মামুনের জ্বর এবং অনড় কোচ

দিলি্ল থেকে প্রতিনিধি : পারফরম্যান্সটা যখন ভালো হচ্ছিল তখনই জ্বরের কবলে পড়ে গেলেন তিনি। সেমিফাইনালের ভাগ্য নির্ধারণী ম্যাচটিতেও কারিগর থাকবেন মাঠের বাইরে। তিনি মামুনুল ইসলাম, তাঁর ভাগ্য বিপর্যয়ের সঙ্গে জড়িয়ে থাকল বাংলাদেশ দলের সেমিফাইনাল ভাগ্যও!নেপালের বিপক্ষে ম্যাচের আগের দিন সকালেও মামুন ছিলেন ইলিয়েভস্কির আক্রমণের মূল জ্বালানি। রাতে হঠাৎ জ্বরে পড়লে এই মিডফিল্ডারের খেলার সম্ভাবনা মুছে
যায়। তার ফল হাতেনাতেই পেয়েছে বাংলাদেশ ম্যাচ হেরে। গতকাল জ্বর ছিল না, তবে কুঁকড়ে ছিলেন তিনি প্রচণ্ড গলা-ব্যথায়। শরীরেও তিনি সেভাবে জোর পাচ্ছেন না, 'মূল সমস্যা হচ্ছে শরীর খুব দুর্বল হয়ে গেছে। জ্বরের বেগে এক রাত ঘুমাতেই পারিনি। তার পরও আজ (গতকাল) খাওয়া-দাওয়া করব ভালোভাবে।' এই দুর্বল শরীরে আজ মালদ্বীপের বিপক্ষে তাঁকে খেলানোর ঝুঁকি নেবেন না নিকোলা ইলিয়েভস্কি। গত দুপুরে তিনি যে একাদশ সাজিয়েছেন সেখানেও নেই মামুনের নাম। রাখতে পারলে কোচের অন্তত মধ্যমাঠ নিয়ে দুশ্চিন্তাটা একটু কমত, 'এখানে আসার আগে সে আমার অধীনে চারটি ম্যাচ খেলেছে, সেগুলোতে অত ভালো পারফরম্যান্স দেখাতে পারেনি। এখানে প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে দারুণ খেলেছে। গোলের দুটো দুর্দান্ত সুযোগ তৈরি করেছিল সে। যখন ভালো খেলতে শুরু করেছে তখনই জ্বরে পড়ে গেল।' এই মেসিডোনিয়ান কোচের অধীনে মামুনুল চারটি ম্যাচ খেলেছেন বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে। ম্যাচগুলোতে তাঁর সেরাটা দেখাতে না পারলেও সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে এই মিডফিল্ডারের দু-দুটো দুর্দান্ত পাসে কেঁপে উঠেছিল পাকিস্তান ডিফেন্স। মিশু ও মিঠুন গোল বের করতে ব্যর্থ হওয়ায় আজ সেমিফাইনালের পথে কঠিন হিসেবের মুখে দাঁড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ। ব্যাপারটা আরো জটিল হয়ে যাচ্ছে ইলিয়েভস্কির গোঁয়ার্তুমিতে। পাকিস্তানের বিপক্ষে ওই ম্যাচে অভিষেক হওয়া শাহেদ প্রথমার্ধে চমৎকার খেলেও চলে গেছেন কোচের গুডবুকের বাইরে। কারণ সাইড-লাইন থেকে দেওয়া তাঁর নির্দেশ একবার পালন করতে পারেননি। যতটা না প্রতিপক্ষ তার চেয়ে বেশি এই মেসিডোনিয়ান কোচের গোঁয়ার্তুমিতেই আজ দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে বাংলাদেশ দলের।
এই কঠিনকে জয় করে মালদ্বীপকে হারানোর ব্রত নিয়েছে দল। উদ্বুদ্ব হচ্ছে লেবানন-টনিকে। সতীর্থরা একাট্টা হয়ে নতুন স্বপ্নে শামিল হয়েও মামুনে আটকে যাচ্ছেন। 'এই ম্যাচে তাকে খুব দরকার ছিল। আমরা মালদ্বীপের বিপক্ষে আল-আউট খেলাব, তখন মাঝমাঠে মামুন ভাইয়ের মতো অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার থাকলে খেলাটা আরো ভালো হতো। কিন্তু দুর্বল শরীর নিয়ে তো খেলতে পারবে না'_আফসোসের সুর স্ট্রাইকার মিঠুনের গলায়। আজকের কঠিন ম্যাচে পুরো শক্তির দল নিয়ে মাঠে নামতে না পারার আফসোস কমবেশি সবাইকে পোড়াচ্ছে, আফসোসটা সবচেয়ে বেশি মামুনেরই। দলের এমন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তাঁর মাঠের বাইরে থাকাটাও যন্ত্রণাদায়ক, 'এটা আমাদের জন্য খুব কঠিন ম্যাচ। খেলতে পারলে সর্বস্ব দিয়ে নিজে চেষ্টা করতাম। কপালে কী আছে জানি না। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি, এটা যেন আমাদের শেষ ম্যাচ না হয়।' সতীর্থরাও সেভাবে পণ করেছেন, সেরা খেলাটা খেলে গতবারের সেমিফাইনালিস্ট বাংলাদেশকে অন্তত সেই জয়গায় তুলে নেওয়ার প্রতিজ্ঞা করেছেন। মুখের সেই প্রতিজ্ঞা মাঠে অনূদিত হলেই মামুনুল ইসলামের সেমিফাইনাল খেলা হবে।

No comments

Powered by Blogger.