আমীরুল ইসলামের ছড়াগল্প-ব্যাঙের ছানা গাইতো গানা

ক যে ছিলো ব্যাঙের ছানা
ধুমতানানা খাইতো খানা
করতো ঘ্যাঙোর ঘ্যাং
ব্যাঙের ছিলো লম্বা লম্বা ঠ্যাং।


বনের মধ্যে হাঁটতে হাঁটতে
কোথায় যেন যাচ্ছিলো
গুবরে পোকার কাণ্ড দেখে
বড্ডো হাসি পাচ্ছিলো
ব্যাঙের ছানা হাসতে হাসতে
ঘাসের ডগা খাচ্ছিলো।
তিড়িং বিড়িং নাচছিলো।

ব্যাঙের ছানা ভুলেই গেছে
কোথায় যেন কাজ ছিলো
গুনগুনিয়ে মিরিট গানের
ছন্দ ও সুর ভাঁজছিলো_
আপন মনে হাঁটছিলো সে
হাঁটতে হাঁটতে যাচ্ছিলো।

গভীর সে বন।
হারায় এ মন।
দিনের বেলা রাতের আঁধার
এর নামই তো বন ও বাদাড়।

সেই বনে এই ব্যাঙের ছানা
কোথায় তুমি যাচ্ছো হে_
এই বনে কি নেই খাদ্য
ঘাসের ডগা খাচ্ছো হে।

কথা শুনে ব্যাঙের ছানা
হাসলো শুধু হি হি,
বললো, আমি যাচ্ছি দূরে
চিকন স্বরে মিহি।

ব্যাঙের ছানা যাচ্ছে
হাঁটতে মজা পাচ্ছে।
এমন সময় গভীর বনে
বিষ্টি এলো বিষ্টি
অবুঝ অবুঝ সবুজ পাতায়
হারায় চোখের দৃষ্টি।

বিষ্টি পড়ে রিমঝিম
ব্যাঙের লাগে হিম হিম
বিষ্টি ঝরে ঝম ঝম
ব্যাং হাঁটে কি কম কম?
বিষ্টিতে ব্যাং ভিজলে, ব্যাঙের
হবেই সর্দি-কাশি,
ফুর্তি তখন হারিয়ে যাবে
মিলিয়ে যাবে হাসি_
কী করা যায় কী করা যায়
ব্যাঙের অনেক ভাবনা
ব্যাঙের ছানার শ্বশুরবাড়ি
শাহজাদপুর_ পাবনা।

ব্যাঙ খুঁজছে ব্যাঙের ছাতা
বিষ্টিতে তার ভিজছে মাথা।
সর্দিতে নেই রক্ষা
নিউমোনিয়া, যক্ষ্মা_
তখন হবে কী উপায়
ব্যাঙ বেচারা নিরুপায়।
হাঁটতে থাকে ভীরু পায়।
ভিজছে কেবল ভিজছে
দু'হাত দিয়ে মাথাটাকে
রক্ষা করে নিচ্ছে।

কোথায় পাবে আশ্রয় সে
তাড়াতাড়ি খুঁজছে,
বৃষ্টি-ভেজা চলবে না তার
ওইটুকু সে বুঝছে।

হঠাৎ দেখে ঝোপের পাশে
ছোট্ট ব্যাঙের ছাতা
ছাতার ওপর গড়িয়ে আছে
সবুজ কলাপাতা।

ওরে বাপরে বাপ
ছাতা দেখেই ব্যাঙের ছানা
জোরসে দিলো লাফ।

ছাতার নিচে ঘাপটি মেরে
চুপটি করে বসে
বাইরে তখন বিষ্টি ঝরে।
মন ভরে যায় রসে।

বাইরে তুমুল বিষ্টি ঝরে
বিষ্টি অঝোর বিষ্টি
ছাতার নিচে ব্যাঙের ছানার
ঝাপসা চোখের দৃষ্টি।

ছোট্ট একটা ছাতা
কোথায় রাখবে ঠ্যাং দু'খানা
কোথায় রাখবে মাথা?
এমন সময় ভিজতে ভিজতে
এলো একটা ফড়িং
ঠাণ্ডা লেগে কাঁপছে ডানা
নট নড়িং চড়িং।
ব্যাঙের ছানা বললো, ফড়িং
তোমায় একটু ধরিং?
জলদি এসো ছাতার তলায়
আমি না হয় সরিং।

ছোট্ট ছাতার তলায়_
ফড়িং এবং ব্যাঙের ছানা
থাকলো গলায় গলায়।

বিষ্টি থামার নাম নেই
ব্যাঙের ছানা ফড়িং ভায়া
তাকায় তখন সামনেই।

আরে আরে_ ঐটা কে রে
ভিজে চুপচুপ আরশোলা
কার বাপ সে? কার পোলা?
আরশোলাটা কাঁদো কাঁদো স্বরে
বললো, আমি মরে যাচ্ছি ডরে
এত্তো জোরে বিষ্টি কেন ঝরে?
হয়তো আমি মরেই যাব ঝড়ে।

বললো, ব্যাঙের ছানা
ভয় করো না, না, না।
তোমার কাছাকাছি
আমরা সবাই আছি।

জলদি আসো ছাতার তলায়
আমরা থাকি গলায় গলায়।

আরশোলাটা কাছে এলো
বাঁচার উপায় চাই
ছোট্ট ব্যাঙের ছাতার নিচে
তিনজনের হয় ঠাঁই।

একটু পরেই আরশোলাটা
সুস্থ হয়ে ওঠে
তিনজনেরই মুখে তখন
গানের কলি ছোটে।
'আমরা জানি ছড়রা...
হা হা হাসির হররা
মিলিয়ে দেবো প্রাণে প্রাণে
সুখেই আছি গানে গানে।
বিষ্টিতে না ভিজে
থাকবো ছাতার নিচে।

ছোট্ট একটা ছাতা
বাঁচায় সবার মাথা।
তাই ধরেছি গান
আমরা জানের জান।...'

বিষ্টি কি আর থামে?
আরও জোরে নামে
বিষ্টি ঝরে ঝরো ঝরো
সবাই কাঁপে থরো থরো।



এমন সময় দেখলো সবাই
একটা ইঁদুর ভিজে
ছাতার দিকে আসছে ধীরে
একলা নিজে নিজে।

হাঁটতে গিয়ে ইঁদুর ভায়ার
কষ্ট অনেক কষ্ট
ব্যাঙের ছানা আরশোলাটা
বুঝলো সেটা পষ্ট।

বিষ্টি ফোঁটা গায়ে পড়লে
হাঁটবে ইঁদুর কী করে?
ভেজা ল্যাজে শক্তি তো নেই
ল্যাজ আটকেছে শিকড়ে।

ইঁদুর ভায়া মরো মরো
বিষ্টি ঝরে ঝরো ঝরো।

ইঁদুরটাকে বাঁচাতে তাই
বললো ফড়িং ভায়া,
ওর প্রয়োজন খুব শিগগির
ব্যাঙের ছাতার ছায়া।

হাঁটতে পারে না সে
খুকখুকিয়ে কাশে।
কাঁপে সে ভয়-ত্রাসে।

আরশোলা আর ব্যাঙের ছানা
দৌড় দিলো এক সাথে_
ইঁদুর ভায়া ইঁদুর ভায়া
আমরা আছি সাথে।

শিকড় থেকে ল্যাজ ছাড়িয়ে
ইঁদুরটাকে ধরে,
ক্লান্ত ইঁদুর কয় না কথা
বিষ্টি তখন ঝরে।

ব্যাঙের ছানা ল্যাজটা নিলো
নিজের কাঁধে তুলে
ইঁদুর ভায়া কষ্ট করে
চললো হেলেদুলে।

সেই ছোট্ট ব্যাঙের ছাতার নিচে
সবাই মিলে বসলো গিয়ে
একে অন্যের পিছে।

বিষ্টি এখন ঝমঝম
একটুখানি কম কম।

সবার শরীর শুকিয়ে গেছে
নেই কাঁপনি কারো
একটা ছাতার নিচে সবাই
ভাবতে কি কেউ পারো?

একটু পরেই বিষ্টি থামবে
রোদ উঠবে বনে
কষ্টগুলো তখন কি আর
থাকবে কারও মনে?
কষ্ট তো নয় মিষ্টি
থামলো এবার বিষ্টি।

সবাই মিলে বেরিয়ে এলো
ছোট্ট ছাতা থেকে
ছাতার তলায় কেমনে ছিলাম
অবাক ছাতা দেখে।

ছোট্ট একটা ছাতা
ঢাকলো সবার মাথা।

হাসতে হাসতে ব্যাঙের ছানা
বললো তখন, শোনো
এক সাথে কাজ করলে, বিপদ
থাকে না কক্ষণো।

ফড়িং বলে, প্রবাদ আছে
'হও যদি ভাই সুজন
এক বিছানায় দুজন।'

সবাই মিলে ধরলো তখন গান
গানের সুরে জড়িয়ে গেল প্রাণ।

আমরা জানি ছড়রা...
হা হা হাসির হররা
মিল হয়ে যায় প্রাণে প্রাণে
সুখেই আছি গানে গানে।

No comments

Powered by Blogger.