জাপানকে ৩৮-এই শেষ করে দিলেন সালমা-শুকতারা by সামীউর রহমান

দীর্ঘস্থায়িত্বের জন্য জাপানি পণ্যের সুনাম আছে বিশ্বজোড়া। কিন্তু এই গুণটাই খুব সম্ভবত অনুপস্থিত জাপানের মহিলা ক্রিকেট দলে। অন্তত বাংলাদেশ মহিলা দলের বিপক্ষে নিজেদের প্রথম ম্যাচে তাদের মাত্র ৩৮ রানে গুটিয়ে যাওয়ায় সেটাই মনে হয়। দুই ইনিংস মিলিয়ে এক শ ওভারের ম্যাচ, কিন্তু স্থায়ী হলো মাত্র ৩৪ ওভার! নাগরিক কোলাহলের বাইরে, বিকেএসপির প্রাকৃতিক পরিবেশে সূর্যের আলো ঠিকমতো ফুটে ওঠার আগেই অল আউট সূর্যোদয়ের দেশের মেয়েরা।
মাত্র ৪ ওভার ৪ বলে সেই রান তাড়া করে দুই দলের ক্রিকেটাররা যখন মধ্যাহ্নভোজ সারছেন, অনেকে তখন হয়তো সকালের নাশতা সেরে চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছেন।
হেমন্তের হিম হিম ভোরের আলস্য ও রাজধানীর অফিস-সময়ের যানজটের কল্যাণে নগরের প্রান্তসীমায় অবস্থিত বিকেএসপিতে অনেকে পেঁৗছে যাওয়ার আগেই যে খেলা শেষদৃশ্যে! টসে জিতেছিল জাপান। ক্রিকেটের অমর বুড়ো ডাবি্লউ জি গ্রেসের সেই বিখ্যাত উক্তি জাপানের মহিলা ক্রিকেটারদের কান অবধি পেঁৗছেছে কি না জানা নেই। তাই সেই আগে ব্যাট করার উপদেশ অনুযায়ীই হোক কিংবা ক্রিকেটপ্রজ্ঞার অভাব, শিশিরভেজা পিচে এমা কুরিবায়াশি বেছে নিলেন ব্যাটিং। অধিনায়কের সিদ্ধান্তকে সম্মান দিতেই দুই ওপেনার খেলছিলেন রয়েসয়ে। প্রথম ১১ ওভার, যার ১ ওভার বাদে বাকি ১০টা ওভারই পাওয়ার প্লে, সেখানে রান এলো মাত্র ২১। যদিও উইকেটের ঘরটা ছিল ফাঁকাই। পেস বোলিং দিয়ে যখন কাজ হচ্ছে না সালমা নিজেই আসলেন তাঁর অফব্রেক বোলিংয়ের অস্ত্র নিয়ে। বোলিং পরিবর্তনেই এল সাফল্য, ১২ রানে লেগ বিফোরের ফাঁদে পা দিয়ে ফিরে গেলেন মারিকো ইয়ামামোতো। এর পরই জাপানি ক্রিকেটারদের 'হারাকিরি'র শুরু। দুই প্রান্ত থেকে সালমা ও শুকতারা রহমানের অফস্পিনে ভর করেছিল সামুরাই যোদ্ধার তরবারির ধার, তাতে 'কচুকাটা' জাপানের ব্যাটাররা। সমান ৫টি করে উইকেট ভাগাভাগি করে নিয়েছেন সালমা ও শুকতারা। অবশ্য যোগ্য সহযোগিতা করেছেন ফিল্ডাররাও। পাকিস্তানের বিপক্ষে ফিল্ডিংটা মানসম্মত হয়নি, জীবন পাওয়া ব্যাটাররাই শেষ পর্যন্ত গড়ে দিয়েছিলেন জয়ের ভিত। জাপানের বিপক্ষে বাংলাদেশের ফিল্ডারদের হাত থেকে বল কেন মাছিও বুঝি গলত না! বিশেষ করে ফরোয়ার্ড শর্ট লেগে দাঁড়ানো লতা মন্ডল যেভাবে ঝাঁপিয়ে দুটো ক্যাচ তালুবন্দি করেছেন, তা রীতিমতো চোখধাঁধানো। সালমা নিজেও বোলিংয়ের পাশাপাশি নিয়েছেন দারুণ দুটো ক্যাচ।
শুধু জয় নয়, বাড়িয়ে নিতে হবে রানরেটটাও। তাই উদ্বোধনী জুটিতে আয়েশা আকতারের সঙ্গী শুকতারা। বল হাতে ৫ উইকেট নেওয়ার পর ব্যাট হাতেও তাঁর দারুণ পারফরম্যান্স। ১২ বলে ১৬ রানের ইনিংসে ৩টি বাউন্ডারি, যার শেষটিতে এসেছে জয়। শিজুকা কুবোতার ফুলার লেন্থ বলটাকে এগিয়ে এসে ফুলটস বানিয়ে খেললেন শুকতারা। বোলারের মাথার ওপর দিয়ে কিছুটা উড়ে গিয়ে মাটিতে পড়ে বল চলে গেল সীমানা দড়ির ওপারে, লেখা হয়ে গেল মহিলা বিশ্বকাপের বাছাই পর্বে বাংলাদেশের প্রথম জয়গাথা। এই জয়ই সালমা খাতুনদের স্বপ্ন দেখাচ্ছে ওয়ানডে মর্যাদার।
বাছাই পর্বে অংশ নেওয়া ১০টি দলের ছয়টির আছে ওয়ানডে মর্যাদা। এই ছয়টি দলই যদি বাছাই পর্বের শীর্ষ ছয় দল হয়, তাহলে তারা তাদের ওডিআই মর্যাদা রক্ষা করবে। যদি ওডিআই মর্যাদা না পাওয়া কোনো দল টুর্নামেন্টের শীর্ষ ছয়ে থাকে, তাহলে সেই দলটি পেয়ে যাবে ওডিআই মর্যাদা। এখানটাতেই সুযোগ বাংলাদেশের। গ্রুপ পর্বে অন্তত দুটি ম্যাচ জিততে পারলে 'বি' গ্রুপে তৃতীয় দল হিসেবে আছে পঞ্চম ও ষষ্ঠ অবস্থানের জন্য প্লে অফে খেলার সুযোগ। যেহেতু খেলাটা ক্রিকেট তাই সরল অঙ্কের সমীকরণে পূর্বাভাস দেওয়াটা মুশকিল। তবে পারফরম্যান্স বিবেচনায় ধরে নেওয়া যায়, গ্রুপের শীর্ষ দুই দলের লড়াই হবে মূলত পাকিস্তান এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যে। বাংলাদেশ যদি গ্রুপ পর্বে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে আয়ারল্যান্ডকে হারাতে পারে, সেই সঙ্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে হারলেও ব্যবধানটা বড় না হলে ওয়ানডে মর্যাদা পাওয়ার একটা বড় সুযোগ বাংলাদেশ মহিলা দলের সামনে। এখন মারপ্যাঁচ একটাই, প্রযুক্তিতে বিশ্বসেরা দেশ জাপানের মেয়েরা যদি জাদুকরী কোনো প্রযুক্তিতে বেশ কয়েকটা 'অঘটন' ঘটায়, তাহলে যে পালটে যাবে সব হিসাব!

সংক্ষিপ্ত স্কোর
জাপান : ২৮.৩ ওভারে ৩৮ (ইয়ামামোতো ১২, ইয়াসাকি ৫, কুবোতা ৪); সালমা ৫/৫, শুকতারা ৫/৯
বাংলাদেশ : ৪.৪ ওভারে ৩৫/০ (শুকতারা ১৬, আয়েশা ১৩)
ফল : বাংলাদেশ ১০ উইকেটে জয়ী
ম্যাচসেরা : সালমা খাতুন (বাংলাদেশ)

No comments

Powered by Blogger.