পুঁজিবাজারে ফিরছে না আস্থা, চলছে পতন

গুচ্ছ ঘোষণার অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক বেশ কিছু নিয়মকানুন শিথিল করার পরও ব্যাংকগুলো পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে আসছে না। প্রাতিষ্ঠানিক অন্য বিনিয়োগকারীরাও সক্রিয় হয়নি। শেয়ারের ঘাটতি পূরণে কম্পানি পরিচালকদেরও তেমন উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়ার দাবি মেটানো হলেও বাজারে এর প্রভাব নেই। ফলে সরকারের সর্বোচ্চ মহলের উদ্যোগে ঘোষিত গুচ্ছ ঘোষণার রেশ যেতে না যেতেই


বাজার আবার ফিরে গেছে দরপতনের ধারায়।বিনিয়োগকারীদের আস্থার অভাবেই বাজার স্থিতিশীল হচ্ছে না_এমন মন্তব্য করে শেয়ার কেলেঙ্কারির তদন্ত কমিটির এক সদস্য বলেছেন, কারসাজির বিরুদ্ধে সরকার তখনই যদি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিত, তাহলে বাজার হয়তো স্বাভাবিক হয়ে যেত, এত ঘোষণা ও প্রণোদনার দরকার হতো না।
চলতি সপ্তাহের প্রথম দুই দিনে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সূচক কমেছে ১৮৪ পয়েন্ট। গতকাল সোমবার ডিএসইতে ২৪৬টি কম্পানির মধ্যে ২১৩টিরই শেয়ারের দাম কমে যায়। দুই স্টক এক্সচেঞ্জেই গতকাল বেশির ভাগ কম্পানির শেয়ারের দাম কমেছে। ডিএসইতে সাধারণ মূল্যসূচক আগের দিনের তুলনায় ১০৯.৫৫ পয়েন্ট কমে ৫০৫১.৬৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক ২২৭.৯৭ পয়েন্ট কমে ১৪৩৭৫.৭৯ পয়েন্টে স্থির হয়েছে।
যথারীতি রাস্তায় নেমেছেন বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ। বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের ব্যানারে তাঁরা বিক্ষোভ করেন ডিএসইর সামনের সড়কে। বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলে তাঁদের বিক্ষোভ।
শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির তদন্ত কমিটির অন্যতম সদস্য ও বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বলেন, 'সময়ের এক ফোঁড় অসময়ের দশ ফোঁড়। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন দেওয়ার সময় যে পরিবেশ ছিল তখন যদি আমাদের সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করা হতো তাহলে হয়তো বাজার ভালো হয়ে যেত। প্রণোদনাসহ এত বেশি কিছুর প্রয়োজন হতো না। এখন তো অনেক কিছু করার পরও লোকজনের আস্থা ফিরে আসছে না। বর্তমানে ব্যক্তি শ্রেণীর ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা সবাই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। তাঁদের ফিরিয়ে আনতে হবে।'
অপ্রদর্শিত অর্থ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়ার পরও এ টাকা শেয়ারবাজারে আসার ব্যাপারে সন্দেহ রয়েছে এই অর্থনীতিবিদের। তাঁর মতে, এখন প্রশ্ন করা হবে না বলা হলেও পরে বিপদ হতে পারে_এ আতঙ্কে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে আগ্রহী হবেন না কালো টাকার মালিকরা। বাংলাদেশ ব্যাংক বেশ কিছু ছাড় দিলেও বাড়তি অর্থ না থাকার কারণে ব্যাংকগুলো কতখানি এগিয়ে আসতে পারবে তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করলেন তিনি।
শেয়ারবাজারের সাম্প্রতিক হাল বর্ণনা করতে গিয়ে ইনভেস্টরস ফোরাম অব চিটাগাংয়ের আহ্বায়ক আছলাম মোরশেদ বলেন, তদন্ত কমিটি যাঁদের দায়ী করে প্রতিবেদন দিয়েছিল তাঁদের শাস্তি না দিয়ে বরং ক্ষেত্রবিশেষে পুরস্কৃত করা হয়েছে। এভাবে পুঁজিবাজারে স্বচ্ছতা আনা যাবে না।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সদ্য বিদায়ী সভাপতি ফখর উদ্দিন আলী আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ডিসেম্বরে ব্যাংকগুলো তাদের হিসাব ক্লোজ করছে। এ সময় তারা শেয়ারবাজারে নতুন করে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হবে না। তবে বছর শেষে নিজেদের মুনাফা দেখাতে অবশ্যই ব্যাংকগুলো নিজেদের শেয়ারে বিনিয়োগ করে দর বৃদ্ধি ঘটাবে। এটা তারা এ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে শুরু করতে পারে। তখন হয়তো বাজার আবার স্বাভাবিক হয়ে উঠবে। তিনি আরো বলেন, এসইসি ঘোষিত ২১ দফার বাস্তবায়ন ঘটতে কিছুটা সময় প্রয়োজন। এ জন্য এখনই বিনিয়োগকারীদের হতাশ হলে চলবে না। দরপতনের বাজারে যাঁরা শেয়ার বিক্রি করবেন তাঁরা ক্ষতির মুখে পড়বেন। যাঁরা ধরে রাখবেন তাঁরা লাভবান হবেন।
ব্র্যাক ইপিএলের বিনিয়োগকারী বি এম কামাল হোসেন বলেন, ডিসেম্বর ক্লোজিং মাস। সাধারণত এ সময় ব্যাংকগুলো শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে না। এ খবর বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। তাতে আগে থেকে বিরাজমান শঙ্কা আরো বৃদ্ধি পায়। ঘটে দরপতন।
গতকাল ডিএসইতে মোট লেনদেনের পরিমাণ দাঁড়ায় ২২৪ কোটি টাকা। এটা আগের দিনের তুলনায় ১৩ কোটি টাকা বেশি। দিন শেষে ডিএসইতে লেনদেনে শীর্ষে থাকা ১০টি প্রতিষ্ঠান হলো : ফু ওয়াং সিরামিকস, বেঙ্মিকো, যমুনা অয়েল, সিটি ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, ইউনাইটেড এয়ার, গ্রামীণফোন, বিএসসি, বেক্সিমকো ফার্মা ও লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক ২২৭.৯৭ পয়েন্ট কমে ১৪৩৭৫.৭৯ পয়েন্টে দাঁড়ায়। সিএসইতে লেনদেন হওয়া ১৬৯টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৫৩টিরই দাম কমেছে। বেড়েছে মাত্র ১১টির, আর অপরিবর্তিত রয়েছে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম। স্টক এক্সচেঞ্জটিতে গতকাল ৩২ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে, যা আগের দিনের তুলনায় চার কোটি টাকা বেশি।
আগের দিন রবিবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে সাধারণ মূল্যসূচক ৭৫ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছিল ৫১৬১ পয়েন্টে। এদিন মোট লেনদেনের পরিমাণ ছিল ২১০ কোটি ২০ লাখ টাকা।

No comments

Powered by Blogger.