মিয়ানমারে আবারও রাজবন্দীদের মুক্তি দেওয়া হবে

মিয়ানমার সরকার শিগগিরই আরও বেশ কয়েকজন বন্দীকে সাধারণ ক্ষমার আওতায় মুক্তি দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। সরকারের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা গতকাল রোববার বলেন, সম্ভাব্য মুক্তিলাভকারীদের তালিকায় রাজবন্দীরাও রয়েছেন। দেশটিতে গত দুই মাসের মধ্যে এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো রাজবন্দীদের মুক্তি দেওয়া হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কর্মকর্তা বলেন, সাধারণ ক্ষমার বিষয়টি দুই দিনের মধ্যেই চূড়ান্ত হবে। ‘বিবেকের বন্দী’ নামে পরিচিত রাজবন্দীরা মুক্তিলাভকারীদের তালিকায় অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত হবেন। খুব দ্রুত এ প্রক্রিয়া শুরু হবে। তবে বিশিষ্ট রাজনৈতিক কর্মীদের মুক্তি দেওয়া হবে কি না, জানতে চাইলে জবাব দিতে অস্বীকৃতি জানান ওই কর্মকর্তা।
মিয়ানমারের নতুন বেসামরিক সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর গত ১২ অক্টোবর দেশটিতে অন্তত ২৩০ জন রাজবন্দীকে সাধারণ ক্ষমার আওতায় মুক্তি দেওয়া হয়। পশ্চিমা দেশগুলো নতুন সরকারের এ পদক্ষেপকে স্বাগত জানায়। এই উদ্যোগের ফলে দেশটিতে গত পাঁচ দশক ধরে চলা সামরিক শাসনের কঠোর নিয়ন্ত্রণ কিছুটা শিথিল হতে চলেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন গত শুক্রবার বলেন, মিয়ানমারে ‘বাস্তব পরিবর্তনের’ লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। দেশটিতে সব রাজবন্দীর মুক্তি ও সংস্কার-প্রক্রিয়া নিশ্চিত হলে যুক্তরাষ্ট্র এর অংশীদার হতে আগ্রহী হবে।
এদিকে ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর আঞ্চলিক সংস্থার (আসিয়ান) সম্মেলনের ঠিক আগে মিয়ানমারে সাধারণ ক্ষমার আওতায় রাজবন্দীদের মুক্তির বিষয়টি ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এতে নির্ধারিত সময়ের (২০১৪ সাল) দুই বছর আগেই আসিয়ানের সভাপতির পদ লাভের জন্য মিয়ানমারের দাবি জোরদার হবে।
বিশ্লেষকেরা মনে করেন, আসিয়ানের সম্মেলন আয়োজনের মাধ্যমে বহির্বিশ্বে মিয়ানমারের নতুন সরকার বৈধতা অর্জনের জন্য ব্যাকুল। আন্তর্জাতিক দাতাগোষ্ঠীর কাছ থেকে অর্থনৈতিক সহায়তা লাভের মাধ্যমে প্রাকৃতিক সম্পদে পরিপূর্ণ দেশটিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সরকারের এটি একটি চেষ্টা।
এদিকে রাজবন্দীদের মুক্তির দাবি জানিয়ে প্রেসিডেন্ট থেইন সেইনের উদ্দেশে একটি খোলা চিঠি গতকাল রোববার মিয়ানমারের সরকার-নিয়ন্ত্রিত একটি সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে। এসব সংবাদপত্র গত কয়েক দশকব্যাপী কঠোর নিয়ন্ত্রণাধীন ছিল এবং সামরিক জান্তার মুখপাত্র হিসেবে কাজ করেছে।
মিয়ানমারের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান উইন মিরা ওই চিঠিতে লিখেন, দেশটিতে প্রায় ৫০০ জন রাজবন্দীকে মুক্তি দেওয়া উচিত। কাউকে মুক্তি দেওয়া সম্ভব না হলে পরিবারের লোকজন বসবাস করে, এমন এলাকার কাছে তাঁকে আটককেন্দ্রে স্থানান্তর করা উচিত।

No comments

Powered by Blogger.