ওয়ানডে স্ট্যাটাসের অপেক্ষায়...

হাঁটা পায়ে দুই ভেন্যুর দূরত্ব মিনিট তিনেকের। বিকেএসপির দুই নম্বর মাঠে খেলা শেষ হয়ে যখন দু'দলের বাস ঢাকার দিকে রওনা দিয়েছে, তখন তিন নম্বর মাঠে আমেরিকান মেয়েদের ওপর রীতিমতো রোলার চালাচ্ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার মেয়েরা। দুই ওপেনারের ২০০ রানের জুটিতে ভর করে দক্ষিণ আফ্রিকা ৩৪৩ রানের বিশাল শৃঙ্গ তৈরি করেছিল সেখানে। ২০ বলের মধ্যে জয় নিশ্চিত করে সালমারা একবার ঢুঁ মেরে এসেছিলেন তিন নম্বর মাঠে। 'দক্ষিণ আফ্রিকা টেস্ট খেলে, ওরা তো পারবেই।


আমরা আগে ওয়ানডে স্ট্যাটাস পেয়ে নেই, তারপর আস্তে আস্তে আমাদের মেয়েরাও তিনশ' রান করতে পারবে।' ভারতীয় হয়েও কোচ হওয়ার সুবাদে এ 'আমরা' বলতে বাংলাদেশকে বুঝিয়েছেন মমতা মাবেন। শুধু কোচ নন, গতকাল জাপানকে ১০ উইকেটে হারিয়ে সালমারাও নাকে 'ওয়ানডে স্ট্যাটাসে'র গন্ধ পাচ্ছেন। 'পাকিস্তানের কাছে ৭৩ রানে হারার পর আমাদের রান রেট কিছুটা পিছিয়ে ছিল। এখন জাপানকে হারিয়ে তা বেড়েছে। এখন শুধু আয়ারল্যান্ড হারাতে পারলেই ওয়ানডে স্ট্যাটাস পেয়ে যাব আমরা।' ম্যাচ শেষে সালমার মুখের এ হাসিই বলে দিচ্ছিল একটা মাইলফলক ছোঁয়ার খুব কাছাকাছি দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের মেয়েরা।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশি ছেলেদের হাতেখড়ি হয়েছিল ১৯৮৪-৮৫ সালে; কিন্তু তার পরও প্রায় একযুগ বাদে ১৯৯৭ সালে আইসিসির কাছ থেকে ওয়ানডে স্ট্যাটাস আদায় করেছিলেন ছেলেরা। সেখানে মেয়েরা চার বছর আগে হাতে ব্যাট ধরেই দারুণ একটি সম্ভাবনার মুখে দাঁড়িয়ে। গতকাল বিকেএসপিতে খেলা দেখতে আসা নির্বাচক আকরাম খানও মহিলা ক্রিকেটে ওয়ানডে স্ট্যাটাস পাওয়ার গন্ধ পেয়েছেন। 'মেয়েরাও পারবে আইসিসির কাছ থেকে ওয়ানডে মযার্দাটা আদায় করে নিতে। তবে এখনও আমাদের দেশে মহিলা ক্রিকেটারের সংখ্যা কম। হাতেগোনা কয়েকজন ক্রিকেটার নিয়েই দল গড়তে হয়। বিশ্বকাপ বাছাইয়ের এ ম্যাচ দেখে অনেক মেয়েই ক্রিকেটে আগ্রহ দেখাতে শুরু করেছে। এভাবেই সব শ্রেণী থেকেই যদি মেয়েরা এগিয়ে আসে তাহলে একদিন আমরাও উপরে উঠতে পারব।' আকরাম খানের মতো এমন সম্ভাবনা দেখছেন বিসিবির মহিলা উইমেন উইংয়ের চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল ফুয়াদ নিজেও। 'পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের মেয়েরা কিন্তু খুব একটা খারাপ করেনি। সেদিন কয়েকটি ক্যাচ মিস হয়েছিল। জাপানের এ ম্যাচে কিন্তু সেটা হয়নি। দেখবেন এ আসরেই আমরা ওয়ানডে স্ট্যাটাস পেয়ে যাব।'
জাপানকে বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে এ মুহূর্তে সালমাদের রান রেট প্লাস ০.৬৩২। আয়ারল্যান্ড এবং জাপানের ওপরে রয়েছে বাংলাদেশ। গ্রুপে পাঁচ দলের মধ্যে সেরা তিনে থাকতে পারলেই ওয়ানডে মযার্দা দিয়ে দেবে আইসিসি। সেটা অনেকটা নিশ্চিত হওয়াতেই এখন টুর্নামেন্টের সেরা চারে যাওয়ার স্বপ্নটা আবারও ভেবে দেখছেন কোচ মমতা মাবেন। 'আসলে ম্যাচ শেষ না হওয়ার পর্যন্ত নিশ্চিত কিছু বলা যায় না। তবে এখন যা পরিস্থিতি তাতে টুর্নামেন্টে সেরা ছয়ে থাকাটা বাস্তবসম্মত আশা। আমরা সেরা ছয়ে থাকা নিশ্চিত করার পরই সেরা চারে যাওয়ার লক্ষ্য ঠিক করব।' ক্রিকেটের প্রাথমিক স্কুলে পড়া জাপানকে হারানোর কারণেই শুধু নয়, কোচ সন্তুষ্ট এদিন মেয়েদের ফিল্ডিং আর বোলিং দেখে। 'জাপান কিন্তু একেবারে দুর্বল দল নয়। আসলে ওরা পেস বলটা খেলতে অভ্যস্ত। এদিন আমাদের স্পিনের কারণেই ওরা ওভাবে ভেঙে পড়েছে। আমাদের দলের মূল শক্তি ফিল্ডিং আর বোলিং। পাকিস্তান ম্যাচেও আমাদের অর্জন ছিল প্রতিপক্ষকে অল আউট করা। সেদিন কিছু ক্যাচ মিস করায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা ভালো হয়নি। আজ জাপানের সঙ্গে আমাদের ফিল্ডিং ভালো হয়েছে।'
পাকিস্তান ম্যাচের পর জাপানকে পেয়ে সালমারা যে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী। সেটা যেমন তাদের মাঠের পারফরম্যান্সে ধরা পড়েছে, তেমনি তাদের কথাতেও উঠে এসেছে। 'শুক্রবার এ মাঠেই আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে খেলা। হারাতে পারলেই ওয়ানডে মযার্দা পেতে পারি আমরা। সেলিব্রেশনটা তখনই করব...।' জাপানকে হারিয়ে গোটা কয়েক গ্রুপ ছবি তুলে ঢাকা রওনা দেওয়ার আগে এভাবেই আসছে সুন্দর একটি শুক্রবারের ইঙ্গিত দিয়ে গেলেন সালমা।

No comments

Powered by Blogger.