খাদ্য তালিকায় জাতীয় ফুল by আলম শাইন

বিশ্বের প্রতিটি দেশেই কিছু না কিছু প্রতীক থাকে। এ প্রতীকগুলোকে জাতীয় বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। সাধারণত এতে স্থান পায় ফুল-ফল, পশু-পাখি, পতাকা ইত্যাদি। তেমনি ফুলের ক্ষেত্রে শাপলা আমাদের জাতীয় ফুলের মর্যাদা লাভ করেছে। দলিল-দস্তাবেজের মাধ্যমেই শাপলাকে জাতীয় ফুলের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।
আমাদের জাতীয় ফুল শাপলা বছরের নির্দিষ্ট সময় ছাড়া দেখা যায় না। শুধু বর্ষা এলে খাল-বিল, নদী-নালা,


হাওর-বাঁওড়, পুকুর কিংবা নিচুু জলাভূমিতে শাপলা জন্মে। প্রায় অযত্ন-অবহেলায় এটি বেড়ে ওঠে তখন। কোনো প্রকার চাষাবাদেরও প্রয়োজন পড়ে না। স্রোতবিহীন জলাশয়ের কাদামাটিতে সুপ্ত থাকা শালুক থেকে শাপলা গাছের জন্ম হয়। বর্ষার জল বাড়লেই শালুক থেকে গুল্মজাতীয় সরু নল বেরিয়ে থালাকৃতির পাতাসমেত জলের ওপর ভেসে থাকে গাছটি। ঠিক ওটার নিচ দিয়ে গজিয়ে ওঠে কিছু মোটাসোটা ডাঁটা, যার মাথায় থাকে কলার মোচার মতো কুঁড়ি। সেই কুঁড়িটি ফুটলেই নাম ধারণ করে 'শাপলা'। সাধারণত তিন প্রকার শাপলা জন্মে এ দেশে। লাল, সাদা ও নীল। এর মধ্যে মন হরণকারী ধবধবে সাদা শাপলাটিই আমাদের জাতীয় ফুল হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। দুই বাংলা ছাড়া সাদা শাপলা বিশ্বের আর কোথাও খুব একটা দেখা যায় না। গুল্মজাতীয় এ গাছটি বাংলার আনাচে-কানাচে পুকুর-ডোবায় বেশ সহজেই জন্মে, যা অন্য সব দেশে দুর্লভই বটে। এ সহজলভ্য (এ দেশের জন্য) ফুলটাকে আমরা সঠিক মূল্য দিতে জানি না। উল্টো হাতের নাগালে পেয়ে নির্বিচারে নিধন করে যাচ্ছি। একটুও কৃপণতাবোধ করছি না এটাকে তরকারি হিসেবে খেতে। বরং সুস্বাদু তরকারি হিসেবে একে খাদ্যতালিকায় স্থান দিয়ে রেখেছি বহু যুগ আগে থেকেই। জাতীয় মাছের সঙ্গে জাতীয় ফুলের তরকারি না হলে যেন জমেই না আমাদের। প্রশ্ন উঠতে পারে জাতীয় ফল এবং মাছ খেতে দোষ নেই_ ফুলের বেলায় ন্যাকামোটা কেন? জবাবটা সহজ, জাতীয় ফল ও মাছের বংশ বিস্তারের ক্ষেত্রে যে ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, সে ধরনের কোনো উদ্যোগই নেওয়া হয়নি শাপলার বংশ বিস্তারের জন্য। ঘটছে বরং উল্টোটা; শাপলার শালুক, ডাঁটা, ফলসুদ্ধ (ভেট) খাচ্ছি। সোজা কথা এ ফুল গাছটির একেবারে গোড়া থেকে আগা অবধি সাবাড় করছি আমরা। প্রশ্ন হচ্ছে, দেশে কি সবজির এতই আকাল পড়েছে যে, শাপলা খেয়ে জীবনধারণ করতে হবে জাতিকে? শুধু জিভের তৃপ্তি মেটানোর জন্যই কি একে সাবাড় করছি? আমরা শাপলাকে টাকা, পোস্টকার্ড কিংবা ইনভেলাপে স্থান দিয়েছি সত্যি, কিন্তু মনের গহিনে স্থান দিতে পারিনি এখনও বোধকরি। পারলে হয়তো নির্দয়ভাবে সাবাড় করা হতো না জাতীয় ফুলকে। যে হারে সাবাড় করা হচ্ছে তাতে অচিরেই শাপলা নামক ফুলটি আমাদের কাছ থেকে হারিয়ে গেলে আশ্চর্য হওয়ার কিছুই থাকবে না। বলে রাখছি, বিশ্বের আর কোনো দেশের মানুষই কিন্তু জাতীয় ফুল খাচ্ছে না, একমাত্র এ দেশের মানুষ ছাড়া। কাজেই সাবধান হতে হবে এখনই। না হলে একদিন পস্তাতে হবে পুরো জাতিকে।
alamshine@ymail.com

No comments

Powered by Blogger.