সরকার কোন পথে যাবে by নির্মল সেন

তেল-গ্যাস, আইন-শৃঙ্খলা ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বর্গতি ছাড়াও সরকারের সামনে নতুন করে তিনটি সমস্যা দেখা দিয়েছে। প্রথম সমস্যা টিপাইমুখ বাঁধ। এ নিয়ে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের টানাপড়েন চলছে। এদিকে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া বলেছেন, এ সমস্যা আমাদের আমলে হয়নি। খুলনা অভিমুখে রোডমার্চ শেষে জনসভায় তিনি বলেছেন, টিপাইমুখে বাঁধের সব মাল-মসলা, যন্ত্রপাতি বাংলাদেশের ওপর দিয়ে আসাম যাবে।


আমরা তা হতে দেব না। এ নিয়ে সরকারও বিপাকে পড়েছে। ক'দিন আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরে টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে কথা হয়নি। কথা হয়েছিল তিস্তার পানি বণ্টন সম্পর্কে। সে সমস্যার সমাধান হয়নি। বাংলাদেশের পানিসম্পদমন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন বলেছেন, প্রয়োজন হলে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক আদালতে যাবে। খালেদা জিয়া টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে মনমোহন সিংয়ের কাছে তিনটি চিঠি লিখেছেন। মনমোহন সিং একটির জবাব দিয়েছেন। এ ছাড়া বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে খালেদা জিয়া রোডমার্চের প্রতিটি জনসভায় সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি নিজের ছেলেদের সম্পর্কে বলেছেন, ষড়যন্ত্র করে তার ছেলেদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তিনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পর্কে স্পষ্ট করে কিছু বলেননি। তিনি মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী। তার উচিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পর্কে স্পষ্ট কথা বলা। তিনি যুদ্ধাপরাধী হিসেবে যারা আটক আছেন তাদের মুক্তি চেয়েছেন। তার এ বক্তব্য যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষেই যাচ্ছে। সরকারের দ্বিতীয় সমস্যা হচ্ছে ঢাকা সিটি করপোরেশনকে ভাগ করা নিয়ে। এ ব্যাপারে ঢাকাবাসী দু'ভাগে বিভক্ত। পুরান ঢাকার আদিবাসীদের অভিযোগ নতুন ঢাকার লোকজন বেশি সুবিধা পাবে। রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ সরবরাহ_ সবই তাদের জন্য উন্নত হবে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ঢাকা ভাগ করে লাভ হবে না। প্রধানমন্ত্রীর গণভবন ও রাষ্ট্রপতির বঙ্গভবন দু'দিকে পড়বে। এ অবস্থ্থায় বিদেশি অতিথিদের চলাচলে অসুবিধা হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ঢাকা সিটিকে না ভেঙে আজকের সিটি করপোরেশনকে শক্তিশালী করা হোক। দুটি সিটি করপোরেশন করতে গেলে বেশি অর্থ অপচয় হবে। সরকারের তৃতীয় সমস্যা হচ্ছে অর্পিত সম্পত্তি আইন সংশোধন। এ সংশোধন নিয়ে দু'বঙ্গের সংখ্যালঘুদের মধ্যে দ্বিমত আছে। বাংলাদেশের সংখ্যালঘু ও পশ্চিমবঙ্গের উদ্বাস্তুদের একাংশের অভিমত, অর্পিত সম্পত্তি সমাজের প্রভাবশালী মানুষের দখলে। আইন যেভাবে করা হয়েছে তাতে বিভিন্ন অফিস ঘুরতে ঘুরতে লোকদের হয়রানির শিকার হতে হবে। অযথা টাকা ব্যয় করতে হবে। এটা হবে একটা ঘুষের আখড়া। তবে পশ্চিমবঙ্গের উদ্বাস্তুদের একাংশের মত, এটা মন্দের ভালো। এতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি সংখ্যালঘুদের আস্থা ফিরবে। তবে এ নিয়ে নানা জনে নানা প্রকার মত ব্যক্ত করেছেন। তারা বলেছে, এতদিনে ওই সম্পত্তি কত হাতবদল হয়েছে। তা আর ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে না। তাদের মধ্যে আশার চেয়ে হতাশারই বেশি।
এরপর আছে বাংলাদেশের নতুন মন্ত্রীদের কথা। আমার অনুজপ্রতিম সাংবাদিক, লন্ডন প্রবাসী আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী লিখেছিলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রিসভা কচিকাঁচার মেলার মতো। তবে এবার মন্ত্রিসভায় স্থান পাওয়া দু'জন মন্ত্রী অন্তত কচিকাঁচার দলে নয়। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ও ওবায়দুল কাদের প্রাপ্ত বয়স্ক। শোনা যাচ্ছে মন্ত্রিসভা থেকে কয়েকজন মন্ত্রী বাদ পড়বেন। দেখা যাক কারা মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়েন। কারা নতুন মন্ত্রী হয়ে আসেন। মোহাম্মদ নাসিম ও তোফায়েল আহমেদ মন্ত্রী হয়ে আসেন কি-না। শোনা যাচ্ছে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, যোগাযোগ মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী রুহুল হক, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী রাজিউদ্দিন রাজু, ভূমিমন্ত্রী রেজাউল করিম হীরাসহ অনেকেই মন্ত্রী থাকছেন না। আমি জানি না এর প্রতিক্রিয়ায় কী হবে? শেখ হাসিনা কী করে এত সব সামলাবেন। এদিকে পুঁজিবাজার নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপের পরও সমস্যার সমাধান হয়নি। পুঁজি বাজারের সমস্যা নিয়ে পর্যবেক্ষণ দল গঠন করা হয়েছে। তারা প্রতিদিন সরেজমিনে গিয়ে পুঁজিবাজার পর্যবেক্ষণ করবেন এবং প্রতিদিনের রিপোর্ট সরকারের কাছে দেবেন। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, পর্যবেক্ষণ দল স্থায়ী সমাধান হতে পারে না। পুঁজিবাজারের জন্য সঠিক ব্যবস্থা চাই।

নির্মল সেন :সাংবাদিক ও রাজনীতিক
nirmolsen1930@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.