চামড়া শিল্পনগরীতে ইটিপি স্থাপনে দরপত্র অনুমোদন-ব্যয় হবে ৪৭৮ টাকা

সাভারে প্রস্তাবিত চামড়া শিল্পনগরীর বর্জ্য পরিশোধনের জন্য কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার প্লান্ট (সিইটিপি) স্থাপনের দরপত্র অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। ২০০৩ সালে একনেকে অনুমোদনের আট বছর পর প্রকল্পটি অনুমোদন পেল। ফলে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে প্রাক্কলিত দরের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি খরচ হবে। প্রকল্পটিতে মোট ব্যয় হবে ৪৭৭ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। চীনা কোম্পানি 'জেএলইপিসিএল-ডিসিএলজেভি' লিমিডেট প্রকল্পটি
বাস্তবায়ন করবে।গতকাল সোমবার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে কমিটির সদস্য ও ক্যাবিনেট সচিবসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবরা উপস্থিত ছিলেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০০৩ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে সিইটিপি প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। তখন এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৭৫ কোটি টাকা। ২০০৭ সালে প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে ৫৪৫ কোটি টাকা করা হয়; কিন্তু এরপরও প্রকল্পের কাজ শুরু না হওয়ায় ২০০৯ সালে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়নের দাবিতে একটি মামলা করে।
পরিবেশ আইনজীবী সমিতির করা মামলায় আদালত ২০১০ সালের জুলাইয়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার রায় দেন। একই সঙ্গে ছয় মাস পরপর প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি আদালতকে অবহিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়। আদালতের বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে না পেরে শিল্প মন্ত্রণালয় আদালতে সময় চেয়ে আবেদন করে। এ অবস্থায় সোমবার মন্ত্রিসভা কমিটি প্রকল্পটির দরপত্র অনুমোদন করেছে।
সূত্র জানায়, বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার (ডবি্লউটিও) বিধি অনুযায়ী, যেসব দেশে সিইটিপি নেই সেসব দেশের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য ২০১৪ সালের পর রফতানি করা যাবে না।
বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী বলন, বৈঠকে বেশ ক'টি প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সাভারে সিইটিপি প্রকল্পটি অত্যন্ত জরুরি। দীর্ঘদিন ধরে প্রকল্পটি ঝুলে ছিল। সেটির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সিইটিপি বাস্তবায়ন না হওয়ার অজুহাতে রাজধানী ঢাকা থেকে চামড়া শিল্প স্থানান্তরে বিলম্ব হচ্ছিল। আশা করছি, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে চামড়া শিল্প স্থানান্তরে আর কোনো সমস্যা থাকবে না। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, রোববার দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। বৈঠকের বিষয়ে পরে আপনাদের (সাংবাদিক) জানানো হবে। তবে তিনি মন্ত্রিপরিষদে রদবদল নিয়ে কোনো মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকেন।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্ম সচিব নুরুল করিম অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। তিনি বলেন, চীনের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান 'জেএলইপিসিএল-ডিসিএলজেভি' লিমিটেড সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে সিইটিপি স্থাপনের কাজ পেয়েছে। এতে ব্যয় হবে ৪৭৭ কোটি ৬৬ লাখ ৩১ হাজার টাকা।
এ ছাড়া বৈঠকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের ৩০ দশমিক ৯৫৬ কিলোমিটার সড়কের জরুরি মেরামত কাজের অতিরিক্ত কার্যাদেশের দরপত্র অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২৭ কোটি ৩৭ লাখ টাকা।
বাংলাদেশ রেলওয়ের রাজশাহী-রহনপুর সীমান্ত ও আমনুরা-চাঁপাইনবাবগঞ্জ সেকশনগুলো পুনর্বাসন প্রকল্পের মধ্যে আটটি কাজের ব্যয় বেড়েছে। এতে ব্যয় হবে ২ কোটি ৫২ লাখ টাকা।
উত্তরা আবাসিক শহর (তৃতীয় পর্ব) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ৫ ও ৬নং সেতু নির্মাণের দরপ্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে ১৩ কোটি ৯৪ লাখ ৭০ হাজার টাকায় ৫নং সেতু নির্মাণের কাজ পেয়েছে শামসুদ্দিন আহমেদ অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড। আর ১৩ কোটি ৫৩ লাখ ৯৫ হাজার টাকায় মেসার্স উদয়ন বিল্ডার্স ৬নং সেতু নির্মাণের কাজ পেয়েছে। আবুধাবি ও সৌদি আরব থেকে ১৪ লাখ মেট্রিক টন ক্রুড অয়েল আমদানি করা হবে। সরকারি পর্যায়ে (জিটুজি) পর্যায়ে আমদানি করা এ তেলের মূল্য ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা।
তিনি বলেন, উপজেলা পর্যায়ে আইসিটি ট্রেনিং অ্যান্ড রিসোর্স সেন্টার স্থাপনে টং ইয়ং সিস্টেম সিউল কোরিয়াকে ১৫ কোটি ৬০ লাখ ৫২ হাজার টাকায় পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া চীন সরকারের আর্থিক সহায়তায় শাহজালাল সার কারখানা আধুনিকায়ন প্রকল্পের কাজ পেয়েছে মেসার্স কমপ্যান্ট। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৪২২ কোটি টাকা। কাতার থেকে ৬০ কোটি ৯৫ লাখ ২ হাজার টাকা ব্যয়ে ১৫ হাজার টন ইউরিয়া সার আমদানির দর প্রস্তাব অনুমোদন করেছে ক্রয় কমিটি। প্রতি টন সারের দাম পড়বে ৫২৬ ডলার।

No comments

Powered by Blogger.