মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার-সাকা চৌধুরীর দুটি আবেদন খারিজ-চার জামায়াত নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল ১১ ডিসেম্বর

কাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে সালাহউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলার বিচারকাজ স্থগিত রাখা এবং চেম্বারে বসে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) আমলে নেওয়ার আদেশ প্রত্যাহারের আবেদন সরাসরি খারিজ করে দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।একই সঙ্গে বিচার কার্যক্রম ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় সরাসরি সম্প্রচারসহ ছয়টি বিষয়ে সাকা চৌধুরীর করা পৃথক ছয়টি আবেদনের ওপর ১২ ডিসেম্বর শুনানির


দিন ধার্য করেছেন।এদিকে জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ও আবদুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ গতকাল সোমবার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করতে ব্যর্থ হয়েছে। আগামী ১১ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করতে রাষ্ট্রপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিচারপতি নিজামুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল গতকাল এসব আদেশ দেন।
এদিকে আদেশের পর সাকা চৌধুরী কোনো কথা না বললেও ট্রাইব্যুনাল থেকে বের হয়ে তাঁর সহধর্মিণী ফারহাত কাদের চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী এ ট্রাইব্যুনালে কোনো কথা বলেননি। ভবিষ্যতেও তিনি অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
ফরমাল চার্জ আমলে নেওয়ার আদেশ প্রত্যাহারের আবেদন খারিজ করে ট্রাইব্যুনালের আদেশে বলা হয়, রাষ্ট্রপক্ষে দাখিল করা তদন্ত প্রতিবেদন, ফরমাল চার্জ, নথিপত্র, তথ্য-প্রমাণাদি, সাক্ষীদের জবানবন্দি পর্যালোচনা করে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে প্রাথমিক অভিযোগ থাকায় ফরমাল চার্জ আমলে নেওয়া হয়েছে। ফরমাল চার্জ আমলে নেওয়ার আগে অভিযুক্তের বক্তব্য শোনার বিষয় বিধিতে নেই। ফলে ট্রাইব্যুনাল সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুপস্থিতিতে ফরমাল চার্জ আমলে নিয়ে বিধি ভঙ্গ করেনি।
বিচারকাজ স্থগিত রাখার আবেদন খারিজ করে বলা হয়, বিধি অনুযায়ী ট্রাইব্যুনাল বিচারকাজ পরিচালনা করছে। তাই ট্রাইব্যুনালের বিরুদ্ধে আইন ভঙ্গ করার অভিযোগ যথাযথ নয়। হাইকোর্টের বিচারপতিরা শুধুই হাইকোর্টে বিচার করবেন_সাকা চৌধুরীর এ আবেদনের বিষয়ে আদেশে বলা হয়, বিষয়টি নিষ্পত্তি করে হাইকোর্ট ইতিমধ্যে রায় দিয়েছেন। তাই বিচারকাজ স্থগিত রাখার আবেদন সরাসরি খারিজ করা হলো।
সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে আটকাদেশ প্রসঙ্গে আদেশে বলা হয়, ট্রাইব্যুনাল আইন পর্যালোচনায় দেখা যাবে, ফরমাল চার্জ আমলে নেওয়ার আগেই অভিযুক্তকে আটকের এখতিয়ার রয়েছে। অভিযুক্তের বিষয়ে তদন্তের স্বার্থেই আইন অনুযায়ী আটকাদেশ দেওয়া হয়েছে।
এরপর সাকা চৌধুরীকে ট্রাইব্যুনাল থেকে সব ডকুমেন্ট সোমবারের মধ্যে সংগ্রহ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। এ বিষয়ে আদেশে বলা হয়, এ সময়ের মধ্যে ডকুমেন্ট সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হলে ধরে নিতে হবে আসামিপক্ষে মামলা প্রস্তুত করার জন্য ডকুমেন্টের প্রয়োজন নেই।
গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় নিজামী-মুজাহিদসহ জামায়াতের চার নেতাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। তাঁদের উপস্থিতিতে প্রধান প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু ট্রাইব্যুনালে বলেন, 'আজ চারজনের বিষয়ে ফরমাল চার্জ দাখিলের দিন ধার্য ছিল। কিন্তু তা দাখিল করতে সময় দরকার। আমরা ৩টার মধ্যে দাখিল করতে চাই।'
জবাবে ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বলেন, '৩টার মধ্যে দাখিল করলে তো সেটা করবেন রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে। আমরা তো আজ পাচ্ছি না।' এরপর আগামী ১১ ডিসেম্বর ফরমাল চার্জ ও প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট দাখিল করতে রাষ্ট্রপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়।
ট্রাইব্যুনালের আদেশের পর প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, 'সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর দাবির আইনগত ভিত্তি নেই। এটা ট্রেড ইউনিয়ন নয়। আইন অনুযায়ী ট্রাইব্যুনাল চলবে। সাকা চৌধুরী শুনানি না করলে আইন অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে ট্রাইব্যুনালে আবেদন জানানো হবে।'

No comments

Powered by Blogger.