মূলধারার উন্নয়নে প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠী by সায়েমা চৌধুরী

বাংলাদেশের প্রতিবন্ধী নাগরিকরা এখনও উপেক্ষা, দারিদ্র্য আর প্রান্তিকতার শিকার। আজ ৩ ডিসেম্বর ২০তম আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয়_ 'উন্নয়নে সম্পৃক্ত প্রতিবন্ধী ব্যক্তি: সবার জন্য সুন্দর এক পৃথিবী।' প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীকে উন্নয়নের মূল স্রোতধারায় সম্পৃক্ত করার ক্ষেত্রে বড় বাধা সঠিক তথ্য-পরিসংখ্যানের অভাব। এ পর্যন্ত পাঁচবার আদমশুমারি সম্পন্ন হওয়া সত্ত্বেও প্রতিবন্ধী মানুষ কতজন_ এ নিয়ে সঠিক তথ্য নেই।


২০০১ সালের চতুর্থ আদমশুমারিতে প্রথমবারের মতো প্রতিবন্ধী জনসংখ্যা নিরূপণের চেষ্টা হলেও সঠিক সংখ্যা জানা যায়নি। ২০০১ আদমশুমারি অনুযায়ী এই ধরনের নাগরিকের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ০.৪৭ শতাংশ, যা ১৯৮১ সালে অনুমিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবের (একটি দেশের মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশ প্রতিবন্ধী মানুষ) সঙ্গে একেবারেই সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না। আদমশুমারি ও গৃহগণনা ২০১১-তে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সংখ্যা নিরূপণে আরও বিশেষায়িত উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু গণনার প্রক্রিয়া ও বাস্তবায়নের বিষয়টি এরই মধ্যে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে এবং প্রতিবন্ধী নাগরিকরা এ নিয়ে আশাবাদী নন। গত জুন ২০১১-এ আনুষ্ঠানিকভাবে অবমুক্ত 'খানা আয় ব্যয় জরিপ ২০১০'-এ বলা হয়, বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার ২.৬ শতাংশ মানুষের দৃশ্যমান/তীব্র প্রতিবন্ধিতা রয়েছে। কিন্তু এ হিসাবও জুন ২০১১-এ প্রকাশিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বিশ্বব্যাংকের এক যৌথ প্রতিবেদনের পরিসংখ্যানের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। সঠিক পরিসংখ্যানের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এর ভিত্তিতেই সরকার ও দাতা সংস্থাগুলোর উন্নয়ন পরিকল্পনা ও অর্থ বরাদ্দ নির্ভর করবে। প্রতিবন্ধী মানুষদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘ প্রণীত 'প্রতিবন্ধী ব্যক্তিবগের্র অধিকার সনদ' ২০০৮ সালে আন্তর্জাতিক আইন হিসেবে কার্যকর হয়। বাংলাদেশ এই সনদের অনুসমর্থনকারী দেশগুলোর অন্যতম। বর্তমান সরকার তার নির্বাচনী ইশতেহারে প্রথমবারের মতো প্রতিবন্ধিতাকে কেবল স্বাস্থ্যগত দিক থেকে গণ্য না করে মানবসম্পদ হিসেবে বিবেচনা করেছে এবং তাদের উন্নয়নে অধিকার আইন, শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও প্রবেশগম্যতাসহ সামাজিক মর্যাদা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন কর্মসূচি প্রণয়নের ঘোষণা দিয়েছে। জাতীয় পর্যায়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার রূপরেখা 'ন্যাশনাল পার্সপেকটিভ প্লান ২০১০-২১' দলিলে নির্বাচনী এ অঙ্গীকারের প্রতিফলন ঘটেছে। এর ধারাবাহিকতায় সরকার গত মে ২০১১ তে প্রতিবন্ধী মানুষদের জন্য অধিকারভিত্তিক আইন প্রণয়নের চূড়ান্ত ঘোষণা দিয়েছে। বর্তমানে এ নতুন আইনের খসড়া তৈরির কাজ চলছে। প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীকে মূলধারার উন্নয়নে সম্পৃক্ত করতে, যুগোপযোগী আইন ও নীতিমালা প্রণয়নের পাশাপাশি এর বাস্তবায়নে মনোযোগ দিতে হবে সরকারকে। প্রতিবন্ধিতা বিষয়ে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ২০০৬ সালে গৃহীত হয়েছিল। কিন্তু 'জাতিসংঘ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিবর্গের অধিকার সনদ' কার্যকর হওয়ার প্রেক্ষাপটে এই কর্মপরিকল্পনার কাঠামোগত পরিবর্তন অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। এখন নতুন কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন প্রয়োজন যাতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিবর্গের অধিকার সনদ বাস্তবায়নের দিকনির্দেশনা থাকবে। এতে স্বল্প, মধ্য, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাগুলোকে চিহ্নিত এবং পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পরিবীক্ষণযোগ্য ও অঞ্চলভিত্তিক সূচক নির্ধারণ করতে হবে। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে কাজের সমন্বয়, সুশীল সমাজ ও প্রতিবন্ধী জনগণের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করাও গুরুত্বপূর্ণ।
sayema.chowdhury@yahoo.com

No comments

Powered by Blogger.