দুশ্চিন্তা টপ অর্ডারে by ইমাম হোসাইন সোহেল,

বাংলাদেশ দলের অনুশীলন শুরুর নির্ধারিত সময় দুপুর দেড়টা; কিন্তু সাড়ে ১২টা না বাজতেই ব্যাট নিয়ে নেটে চলে এলেন অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। এর একটু পরই এলেন ওপেনার তামিম ইকবাল। সাড়ে ১২টা থেকে দেড়টা, এই এক ঘণ্টা টানা ব্যাটিং অনুশীলন করে গেলেন বাংলাদেশ দলের নির্ভরযোগ্য দুই ব্যাটসম্যান। সিরিজ শুরু হওয়ার আগেই পাকিস্তানিরা যেভাবে পালের হাওয়া কেড়ে নিয়েছে, তা থেকে ফিরে আসতেই দু'জনের এ নিরন্তর প্রচেষ্টা।


টি২০ ও প্রথম দুই ম্যাচে ব্যাটসম্যানদের বাজে ব্যাটিং প্রদর্শনীর কারণে গতকাল চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামেও সারাদিন আলোচনার কেন্দ্রে ছিল বাংলাদেশের ব্যাটিং। টপ অর্ডারের ব্যর্থতাই এখন বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তার কারণ।
পাকিস্তানের বিপক্ষে এ সিরিজে বাংলাদেশের টপ অর্ডার শুরু থেকেই ব্যর্থ। টি২০ বলুন আর প্রথম দুটি ওয়ানডে বলুন, টপ অর্ডারের ব্যর্থতার কারণে মিসবাহদের সামনে প্রতিরোধই গড়তে পারেননি মুশফিকরা। হাঁটুর ইনজুরি থেকে পুরোপুরি সেরে উঠতে না পারায় তামিমকে খেলানো হয়নি টি২০ ম্যাচে। অফ ফর্মের কারণে প্রথম ওয়ানডেতে বিশ্রাম দেওয়া হয়েছিল ইমরুল কায়েসকে। সুযোগ পেয়েছিলেন নাঈম ইসলাম। দীর্ঘদিন দিন পর ইনিংস ওপেন করতে পেরেছিলেন শাহরিয়ার নাফীস; কিন্তু কোনো পরিবর্তনই কাজ দেয়নি। ক্রিজে নামার পরই যেন সাজঘরে ফিরতে তাড়াহুড়ো শুরু করে দেন ব্যাটসম্যানরা। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে যাও মিডল অর্ডারে সাকিব আর নাসির রুখে দাঁড়াতে পেরেছিলেন, প্রথম ওয়ানডেতে তো তাও করতে পারেনি। ৩১ রানে ৫ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর প্রথম ওয়ানডেতে শেষ পর্যন্ত ৯১ রানে অল আউট হয়েছিল বাংলাদেশ। টপ অর্ডারের ব্যর্থতার খতিয়ান দেখুন, দুই ম্যাচে তামিমের সংগ্রহ ৪ (০+৪) রান, ইমরুলের সংগ্রহ ৬ রান, নাফীসের সংগ্রহ ১৪ (৭+৭), মুশফিকের সংগ্রহ ১২ (১১+১) রান। নাঈম ইসলামকে প্রথম ম্যাচ খেলানো হলেও তাকে দ্বিতীয় ম্যাচে আর খেলানো হয়নি। দ্বিতীয় ম্যাচে মিডল অর্ডারে সাকিব-নাসির ঘুরে না দাঁড়ালে প্রথম ম্যাচের মতো লজ্জায় পড়তে হতো বাংলাদেশকে। যে উইকেটে টপ অর্ডার উইকেট বিসর্জন দিয়ে এসেছেন, সে উইকেটেই নাসির সেঞ্চুরি করে বুঝিয়ে দিয়েছেন, আসলে চেষ্টা করলে সবই সম্ভব। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সিরিজের তৃতীয় ম্যাচের আগে গতকাল দলের সহকারী অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদও বললেন একই কথা, 'উইকেট ছিল খুবই ভালো। নাসির বুঝিয়ে দিয়েছেন এ উইকেটে কীভাবে ধৈর্য ধরে খেলতে হয়। কীভাবে একটি ইনিংসকে দীর্ঘ করা যায়। তার কাছ থেকে আমাদের শিখতে হবে।' ঘুরে-ফিরে বারবার আলোচনায় আসছিল টপ অর্ডারের ব্যর্থতা। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ অজুহাত দাঁড় করালেন, 'পাকিস্তানের বোলিং আক্রমণ বেশ শক্তিশালী। তারা খুবই ভালো বল করছে। তবে টপ অর্ডারে যারা খেলছেন, তারা বেশ পরিশ্রম করছেন এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে।' বাংলাদেশের বাজে পারফরম্যান্সও পাকিস্তানিদের সাফল্য পেতে সহায়তা করছে। তবে তা পুরোপুরি মানতে রাজি নন পাকিস্তান অধিনায়ক মিসবাহ। তিনি বলতে চাইলেন, 'আমরা পারফর্ম করেই সাফল্য পাচ্ছি।' বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা খারাপ করল নাকি ভালো করল, তা নিয়ে ভাবতে রাজি নন তিনি, 'আমরা তাদের (বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের) নিয়ে ভাবছি না। শুধু নজর দিচ্ছি নিজেদের পারফরম্যান্সের ওপর।' চট্টগ্রামে এসে সাফল্য পেতে শুধু সৌভাগ্যই নয়, ব্যাটসম্যানদেরও যে ভালো করতে হবে, শেষে সেটাই জানিয়ে গেলেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ।

No comments

Powered by Blogger.