চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ-পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির মধ্য দিয়েই চলছে কার্যক্রম by নূপুর দেব,

ট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির মধ্য দিয়েই চলছে। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশের পরও বিরাজমান দুপক্ষের মধ্যে সাংগঠনিক ঐক্য আসেনি। আর দীর্ঘ ৯ মাস পেরিয়ে গেলেও বিষয়টির ব্যাপারে দুপক্ষের নেতাদের নিয়ে বৈঠক করতে পারেননি শেখ হাসিনা। সর্বশেষ গত ১ ডিসেম্বর থেকে উভয় পক্ষ আলাদা ব্যানারে আয়োজন করেছে মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার।


এদিকে নগর কমিটির বিরোধ ছড়িয়ে পড়েছে থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ে। এ অবস্থায় কেন্দ্র থেকে বিরোধ না মিটিয়ে আগামী সাত মাসের মধ্যে ওয়ার্ড, থানা ও নগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন করা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। কেন্দ্র থেকে এক সপ্তাহ আগে চট্টগ্রামে সম্মেলন করতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। আসন্ন সম্মেলন ঘিরে দুই পক্ষের বিরোধ আরো জটিল আকার ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন দলের নেতা-কর্মীরা।
নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর পক্ষে আছেন সাধারণ সম্পাদক কাজী ইনামুল হক দানু, সাবেক সাংসদ ইসহাক মিয়া, সাংসদ এম এ লতিফ, সাবেক ছাত্রনেতা আজম নাছির উদ্দিন প্রমুখ। অপরদিকে একই কমিটির সহসভাপতি ও সাংসদ নুরুল ইসলাম বিএসসির পক্ষে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী ডা. আফসারুল আমীন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী, কোষাধ্যক্ষ ও সিডিএ চেয়ারম্যান আব্দুচ ছালাম, সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরী প্রমুখ রয়েছেন।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের বিরোধ মেটাতে স্থানীয় নেতারা দফায় দফায় চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন। গত ২৭ জুলাই চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক তিন জেলার কর্মিসমাবেশে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন উপস্থিত ছিলেন। সেখানে এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও ডা. আফসারুল আমীনের নামে তাঁদের অনুসারীরা পাল্টাপাল্টি স্লোগান দিলে পুরো অনুষ্ঠানে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। সাহারা খাতুন বারবার চেষ্টা করেও পরিস্থিতি শান্ত করতে ব্যর্থ হন। চট্টগ্রাম সফরকালে কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও এলজিআরডি মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামসহ অন্য কেন্দ্রীয় নেতারাও চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরোধ নিষ্পত্তি করতে পারেননি। এর মধ্যে গত চার মাস আগে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাদের বিরোধের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলীয় সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে এ বিরোধ নিষ্পত্তির দায়িত্ব দিলেও এখনো বিষয়টির কোনো অগ্রগতি হয়নি।
প্রসঙ্গত গত ২৬ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছিলেন, নগর আওয়ামী লীগে যে সংকট দেখা দিয়েছে, তা নিরসনের জন্য সব নেতাকে ঢাকায় ডাকা হবে। এ সময় তিনি সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার নির্দেশ দেন। এর দুই মাস পর ২৬ এপ্রিল চট্টগ্রাম সফরকালে স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে আলাদাভাবে বৈঠকে না বসলেও কয়েকজনকে বলেছিলেন, শিগগিরই ঢাকায় তাঁদের সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি।
জানা যায়, ২০০৬ সালের ২৬ জুন নগর আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হলেও গত সাড়ে পাঁচ বছরে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়নি। আড়াই বছর আগেই কমিটির মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে। এ কমিটি নিয়ে বিগত সংসদ নির্বাচনের পর মহিউদ্দিন ও বিএসসির মধ্যে বিরোধ শুরু হয়। মেয়র নির্বাচনে মহিউদ্দিনের পরাজয়ের পর তাঁদের বিরোধ আরো বেড়ে যায়। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে একপক্ষ অপরপক্ষকে শোকজ, পাল্টা শোকজ, অব্যাহতি ও পাল্টা অব্যাহতি দিয়েছিল।
সম্মেলনের দিন-তারিখ ঘোষণা প্রসঙ্গে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী ইনামুল হক দানু কালের কণ্ঠকে বলেন, 'কেন্দ্র থেকে সম্মেলন করার চিঠি পাওয়ার পর দলীয় বর্ধিত সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, মহিউদ্দিন চৌধুরীর ঐক্যের বার্তা নিয়ে আমাদের কয়েকজন নেতা তাঁদের কাছে যাবেন। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ওয়ার্ড, থানা ও নগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন করার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। ঐক্যে কেউ সাড়া না দিলে বিষয়টি কেন্দ্রকে জানানো হবে।' কেন্দ্রীয় উদ্যোগ ও হস্তক্ষেপ ছাড়া চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের বিরোধ নিষ্পত্তি না হলে সম্মেলন সফল হবে না উল্লেখ করে সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, 'মেয়াদোত্তীর্ণ ও অপূর্ণাঙ্গ কমিটির সভাপতি মহিউদ্দিন চৌধুরীর ঐক্যের আহ্বানে আমাদের কেউই সাড়া দেবে না। ওয়ার্ড ও থানায় একাধিক কমিটি আছে আওয়ামী লীগের। মহিউদ্দিন-দানু এককভাবে সম্মেলন করার চেষ্টা করলে সংগঠন আরো দুর্বল হয়ে যাবে। আমরাও চাই কেন্দ্রীয় উদ্যোগে নগর আওয়ামী লীগের বিরোধের সুরাহা হোক।'

No comments

Powered by Blogger.