ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয় by কামরুল হাসান,

হুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের ওপর বিকেলের মরে যাওয়া রোদ। তখনো একান্তে অনুশীলন করে যাচ্ছেন স্টুয়ার্ট ল আর তাঁর শিষ্যরা।প্রেস বক্সে দাঁড়িয়ে সেটা দেখতে দেখতেই হঠাৎ চোখ গেল উল্টো দিকে পাহাড়তলীর সাগরিকা রোডে। বিশাল জটলা, হুড়োহুড়ি। দেখে এক সহকর্মী বললেন, অনুশীলন দেখার জন্য এত মানুষের ভিড়! ভুলটা ভাঙালেন গেটে দায়িত্বরত একজন এসে। ভিড়টা অনুশীলন দেখার জন্য নয়, পরের দিন, মানে আজকের ম্যাচের


টিকিটের জন্য। অনুশীলন সেরে বাংলাদেশ দল বিদায় নিয়েছে, কিন্তু সন্ধ্যার অন্ধকার ঘনিয়ে আসা শেষ বিকেলেও সেই জটলা কমেনি। দেখে কে বলবে যে দলের ম্যাচ দেখার জন্য সমর্থকদের এমন হুড়োহুড়ি তাদের অবস্থা মৃত্যুপথযাত্রী রোগীর মতো! নিজের মাঠে পরপর দুটো ম্যাচ হেরে প্রতিপক্ষের হাতে আগেই সিরিজ দিয়ে রেখেছে তারা। আর সেই প্রতিপক্ষকেও এমন ভয়ংকর দেখাচ্ছে যে সম্মান বাঁচানোর শেষ ম্যাচে অন্য রকম কিছু দেখতে চাইলে সমর্থকদের পৃথিবীর সবচেয়ে আশাবাদী মানুষদের তালিকায় নাম লেখাতে হবে!
মজার ব্যাপার, আমাদের ক্রিকেট সমর্থকদের নামগুলো হয়তো শুরু থেকেই ওই তালিকায় আছে। স্কুল পালানো কিশোর থেকে শুরু করে টিকিটের লাইনের ভিড় সামলানো মধ্যবিত্ত চাকরিজীবী_সবাই! এবং এরাই হয়তো আমাদের ক্রিকেটারদের সবচেয়ে বড় প্রেরণা। মাহমুদ উল্লাহ এদের কথা বলতে পারতেন। হয়তো ভুলে গেছেন। কিংবা আগের দুই ম্যাচে লজ্জাজনক হারের স্মৃতি মন থেকে তাড়াতে না পেরে কিছুটা অগোছাল। জিততে হলে তো নিজেদের উদ্দীপ্ত করার মতো কোনো প্রেরণা লাগবে, আপনাদের প্রেরণা কী_এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশের সহ-অধিনায়ক এমনভাবে আশপাশে তাকালেন যেন সেখানেই প্রেরণা খুঁজছেন! অবশ্য শেষ পর্যন্ত তাঁর জবাবটা অতটা অগোছাল হয়নি, 'যখন কোনো কিছুই ঠিকঠাক হয় না তখন নিজেরাই নিজেদের অনুপ্রেরণা হতে হয়। আমরাও সেই চেষ্টাই করছি। একসঙ্গে কথা বলছি, একজন অন্যজনের ভুল ধরিয়ে দিচ্ছি। দেখবেন কাল (আজ) মাঠে সেটার প্রতিফলন হবে।' শুনে যে কারো ভালো লাগবে। আরো ভালো লাগত যদি সহ-অধিনায়ক নিজে থেকে নাসির হোসেনের নামটাও বলতেন। অন্য কারো কিছুই ঠিকঠাক হচ্ছে না, কিন্তু ২০ বছর বয়সী এই তরুণের তো হচ্ছে। যে পাকিস্তানি বোলিং লাইনআপ সামলাতে গিয়ে বারবার বাংলাদেশের টপ আর মিডল অর্ডার ধসে পড়ছে সেখানে দুই ম্যাচেই নাসির দলের সর্বোচ্চ স্কোরার। বাকি সবার ভীষণ রান-খরার মধ্যেও তাঁর জ্বলজ্বল করা একটি সেঞ্চুরি। আগের ম্যাচে যেটা করার পর নাসির নিজেই বলেছিলেন তিনি কোনো ধরনের চাপ নিয়ে খেলেননি। দলের বাকিরা পারছে না কারণ তাঁরা সবাই অতিরিক্ত চাপ নিয়ে নিচ্ছেন! সেটা মাহমুদ উল্লাহকে মনে করিয়ে দেওয়ার পর তবেই সতীর্থের জন্য প্রশংসার ফুলঝুরি ছুটল, 'হয়তো ও সত্যি কথাই বলেছে। আমাদের সবার উচিত ওর কাছ থেকে শিক্ষা নেওয়া। ওর ব্যাটিংটা আমাদের প্রেরণা হতে পারে। আসলে হওয়া উচিত। বিশেষ করে আমাদের টপ অর্ডারের জন্য।' দুটো ম্যাচেই আমাদের তামিম ইকবাল-ইমরুল কায়েস আর শাহরিয়ার নাফিসরা ব্যর্থ হয়েছেন নিদারুণভাবে। যদিও কাল সবার আগে অনুশীলনে চলে আসা তামিম ইকবালের নেটে ব্যাটিং দেখতে দেখতে মাহমুদ উল্লাহ শুনিয়েছেন আশার কথা, 'ও অনেক চেষ্টা করছে নিজেকে ফিরে পাওয়ার। পরিশ্রমও করছে। দেখবেন কাল (আজ) আমরা একটা ভালো ওপেনিং পাব ওর কাছ থেকে।'
এটা যদি সুসংবাদ হয় তাহলে দুঃসংবাদ হচ্ছে অন্য ওপেনার ইমরুলের ফিটনেস নিয়ে শঙ্কা। কুঁচকির পেশিতে টান পড়ায় আজ ইমরুলের না খেলাটা প্রায় নিশ্চিত। এমনকি বিসিবির চিকিৎসক দেবাশিস চৌধুরী জানিয়েছেন, প্রথম টেস্টেও হয়তো মাঠের বাইরে বসে থাকতে হবে বিশ্বকাপে টানা দুই ম্যাচে বাংলাদেশের এই জয়ের নায়ককে। যদি তাই হয় তাহলে তামিমের সঙ্গে ওপেন করতে পারেন আবারও শাহরিয়ার নাফিস। সে ক্ষেত্রে আজকের ম্যাচে দলে জায়গা হতে পারে অলক কাপালি বা প্রথম ম্যাচে তিন নম্বরে ব্যাট করা নাইম ইসলামের। সুযোগটা কাজে লাগিয়ে তাঁদের কেউ কি পারবেন বাংলাদেশকে একটা জয় এনে দিতে? ১৯৯৯ বিশ্বকাপের সেই অবিস্মরণীয় জয়ের পর পাকিস্তানের বিপক্ষে টানা ২১টি ম্যাচ হারতে দেখে সমর্থকরাও তো কিছুটা ক্লান্ত!
কাপালি কিংবা নাইমকে কথা বলার জন্য পাওয়া যায়নি। তাঁদের হয়ে যেন উত্তরটা দিলেন সাবেক অধিনায়ক সাকিব আল হাসান, 'চিন্তা করবেন না। হয়ে যাবে।'
ধন্য আশা কুহকিনী!

No comments

Powered by Blogger.