ে আনতে হলে রাজনৈতিক সদিচ্ছা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আশার কথা, বাংলাদেশ গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশক থেকে গণতান্ত্রিক পরিবেশ পেয়েছে। আর গণতান্ত্রিক পরিবেশ যতই দৃঢ় হচ্ছে, এখানে দুর্নীতির মাত্রাও কমতে শুরু করেছে। তবে বর্তমান সরকারি দল নির্বাচনী ইশতেহারে দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার যে প্রত্যয় ঘোষণা করেছিল, সেদিকে তাদের দৃষ্টি দেওয়া উচিত। নির্বাচনী ওয়াদা পূরণের কথা যদি বিবেচনা করা হয়_এই অর্জনকে আশানুরূপ বলে মনে করা যায় না। কিন্তু বাংলাদেশের মতো ছোট একটি দেশে যেখানে দারিদ্র্য বারবার আঘাত করে, সেই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে একটি সরকারের পাঁচ বছরের সময়ে সম্ভব নয়। তাই ভবিষ্যতেও যে সরকার আসবে তারাও যদি মনোযোগী হয়, তাহলে হয়তো একদিন বাংলাদেশের প্রাপ্ত নম্বর দশের কাছাকাছি চলে যেতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.