স্মরণ:এম এ রব বীর-উত্তম : ইতিহাসের উজ্জ্বল অধ্যায়

মুক্তিযুদ্ধকালীন চিফ অব স্টাফ মেজর জেনারেল এম এ রব বীর-উত্তমের ৩৬তম মৃত্যুবার্ষিকী ছিল ১৪ নভেম্বর। তিনি আজ আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু রয়ে গেছে তাঁর অসাধারণ কর্মকাণ্ডের গৌরবোজ্জ্বল কৃতিত্ব। ক্ষণজন্মা এই মানুষটি রয়েছেন ইতিহাসের পাতায়, জাতীয় বীর হিসেবে। ১৯১৯ সালের ১ জানুয়ারি এম এ রব জন্মগ্রহণ করেন হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলার খাগাউড়া গ্রামে।


হাজি মোহাম্মদ মনর ও রাশিদা খাতুনের ছেলে এম এ রব ছোটবেলা থেকেই ছিলেন অত্যন্ত বিনয়ী ও মেধাবী ছাত্র। শিক্ষাগত জীবনে ভালো ফলের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, সিলেটের এমসি কলেজসহ আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ ধাপ পর্যন্ত। লেখাপড়া শেষ করে ১৯৪৩ সালে তিনি যোগ দেন ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে। প্রশিক্ষণ, নিষ্ঠা ও দক্ষতার মধ্যে জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যান সামনের দিকে অর্থাৎ ১৯৪৪ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণ। পরে দেশবিভাগের মধ্য দিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে। ১৯৬৯ সালে চাকরি থেকে অবসরে গেলে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে হবিগঞ্জের বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জ আসন থেকে নির্বাচন করেন ও বিপুল ভোটে জয়ী হন। ১৯৭১ সালের এপ্রিলে মুক্তিবাহিনীর চিফ অব স্টাফ পদে নিযুক্ত হন। তখন তিনি আগরতলায় সদর দপ্তর স্থাপন করেন। সেখান থেকে তিনি ১, ২, ৩, ৪ ও ৫ নম্বর সেক্টরকে সার্বিক সহযোগিতা করেন। বিশেষ করে রণক্ষেত্রের মুক্তিকামী মানুষ স্বাধীনতা অর্জনের প্রয়াসে যে সাহসিক পদক্ষেপ নিয়েছিল, তা বিশ্বের দরবারে তুলে ধরার জন্য বহির্বিশ্বের সংবাদকর্মীদের তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন কর্নেল (অব.) এম এ রব। মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য কৃতিত্বের জন্য স্বাধীনতার পর তাঁকে বীর-উত্তম উপাধিতে ভূষিত করা হয়। ব্যক্তিগত জীবনে এম এ রব অত্যন্ত বিনয়ী ও সাদাসিধা মানুষ ছিলেন। উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও তাঁর কাছে সাধারণ মানুষের অবাধ যাতায়াত ছিল। এই জনপ্রিয়তার কারণেই ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে তিনি জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হন। তিনি মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে আত্মনিয়োগ করেছিলেন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্বাসনের জন্য মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠায়। এম এ রব বঙ্গবন্ধুর একজন আদর্শের সৈনিক ছিলেন। তাই ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর প্রাণনাশের পর এম এ রব তাঁর মনোবল হারিয়ে ফেলেন। এর পর থেকেই তাঁর শারীরিক অসুস্থতা বাড়তে থাকে। অবশেষে ১৯৭৫ সালের ১৪ নভেম্বর বলতে গেলে বিনা চিকিৎসায় তিনি মারা যান। মুক্তিযুদ্ধের এত বছর পার হয়ে গেলেও এম এ রবকে তাঁর বীরত্বের মূল্যায়নে পরিচিত করা হয়নি নতুন প্রজন্মকে। তেমন আলোচনা হয়নি তাঁকে নিয়ে। এমনকি বাংলাদেশ সামরিক জাদুঘরে স্থান পায়নি তাঁর জীবনীসংবলিত ছবি। 'এম এ রব চত্বর' নামে হবিগঞ্জ-শায়েস্তাগঞ্জ গোলচত্বরটি গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে প্রকাশের পরও বেআইনি বিভিন্ন সংগঠন নিজেদের সাইনবোর্ডে আড়াল করে রেখেছে। আমরা আশা করব, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেষ্ট হবে। গভীর শ্রদ্ধায় তাঁকে স্মরণ করি।
কেয়া চৌধুরী

No comments

Powered by Blogger.