সরেজমিন মাওয়া ফেরিঘাট-পথে পথে সক্রিয় প্রতারক চক্র by আতাউর রহমান,

মাদারীপুরের শিবচরের ক্ষুদ্র কসমেটিক ব্যবসায়ী সাবির উদ্দিন প্রায় ৯ হাজার টাকা নিয়ে মালপত্র কেনার জন্য ঢাকার চকবাজারের উদ্দেশে রওয়ানা দেন। মাওয়া ফেরিঘাটে তার প্যান্টের পকেট কেটে পুরো টাকাটাই নিয়ে গেছে পকেটমার চক্র। ইলিশ পরিবহন কাউন্টারের পাশে নিজের কাটা পকেট দেখিয়ে তিনি বলেন, 'লঞ্চ থেকে নেমে বাস পর্যন্ত আসতেই সব শেষ।


' ঈদে বাড়ি ফেরার সময় দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ মাওয়া ঘাটে যেমন অজ্ঞান পার্টি আর পকেটমার চক্রের খপ্পরে পড়েছিলেন, তেমনি ঢাকায় ফেরার পথেও এসব চক্রের খপ্পরে পড়ছেন তারা। মাওয়া ফেরিঘাটে ঢাকায় ফেরা মানুষের সঙ্গে রয়েছে নানা ভোগান্তি আর লঞ্চ, ফেরি ও সি-বোর্ডে প্রতারণা। সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মাওয়া ফেরিঘাট এলাকা সরেজমিন ঘুরে প্রতারণা আর ভোগান্তির এমন চিত্র দেখা গেছে। তবে ফেরিঘাটে প্রতারক আর দুর্বৃত্তদের ঠেকাতে পুলিশ তৎপর বলে সমকালকে জানিয়েছেন মুন্সীগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার শফিকুল ইসলাম।
ঘাট সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রতি ঈদেই মাওয়া ফেরিঘাট দিয়ে ৩ থেকে ৫ লাখ ঘরমুখো মানুষ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে যায়। আবার ঈদের পর ফিরে আসে একই পথে। তবে ভোগান্তি আর হয়রানি তাদের পিছু ছাড়ে না। এসবের মধ্যেই পকেটমার, অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টিসহ নানা প্রতারক চক্রের ভয়ে ভীত থাকতে হয় তাদের।
মাওয়া ফেরিঘাটের স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঈদের সময় যাত্রীদের ভিড়ে অজ্ঞান পার্টি, থুথু পার্টি, মলম পার্টি ও পকেটমার চক্র বেশি সক্রিয় ছিল। তবে এখনও মানুষের ঢাকা ফেরার ভিড়ে এ চক্রের তৎপরতা থেমে যায়নি। যাত্রীরা নানা প্রতারণার শিকার হলেও নতুন ঝামেলা এড়াতে তারা পুলিশের কাছে পর্যন্ত অভিযোগ করেন না।
ঘাটের কয়েকটি সূত্র জানায়, ডাব বিক্রেতা, ঝাল-মুড়ি-চানাচুর, বাদাম বিক্রেতাসহ হালকা খাবারের ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতার বেশে অজ্ঞান পার্টি ও মলম পার্টির সদস্যরা তৎপর থাকে। তাদের মধ্যে পান-সিগারেট বিক্রেতার বেশে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা বেশি তৎপর। মাওয়া চৌরাস্তা থেকে ঘাটের প্রতিটি ফেরি, লঞ্চ ও অপেক্ষমাণ বাসে তাদের আনাগোনা। ঈদে মাওয়া ফেরিঘাট থেকে শুরু করে মাদারীপুরের কাওড়াকান্দি, কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাট ও শরীয়তপুরের মাঝিকান্দি ঘাট পর্যন্ত এসব চক্রের সদস্যরা সক্রিয়।
তবে এমন অভিযোগ মানতে রাজি নন মাওয়া থেকে কাওড়াকান্দি চলাচলকারী ফেরি বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনে সিদ্ধ ডিম বিক্রেতা আক্কাছ মিয়া। তার দাবি, তারা লঞ্চে ও ফেরিতে নিয়মিত ডিম বিক্রি করেন। ঈদের সময় নতুন হকাররা এসব অপকর্মের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে।
যাত্রীরা জানান, ঈদের আগে যাত্রাপথে পকেটমার, অজ্ঞান ও মলম পার্টির সদস্যদের ব্যাপারে যাত্রীদের পুলিশের পক্ষ থেকে সতর্ক করা হলেও ফেরার পথে পুলিশের এমন তৎপরতা চোখে পড়ে না। ঈদের আগে পুলিশের বিজ্ঞপ্তিতে রেলস্টেশনে, বাস ও লঞ্চ টার্মিনালে এবং চলার পথে পাশের যাত্রী, অপরিচিত কোনো ব্যক্তি, হকার কিংবা ফেরিওয়ালার কাছ থেকে খাবার সামগ্রী, চা-সিগারেট, পান-বিড়ি, কলা-রুটি, চকোলেট, শরবত, জুস, কোমল পানীয় বা অন্য কোনো খাবার গ্রহণ না করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। পুলিশ সদস্যরা ঘাটের অপেক্ষমাণ বাসে ও ফেরিতে তা প্রচার করে যাত্রীদের সতর্ক করেছিল। তবে ঢাকায় ফেরার পথে এমন কোনো তৎপরতা চোখে পড়েনি। মাওয়া ঘাটে পকেটমার ও অজ্ঞান পার্টির তৎপরতা ঠেকাতে পুলিশের ভূমিকার ব্যাপারে জানতে চাইলে লৌহজং থানার ওসি মোঃ আবদুল্লাহ সমকালকে বলেন, যাত্রীদের নিরাপত্তায় পুলিশের পক্ষ থেকে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ঈদের আগে যাত্রী নিরাপত্তায় ঘাটে ২৪ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করেছে পুলিশ। এখনও ঘাটে পর্যাপ্ত পুলিশ রয়েছে। মুন্সীগঞ্জ জেলার পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, ঘাটে সবসময় পুলিশ থাকে। কোনো যাত্রী ঝামেলায় বা প্রতারকদের খপ্পরে পড়লে তা পুলিশকে অবহিত করার জন্য তারা অনুরোধ করেন। তবে প্রতারকের খপ্পরে পড়া শরীয়তপুরের মাঝিরকান্দি ঘাটের যাত্রী আবদুল আজিজ সমকালকে বলেন, ঘাটে লঞ্চ ভেড়ার পর তার একটি ব্যাগ খোয়া যায়। ব্যাগে তার পোশাক পরিচ্ছদ ছিল। বিষয়টি জানিয়ে ঘাটে অবস্থানরত পুলিশ সদস্যদের অবহিত করলে তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বিষয়টি থানায় গিয়ে জানাতে বলেন। ওই যাত্রী বলেন, তিনি লৌহজং থানা চেনেন না। তাছাড়া ঢাকায় ফেরার তাড়ায় তার আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি।  

No comments

Powered by Blogger.