ইসলামে বাকস্বাধীনতা by শাহীন হাসনাত

সলামে মানবাধিকার বলতে সেসব অধিকারকে বোঝানো হয়, যেগুলো স্বয়ং আল্লাহতায়ালা তাঁর প্রিয় বান্দাদের প্রদান করেছেন। ইসলামে মানবাধিকারের ধারণা শুধু কোনো ঘোষণার মধ্যে সীমিত নয়, বরং তা প্রত্যেক মুসলমানের বিশ্বাসের অবিচ্ছেদ্য অংশও বটে। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) আরব সমাজের অরাজকতা দেখে বাল্যকাল থেকেই ব্যথিত ছিলেন।


ব্যথিত হৃদয়ে তিনি মক্কার নিঃস্বার্থ, উৎসাহী ও শান্তিপ্রিয় যুবকদের নিয়ে হিলফুল ফুজুল নামে একটি শান্তিসংঘ প্রতিষ্ঠা করেন। বিশ্বের ইতিহাসে এটাই সর্বপ্রথম সন্ত্রাস দমন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার কল্যাণময়ী সেবাসংঘ।
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) মানবজাতির সত্যিকারের মুক্তির লক্ষ্যে সব মানুষকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করতে যেসব মানবাধিকার ও মৌলিক অধিকার প্রদান করেন, এর মধ্যে বিদায় হজের বাণী অন্যতম। বিদায় হজের ভাষণে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ঘোষণা করেন, 'হে লোক সকল! পরস্পরের জান ও সম্পদ, ইজ্জতের ওপর হস্তক্ষেপ তোমাদের জন্য হারাম করা হলো।' এ ছাড়া মানবজীবনের নিরাপত্তা ও মর্যাদা সম্পর্কে কোরআনের সুস্পষ্ট বিধানের পাশাপাশি হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর অসংখ্য হাদিসও রয়েছে। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) মানুষকে হালাল উপায়ে সম্পত্তি অর্জনের নির্দেশ প্রদান করেছেন। অনুরূপ সম্পদের নিরাপত্তাও প্রদান করেন। এ প্রসঙ্গে কোরআনুল কারিমে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, 'তোমরা পরস্পরের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না।' (সূরা বাকারা : ১৮৮)
ইসলাম ধর্ম মানুষের জান-সম্পদের নিরাপত্তার সঙ্গে সঙ্গে মানসম্মান রক্ষারও নির্দেশ দেয়। কোরআনুল কারিমে ইরশাদ হচ্ছে, 'হে ঈমানদারগণ! কোনো পুরুষ যেন অপর কোনো পুরুষকে উপহাস না করে। কেননা যাকে উপহাস করা হয় সে উপহাসকারী থেকে উত্তম হতে পারে এবং কোনো নারী অপর কোনো নারীকেও যেন উপহাস না করে। কেননা যাকে উপহাস করা হয় উপহাসকারিণী অপেক্ষা সে উত্তম হতে পারে। তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ করো না এবং তোমরা একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না।' (সূরা হুজরাত : ১১)
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) প্রত্যেক মানুষকে অন্যায় না করার কথা বলেছেন, পাশাপাশি অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার অধিকার প্রদান করেছেন। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, 'মানুষ যদি অত্যাচারীর জুলুম দেখেও তাকে প্রতিহত না করে তাহলে আল্লাহর ব্যাপক শাস্তি তাদের ওপর নাজিল হবে।' (আবু দাউদ ও তিরমিজি)
ইসলামের নবী হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বিশ্ববাসীকে মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা প্রদান করেন এবং নিজে এর প্রয়োগ করেন। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁর বাস্তব জীবনের সব গুরুত্বপূর্ণ কাজে সাহাবাদের মতামত নিয়েছেন। যে কেউ হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সামনে মতামত প্রদান করতে পারতেন। যুক্তিসঙ্গত ও ন্যায়সঙ্গত হলে তিনি তা গ্রহণ করতেন। অযৌক্তিক বা অন্যায় মতামত হলে তিনি তা উপেক্ষা করতেন। রাগ করতেন না, মতামত প্রকাশের অধিকার থেকে কাউকে বঞ্চিত করতেন না। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) মানুষের বিবেক ও বিশ্বাসের পূর্ণ স্বাধীনতা প্রদান করেন। বর্তমানে পৃথিবীতে মানুষের সমান অধিকারের কথা বলা হলেও পৃথিবীতে এই ধারণাটি সর্বপ্রথম প্রদান করেন হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)। আল্লাহতায়ালা কোরআনে ঘোষণা করেন, 'মুমিনগণ পরস্পর ভাই ভাই, সুতরাং তোমরা ভাইদের মধ্যে শান্তি স্থাপন করো যেন তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হও।'
(সূরা হুজরাত : ১০)
 

No comments

Powered by Blogger.