মূল্যস্ফীতি ও স্থানীয় বাজারের দশা-তদারকি জোরদারের বিকল্প নেই

দেশের সাধারণ জনগোষ্ঠীর ওপর এক ভয়ানক থাবা এসে পড়েছে। মূল্যস্ফীতির হার বিগত সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। একমাত্র যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ এবং অস্বাভাবিক কোনো সংকট ছাড়া এমন মূল্যস্ফীতি কোনোক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয়। দেশে তিন-চার মাস ধরে মুদ্রাস্ফীতি চলছে ডাবল ডিজিটে। এ মাসেই মুদ্রাস্ফীতির পরিমাণ ১১ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। সেই সঙ্গে বেড়ে চলেছে বেকারত্বের হার। বাড়ছে ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান। ফলে অর্থনীতি চরম এক হুমকির সম্মুখীন


হয়ে পড়েছে। এটা পরিষ্কার হয়ে উঠেছে যে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সরকারের জন্য কঠিন। অন্যদিকে মূল্যস্ফীতি তথা মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাজার সরবরাহে তৈরি হয়েছে বিশৃঙ্খলা। যে দ্রব্যের মূল্য উৎপাদনস্থলে ১০ টাকা, তা ঢাকা কিংবা পার্শ্ববর্তী অন্য কোনো জনবহুল শহরের বাজারে ঢুকতেই তার মূল্য হয়ে যাচ্ছে ৩০ টাকা। অথচ পরিবহন ব্যয়সহ তা সর্বোচ্চ ১৫ টাকা হওয়াটাই হতো যথাযথ। সরকার কৃষিকাজের জন্য যথেষ্ট ভর্তুকির ব্যবস্থা রাখলেও দেশের সবজিচাষিরা আছেন বিপাকে। এমন অবস্থায় একদিকে উৎপাদনকারী কৃষক তাঁর যথাযথ মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, অন্যদিকে খুচরা ক্রেতাদের বাজারে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। অথচ সরকারের পক্ষ থেকে যে বাজার তদারকি ব্যবস্থা রয়েছে, তা পুরোপুরি অকার্যকর হয়ে পড়েছে।
সমস্যা শুধু এখানেই নয়। গ্যাস ও বিদ্যুতের অভাবে উৎপাদন কমে গেছে। এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শ অনুযায়ী জ্বালানির দাম আরো একদফা বাড়ানো হয়েছে। এতে সামষ্টিক অর্থনীতির চাপ কিছু কমলেও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর দারিদ্র্য আরো প্রকট হয়ে উঠবে। কারণ জ্বালানিমূল্যের চাপ অধিক ভোগ করতে হচ্ছে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকেই। এ অবস্থা থেকে একটি গণতান্ত্রিক সরকারের উত্তরণ অপরিহার্য। এটি খুবই বাস্তবসম্মত বিষয়, সরকার যে পরিমাণ ভর্তুকি দিচ্ছে, তাতে উন্নয়নকাজ ব্যাহত হচ্ছে। এখন শ্যাম রাখি না কুল রাখি অবস্থার মধ্যে পতিত হতে হয়েছে। সরকারকে এমন পরিস্থিতিতে বাজার তদারকি শক্তিশালী করা, সরবরাহ চেইন নিরবচ্ছিন্ন ও স্বচ্ছ করে তোলা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কাজের সংস্থানে এবং বিশেষ করে খাদ্যপণ্য ক্রয়ে করণীয় চিহ্নিত করার দাবি জানাচ্ছি আমরা। সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী মহোদয়কে মনে রাখতে হবে, বাজার পরিস্থিতির সঠিক চিত্র যেন তিনি সংগ্রহ করতে পারেন, সেদিকে জোর দিতে হবে। আমরা লক্ষ করে আসছে, বিশেষ করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের বক্তব্যের সঙ্গে বাজারের মিল খুঁজে পাওয়া যায় না। এ অবস্থা থেকে সরে আসা দরকার।

No comments

Powered by Blogger.