চামড়া ক্রয়ে বিশৃঙ্খলা-সরকারের অধিক সংশ্লিষ্টতা প্রয়োজন

ত এক বছরে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি আয় ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর হিসাব। নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের চামড়া শিল্পের জন্য এটি একটি উল্লেখযোগ্য অর্জন। দেশের এই বাণিজ্যের কাঁচামাল, অর্থাৎ চামড়ার বেশির ভাগ সংগ্রহ হয়ে থাকে প্রধান দুটি ধর্মীয় উৎসবের সময়। এর মধ্যে ঈদুল আজহার সময়টাতেই অধিক পরিমাণ কোরবানির চামড়া সংগ্রহ হয়ে থাকে।


বছরের এ সময়ে ট্যানারি প্রক্রিয়াজাতকারীদের সঙ্গে দেশের প্রান্তিক ও মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ীদের বাণিজ্য নিবিড়তর হয়ে ওঠে। কিন্তু এ বছর চামড়া ব্যবসায় মিল মালিক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের মধ্যে যে টানাপড়েন শুরু হয়েছে, তা দেশের এই সম্ভাবনাময় রপ্তানি শিল্পকে মন্থর করে দিতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট অনেক ব্যবসায়ী আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। প্রায় এক কোটি পশুর চামড়ার এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা এখন তাকিয়ে আছেন মালিকরা কী দামে তাঁদের কাছ থেকে চামড়া ক্রয় করবেন সেদিকে। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে মন্দার অজুহাতে ট্যানারি মালিকরা কমমূল্যে চামড়া ক্রয়ের ইঙ্গিত দিয়েছেন। উল্লেখ্য, গত বছর গরুর চামড়ার প্রতি বর্গফুট ৫৫ থেকে ৬০ টাকা ক্রয়মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। এবার চামড়া শিল্পের তিনটি সংগঠন মূল্য নির্ধারণ-বৈঠকে কোনো সুনির্দিষ্ট মূল্য বেঁধে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ফলে কিছুটা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে চামড়া বেচাকেনায়।
চামড়া শিল্পের উন্নয়নে সরকারের নজরদারি থাকা বাঞ্ছনীয়। এ শিল্পের বিকাশে সব ধরনের নজরদারি, নিয়ন্ত্রণ ও তদারকির একটি সুষ্ঠু উদ্যোগ সরকারের অবিলম্বে নেওয়া উচিত বলে আমরা মনে করি। যেমন মূল্য নির্ধারণ-বৈঠকে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উপস্থিত থাকা এবং মূল্য নির্ধারণের একটি নীতিমালা বাধ্যতামুলক করা উচিত ছিল। এটি ব্যবসায়ীদের ওপর চাপ প্রয়োগের জন্য নয়, বরং চামড়া বেচাকেনায় শৃঙ্খলা আনার জন্য। বেশ কিছুকাল ধরেই এ শিল্পে অস্থিরতা বিরাজ করছে হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি শিল্প সরিয়ে নেওয়ার প্রশ্নে। বিষয়টি ঝুলিয়ে না রেখে এ ব্যাপারে সরকারের সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে আমরা মনে করি। কারণ ট্যানারি সরিয়ে নেওয়া হবে বা হতে পারে, এমন চিন্তায় ব্যবসায়ীরা স্বস্তিতে তাঁদের কর্মকাণ্ড চালাতে পারছেন না। অবশ্য এ ব্যাপারে আদালতের কিছু নির্দেশনা রয়েছে।
এখনো পুরোদস্তুর চামড়া বেচাকেনা শুরু হয়নি কারখানাগুলোতে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা প্রতিযোগিতা করে চামড়া কিনতে গিয়ে অধিক মূল্যে খুচরা চামড়া ক্রয় করেছেন বলে অনেকে ধারণা করছেন। এ কারণে বড় ব্যবসায়ীরা হাতের মুঠো খুলতে চাইছেন না। কিন্তু চামড়া ব্যবসায়ী তথা কারখানা মালিক ও ট্যানারি এসোসিয়েশনকে মনে রাখতে হবে, চামড়া ক্রয়ে অধিক মুনাফার আশা করলে এসব চামড়া পাচার হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কাছে সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা নেই। অন্যদিকে লবণের দামও বাড়তি। সুতরাং চামড়া হাতছাড়া হয়ে গেলে প্রকারান্তরে দেশের চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের সঙ্গে জড়িত মিল মালিকরা এবং চামড়াজাত পণ্য ব্যবসায়ীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। মিল মালিকরা এবার ঈদের আগে প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা ঋণ গ্রহণ করেছেন বলে জানা গেছে। এটাও পরিষ্কার যে তাঁদের অন্তত আর্থিক সংকট এ মুহূর্তে নেই। সুতরাং চামড়া ক্রয়ের ক্ষেত্রে তাঁরা প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের প্রতি কিছুটা হলেও উদারতা দেখাবেন বলে আমরা আশা করি। মোদ্দা কথা, চামড়া শিল্পের রপ্তানি-প্রক্রিয়া যেন ব্যাহত না হয়, সেদিকে সরকার ও বড় ব্যবসায়ীরা বিশেষ দৃষ্টি রাখবেন বলে আমরা মনে করি।

No comments

Powered by Blogger.