ট্রেন দুর্ঘটনা রোধে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি by এনামুল হক মনি

স্বয়ংক্রিয়ভাবে ট্রেন দুর্ঘটনা রোধে নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় চুয়েটের সদ্য পাস করা খিজির মাহমুদ ও মোঃ রিয়া সাদ আজিমতাদের উদ্ভাবিত প্রযুক্তির নাম অটোমেটিক রেল ট্র্যাক সুইচিং সিস্টেমট্রেন দুর্ঘটনায় প্রতি বছর অসংখ্য মানুষ প্রাণ হারায়। তবে ট্রেন দুর্ঘটনা রোধে কোনো কার্যকর পদ্ধতি কিংবা প্রযুক্তি দৃষ্টিগোচর হয় না। স্বয়ংক্রিয়ভাবে ট্রেন দুর্ঘটনা রোধে নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় চুয়েটের সদ্য পাস করা খিজির মাহমুদ ও মোঃ রিয়া সাদ আজিম।


শিক্ষক ছোটন কান্তি দাশের তত্ত্বাবধায়নে ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ এড়ানোর অভিনব প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন তারা। ট্রেন দুর্ঘটনায় পড়তে যাচ্ছে কিংবা কেউ ট্রেনের নিচে কিছুক্ষণ পরই কাটা পড়তে যাচ্ছে অথচ কিছুই করার নেই চালকের_ ট্রেন দুর্ঘটনার এমন চিত্র ভাবিয়ে তোলে খিজির মাহমুদকে। তিনি স্বপ্ন বুনতে থাকেন কীভাবে এড়ানো যায় এই ভয়ংকর দুর্ঘটনা। সহপাঠী ও বন্ধু রিয়া সাদ আজিমকে নিয়ে শুরু হয় তাদের গবেষণা। তাদের এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথ এবং সাহস দেখান শিক্ষক ছোটন কান্তি দাশ। শুরু হয় নানামুখী গবেষণা। খিজির মাহমুদ বলেন, 'যাত্রীসেবা ও পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বেই ট্রেন একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে পরিচিত। ট্রেনের দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে রয়েছে মুখোমুখি সংঘর্ষ, লাইনচ্যুতি, আগুন লাগা, বাস কিংবা অন্য যানবাহনের সঙ্গে সংঘর্ষ ইত্যাদি। তবে ক্ষয়ক্ষতির দিক থেকে এসব দুর্ঘটনার মধ্যে দুটি ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ অত্যন্ত ভয়াবহ ও মারাত্মক। মুখোমুখি সংঘর্ষের ফলে প্রতি বছর বিপুল সংখ্যক প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে এবং সেই সঙ্গে ব্যাপক অর্থনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে। ট্রেন দুর্ঘটনা এড়ানোর স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি তৈরিতে উদ্বুদ্ধ হই আমরা।' তাদের উদ্ভাবিত অটোমেটিক রেল ট্র্যাক সুইচিং সিস্টেম
দুটি ট্রেনের অবস্থান নির্ণয় করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ট্রেন দুটিকে মুখোমুখি সংঘর্ষের হাত থেকে রক্ষা করবে। ট্রেনলাইনে ট্রেনের অবস্থান নির্ণায়ক কিছু সেন্সর লাগানো থাকবে, যার মাধ্যমে সার্বক্ষণিকভাবে ট্রেনের অবস্থান ও গতির দিক প্রধান নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে পর্যবেক্ষণ করা হবে।
কোনো ট্রেন ত্রুটিপূর্ণ নির্দেশনা কিংবা অসাবধানতায় মুখোমুখি হওয়ার উপক্রম হলে প্রধান নিয়ন্ত্রণ কক্ষে সতর্কীকরণ অ্যালার্ম বেজে উঠবে এবং ট্রেনের অবস্থান নির্দেশ করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেবে। এরপরও যদি কোনো ব্যবস্থা নেওয়া না হয় তাহলে ট্রেন দুটির মুখোমুখি সংঘর্ষের আগেই যে কোনো একটি ট্রেনের লাইন পরিবর্তন করে দিয়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ট্রেন দুটিকে দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা করবে। এজন্য প্রধান নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কম্পিউটারে তাদের উদ্ভাবিত একটি সফটওয়্যার থাকবে, যার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ কক্ষে বসেও ট্রেনের লাইন পরিবর্তন করা যাবে।
এ ছাড়া সফটওয়্যারটির মাধ্যমে প্রধান নিয়ন্ত্রণ কক্ষে বসেও ট্রেনের অবস্থান ও গতির দিক সার্বক্ষণিকভাবে পর্যবেক্ষণ করা যাবে। প্রযুক্তিটি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়েছে মোটর, মাইক্রো কন্ট্রোলার, সেন্সর, কমিউনিকেশন কেবল, ভিজুয়াল বেসিক প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ, কন্ট্রোল রুম সার্ভার, পিসি কানেক্টর এবং রেলওয়ে কলিশন অ্যাভইডিং সফটওয়্যার আর এটি তৈরি করতে খরচ হয়েছে মাত্র ৫ হাজার টাকা।
উদ্ভাবক খিজির মাহমুদ বলেন, শ্রদ্ধেয় শিক্ষক ছোটন কান্তি দাশ ও বন্ধু রিয়া সাদ আজিমের সহযোগিতায় প্রযুক্তিটি উদ্ভাবন করতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত। তড়িৎ কৌশল বিভাগের শিক্ষক ছোটন কান্তি দাশ প্রযুক্তিটি সম্পর্কে বলেন, সরকার উদ্যোগ নিলে অটোমেটিক রেল ট্র্যাক সুইচিং সিস্টেমের মাধ্যমে ট্রেন দুর্ঘটনা কমিয়ে আনা সম্ভব।

No comments

Powered by Blogger.