মাঠে মালদ্বীপ মনে লেবানন-সনৎ বাবলা,

কে একে নিভেছে দেউটি। টিম টিম করে জ্বলছে শেষটি, মালদ্বীপের সঙ্গে গ্রুপের শেষ ম্যাচটি। এটি জিতলেই আবার নিভে যাওয়া দেউটিগুলো মশাল হয়ে যেতে পারে বাংলাদেশের জন্য। সাফের স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখতে তাই 'লেবানন-ম্যাচে' সমর্পিত পুরো দল। ঢাকার ওই ম্যাচ দিচ্ছে দিল্লিতে লড়াইয়ের প্রেরণা, আত্মবিশ্বাস এবং মালদ্বীপ জয়ের জ্বালানি।
'বি' গ্রুপের প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের সঙ্গে ড্র তারপর নেপালের কাছে হেরে এখন বাংলাদেশের সেমিফাইনাল স্বপ্ন


মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। ফুটবলারদের আত্মবিশ্বাস ঠেকেছে তলানিতে। মালদ্বীপের বিপক্ষে আজ শেষ সুযোগটি নিয়েও তাই সংশয়। সব শঙ্কা চাপা দিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য খেলোয়াড়রা ফিরে যাচ্ছেন গত জুলাইয়ে বাংলাদেশ-লেবানন ম্যাচে। লেবাননকে ২-০ গোলে হারানোর স্মৃতি সামনে এনে মিঠুন চৌধুরী চেষ্টা করছেন নিজেকে উদ্দীপ্ত করতে, 'লেবাননে গিয়ে ৪-০ গোলে হেরে আসার পর আমাদের মনের অবস্থা খুব খারাপ হয়ে গিয়েছিল। চারদিকে সমালোচনা হচ্ছিল আমাদের নিয়ে। তখন আমরা খেলোয়াড়রা ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলাম ঢাকায় লেবাননের বিপক্ষে নিজেদের সেরাটা দেওয়ার জন্য। কালকের (আজকের) ম্যাচটিও সেই লেবাননের মতোই খেলতে হবে।' ওই ম্যাচের আগের দিন বুয়েট মাঠে প্র্যাকটিসে নিকোলা ইলিয়েভস্কি ফুটবলারদের পায়ে-মাথায় কিছু নেই বলে কড়া সমালোচনা করেছিলেন। জাতীয় দল ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান বাদল রায় প্রশ্ন তুলেছিলেন খেলোয়াড়দের কমিটমেন্ট নিয়ে। সব কিছু নীরবে মাথা পেতে নিয়ে মাঠে নেমেই তারা জবাব দিয়েছিল লেবাননকে ২-০ গোলে হারিয়ে। সেই ম্যাচের গোলদাতা মিঠুন দিল্লিতে ফিরিয়ে এনেছেন লেবানন-টনিক। তাতে সায় দিচ্ছেন আরেক গোলদাতা জাহিদ হাসান এমিলিও, 'ওই ম্যাচে আমরা যেভাবে জানবাজি রেখে খেলেছিলাম, সে রকম আরেকটি ম্যাচ চাই।'
এ নিয়ে খেলোয়াড়দের মধ্যেও পারস্পরিক আলাপ হয়েছে। লেবানন-টনিক গিলে তাঁরা সবাই একাট্টা হতে চান। হারের গ্লানি ও ক্ষোভ-বিক্ষোভ ভুলে তাঁরা তৈরি হচ্ছেন ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য। অধিনায়ক সুজনের দাবি, 'আমাদের দলের ক্ষমতা আছে, সেটা দেখিয়েছি আমরা বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে পাকিস্তান ও লেবাননকে হারিয়ে। দিল্লিতে সেটা আবার দেখাতে হবে, নইলে আমাদের সব শেষ হয়ে যাবে।' বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে ধরা পড়েছিল এই দলের অমিত সম্ভাবনা। মাত্র চার মাসের ব্যবধানে দিল্লিতে এসে দেখা যাচ্ছে এই দলে ছন্নছাড়া বাতাবরণ। দলটা নিষ্প্রাণ, একাট্টা হয়ে খেলার কথা ভুলে গেছে। সম্ভাবনার দীপগুলো নিভে গিয়ে যেন এক অকর্মার দলে পরিণত হয়েছে। এর কারিগর নিকোলা ইলিয়েভস্কি। এ মেসিডোনিয়ান কোচের হাতে দলটাকে তুলে দেওয়া হয়েছিল আরো শানিত করার জন্য। আর তিনি করেছেন ভোঁতা। দলের যেটুকু ক্ষমতা ছিল সেটুকুও তিনি কেড়ে নিয়েছেন। থামার নয় তাঁর পরীক্ষা-নিরীক্ষা। সাফ টুর্নামেন্টেও তা অব্যাহত রেখেছেন। তাতে দলের খেলোয়াড়রা হয়েছেন গিনিপিগ, তাঁরাও তটস্থ থাকেন কাঁচির ভয়ে।
কোচ নানা অজুহাত দাঁড় করাচ্ছেন। লিগ না খেলা, তাঁর পরিকল্পনা অনুযায়ী প্র্যাকটিস ম্যাচ না খেলানো ইত্যাদি ইত্যাদি। যদিও এগুলো ধোপে টিকছে না। দিল্লি আসার আগে লিগের প্রশ্নে বাফুফে সভাপতি সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন, 'কোচ প্রস্তুতির জন্য দল চাওয়ায় আমরা লিগ শুরু করিনি। আমরা চাইনি জাতীয় দলের ক্যাম্পের জন্য লিগ মাঝপথে বন্ধ রাখতে।' আসলে অতি পরীক্ষায় দলের পারফরম্যান্স যাওয়ায় কোচ এখন অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে পার পেতে চাইছেন। এ জন্য খেলোয়াড়াররাও আর ইলিয়েভস্কির ওপর ভরসা রাখতে পারছেন না। তাঁরা নিজেরাই মালদ্বীপ লড়াইয়ের আগে একাট্টা হচ্ছেন নিজেদের মতো অনুপ্রাণিত হয়ে। একজন তো মুখ ফুটে বলেই ফেলেছেন, 'কোচ মাস শেষে বেতন নেন, এক বছর ফুরোলে তিনি চলে যাবেন, কিন্তু আমরা থাকব, থাকবে দেশের ফুটবল। তাই নিজেদের মান বাঁচাতেই আমাদের সবটুকু উজাড় করে দিয়ে খেলতে হবে।' ফিরিয়ে আনতে হবে ঢাকার লেবানন-বধের সুখস্মৃতি। সেটাই পারে এই নিষ্প্রাণ দলে প্রাণ ফিরিয়ে আনতে। নেহেরু স্টেডিয়ামে এক বিস্ফোরক লাল-সবুজের জন্ম দিতে, যার বিস্ফোরণে মালদ্বীপ উড়ে যাবে আর বাংলাদেশ পেঁৗছে যাবে সেমিফাইনালে। তবে এ জন্য নিজেদের ম্যাচ জেতার পাশাপাশি নেপালের পাকিস্তান জয়ও কামনা করতে হবে। অন্তত ড্র তো লাগবেই।

No comments

Powered by Blogger.